দেশের প্রতিটি নাগরিক হোক সাক্ষরতা সম্পন্ন
আজ বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস। ১৯৬৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। সাক্ষরতা মানবীয় অধিকার এবং সর্বত্র শিক্ষা বিস্তারের ভিত্তি হিসেবে প্রতি বছর এই দিনটি বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন আয়োজন ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটিকে উদযাপন করা হয়।
ইউনেস্কো প্রতি বছর এ দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে বিশ্বকে বার্তা দেয় যে, সাক্ষরতা একটি মানবীয় অধিকার এবং সর্বস্তরের শিক্ষার ভিত্তি। সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতি ও মানসিক মুক্তি, বিশ্ব সম্পর্কে জানা, পারস্পরিক দ্বন্দ ও সংঘাত নিরসন এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা অর্জনও সাক্ষরতার অন্যতম উদ্দেশ্য।
একসময় শুধুমাত্র নাম দস্তখত করতে পারলেই সাক্ষর হিসেবে গণ্য করা হলেও ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো সাক্ষরতার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। যেখানে একজন মানুষকে সাক্ষরতা সম্পন্ন হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য তিনটি শর্ত মানতে হয়। ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব নিকাশ করতে পারবে। এই প্রত্যেকটি কাজই হবে ব্যক্তির প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত।
সারা বিশ্বে বর্তমানে এই সংজ্ঞাকে ভিত্তি করে সাক্ষরতার হিসাব নিকাশ করা হয়। বর্তমান সময়ে ইউনেস্কোর সর্বশেষ সংজ্ঞাও চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছে। বহু আন্তর্জাতিক ফোরাম সাক্ষরতার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারনের কথা বলছে, যেখানে সাক্ষরতা সরাসরি ব্যক্তির জীবনযাত্রা পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত হবে।
সাক্ষরতা মানবীয় অধিকার হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। শিক্ষার সুযোগের বিষয়টিও সাক্ষরতার উপর নির্ভর করে। দারিদ্র হ্রাস, শিশু মৃত্যু রোধ, সুষম উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং সর্বোপরি স্বনির্ভর হওয়ার অন্যতম ভিত্তি সাক্ষরতা। সাক্ষরজ্ঞানহীন ব্যক্তি নিজের ভালো-মন্দ সব সিদ্ধান্ত নিজ থেকে গ্রহণ করতে পারে না, সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়েও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
অপরদিকে সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি সন্তানদের লেখাপড়া করানোর গুরুত্ব, নিজেকে চেনা-জানা এবং নিজের ভালো-মন্দ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী হন। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বুঝদার হন। সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষকে অপরকোন মানুষ ঠকাতে পারে না, বঞ্চিত হতে পারে না, ভুলভাল হিসাব বুঝিয়ে দিতে পারে না।
বাংলাদেশে এক সময় সাক্ষরতার হার খুবই কম ছিল। তবে বর্তমানে সাক্ষরতার হাত বাড়ছে। উইকিপিডিয়া ও ইউনেস্কোর তথ্য মতে, বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ৭৩.৯%। বিশ্ব র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৪তম। শতভাগ সাক্ষরতা নিয়ে প্রথম স্থানে আছে জর্জিয়া। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যৌথভাবে কিউবা, ইস্টোনিয়া এবং পোল্যান্ড। এদের সাক্ষরতার হার ৯৯.৮০ ভাগ। ৯৯.৭০ ভাগ সাক্ষরতা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বার্বাডোস। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের অবস্থান ১৮-তে, তাদের সাক্ষরতার হার ৯৯ ভাগ। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ১৪৭ ও পাকিস্তানের অবস্থান ১৬০-এ। প্রতিবেশী দুই রাস্ট্রের চেয়েও বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার অনেক ভালো।
সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে বাড়ছে সাক্ষরতার হার। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুচ্ছে এখন শিশুরা। এক সময় যা খুবই নগণ্য ছিলো। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে নিরক্ষরতা দূর হচ্ছে আশানুরূপভাবে। প্রত্যাশা থাকবে বাংলাদেশকে শতভাগ সাক্ষরতা সম্পন্ন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বাংলাদেশ সরকার সহ শিক্ষানুরাগী সকল সংস্থা ও সচেতন নাগরিকরা ভূমিকা রাখবে। নিরক্ষরমুক্ত, মানবিক এবং বিশ্বের বুকে শিক্ষা অর্জনে অনুকরণীয় হবে প্রিয় স্বদেশ।
লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)