শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিভাবকদের যা খেয়াল রাখা জরুরি
বর্তমানে পুরো বিশ্বের উদ্বিগ্নতার বিষয় করোনা মহামারি। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। তাই প্রতিটি দেশ করোনার নিষ্ঠুরতার ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর থেকে উত্তরণের সুরাহার পথ হয়নি অর্থাৎ করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও চূড়ান্তভাবে হিউম্যান ট্রায়ালে যে সঠিকভাবে কার্যকর তা কোনো দেশ নিশ্চিত করেনি। তবে আশার রাখতে পারি খুব শীগ্রই তা আলোর পথ দেখাবে।
করোনা মহামারীর ব্যাপকতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশও আজ অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত যার ভুক্তভোগী এ দেশের প্রতিটি মানুষ।তবে করোনাকালীন আমাদের দেশের সরকার, হিতৈষী সংগঠন ও ব্যাক্তি উদ্যোগে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তা প্রশংসনীয় যা কিছুটা হলেও দেশের সুবিধাবঞ্চিত বিশেষ করে নিম্নশ্রেণীর মানুষের কষ্ট লাঘব হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সবকিছু সচল হলেও একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনের কথা ভেবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখ বা না রাখার ব্যাপারে অভিভাবকদের দ্বিমত থাকলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থকাই নিরাপদ। শিক্ষার্থীরা সবসময় সেনসেটিভ বিষয় তাই বন্ধ রাখাই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
আমরা জানি করোনার প্রভাবে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৭ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আজ অবধি প্রায় সাত মাস চলছে এই সময়টাতে অনেকেই তাদের সন্তানদের পড়াশুনা নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন আবার অনেকেই তাদের সন্তানদের ব্যাপারে সঠিক খোঁজ খবর রাখছেন না যেমন: তারা কি করে, কোথয় যায়, কাদের সাথে মিশে, কিভাবে সময় কাঁটায় বা একাকীত্বে তারা একঘেয়েমি হচ্ছে কিনা ইত্যাদি।
সকল অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন যে বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে এবং তা মেনে চলাটা আবশ্যক মনে করছি। নিচে কিছু কার্যকরী পরামর্শ তুলে ধরা হলো-
১. পিএসসি, জেএসসি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় যেসব অভিভাবকেরা ভাবছেন আপনার সন্তান চাপমুক্ত হয়েছে তাহলে ভুল ধারণা আর শিক্ষার্থীরাও অনেকটা গা-ছাড়া দিয়ে অর্থাৎ পড়াশোনা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে তাদের উদ্দেশ্য বলব এসব শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে বিশেষ যত্নশীল হোন।
২. যারা এসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাদের উদ্দেশ্য বলব এদের যেহেতু পরীক্ষাটা হচ্ছে তাহলে হতাশ না হয়ে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার জন্য এদেরকে উপযুক্ত করুন যাতে সর্বোচ্চ ফলাফল টা বয়ে আনতে পারে।
৩. আপনার সন্তানের মনোযোগ ও পড়াশোনার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য অন্তত কিছু সময় দৈনিক রুটিন করে ক্লাসের বইগুলো পড়তে বলেন। বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজি, অংক ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলো।
৪. ক্লাসের বই পড়তে না চাইলে পত্রিকা, গল্প, উপন্যাস, ধর্মীয় বইসমূহ যার যেটা পড়তে ইচ্ছে করে সেটা দিয়ে হলেও সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে তা না হলে এর ফলাফলে সাধ্যাতীত হয়ে যাবে।
৫. যাদের গৃহশিক্ষক রয়েছে তাদের মাধ্যমে সিলেবাস ভিত্তিক পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে।
৬. একাডেমিক শিক্ষার জন্য আমরা অনেকেই ধর্মীয় বিষয়গুলো ভলোভাবে শিখতে পারিনা বিশেষ করে যারা কোরআন পড়তে পারেন না তাদের জন্য কোরআন শিক্ষার একজন শিক্ষক রেখে দেন যেহেতু আপনার সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই সময় সে পাচ্ছে এই সময়টাকে কাজে লাগানোর জন্য এটাই উপযুক্ত সময় যা আজীবন কাজে লাগবে।
৭. সাথে সাথে ধর্মকর্ম করার ব্যাপারে উৎসাহিত করুন, বুঝান আপনার সন্তানকে বিশেষ করে মুসলিম অভিভাবকগণ অবশ্যই তাদের সন্তানদের নামাজের নিয়ম কানুন ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার ব্যাপারে কঠোর তাগিদ দেন।
৮. আপনার সন্তানের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড মূল্যায়ণ করুন ভালো কর্মের জন্য বাহবা দিন আর খারাপ হলে বুঝান, সাহস দিন পরবর্তীতে ভালো করবে বলে আশা জাগান এবং পাশে থাকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেন।
৯. এই সময়টাতে যেহেতু পর্যাপ্ত সময় রয়েছে তাদের বাহিরে যাওয়ার প্রবণতা থাকবে তাই বাহিরে গেলে কাদের সাথে মিশে, কারা তার সঙ্গী হয় সেটা খেয়াল রাখা খুবই জরুরি কারণ তা না হলে আপনার সন্তান হয়ে যেতে পারে মাদকাসক্ত বা ভবঘুরে। মনে রাখতে হবে সঙ্গদোষে লোহাও ভাসে।
১০. বিনোদনের জন্য সন্তানদেরকে খেলাধুলা করার সুযোগ দেন এতে করে তার একঘেয়েমিতা তৈরি হবেনা তাতে দেহ ও মন দুটাই সুস্থ থাকবে।
১১. সুযোগ পেলে সন্তানদেরকে নিয়ে অনুকূল পরিবেশে ঘুরতে যান তাতে দীর্ঘ সময়টাতে বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
১২. যেসব অভিভবক চাকুরী করেন সন্তানদের বাসায় রেখে তাদের সঙ্গ দেয়ার উপযুক্ত লোক রাখেন সন্তানকে একা রাখা যাবেনা তাদের সঙ্গ দিতে হবে। তাদের রুটিন মাফিক চলার তাগিদ দিতে হবে অবসর সময়ে টেলিভিশন দেখতে পারে একাকিত্বের ভয়াবহতা ঠেলে দেয়া যাবেনা।
পরিশেষে বলব আপনার সন্তান আগামীর ভবিষ্যৎ তাই তাদেরকে সঠিক গাইডলাইনের মাধ্যমে সঠিকভাবে পরিচালনা করা আপনারই দায়িত্ব। আপনার উদাসীনতার কারণ হতে পারে আপনার সন্তানের বিভীষিকাময় ভবিষ্যৎ। অনিশ্চয়তার মধ্যে সুস্থ শিক্ষাঙ্গন ফিরে পাওয়ার আশার প্রদীপ নিয়ে বসে থাকা সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি শুভ কামনা রইল।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।