০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:০১

মানসিক অবসাদ মুক্ত থাকার সেরা ৭ উপায়

  © প্রতীকী ছবি

যৌবনকাল নাকি জীবনের শস্যক্ষেত্র, ভবিষ্যৎ জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করার সময়। এই সময়ে করা কাজ, পড়াশুনার বিষয়ই ভবিষ্যৎ জীবনের কর্মপন্থা ও পেশা ঠিক করে দেয়। এতকিছুর পরেও জীবনের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এই সময়ে কোনো মানুষের পদস্খলন ঘটার সম্ভবনা তুলনামূলক একটু বেশিই বলা চলে। জীবনে চলার রাস্তাগুলো যে খুব মসৃণ নয়, একজন মানুষ তা বুঝতে পারে এই সময় থেকেই। পারিপার্শ্বিক সকল কিছুর কথা মাথায় রেখে পা ফেলতে হয় এই সময়।

বাংলাদেশের উপর করা সমীক্ষাগুলোতে লক্ষ্য করলে প্রায়শই খেয়াল করা যায় এই বয়সে তরুণ-তরুণীদের ঝরে পরার হার জীবনের অন্য ধাপগুলোর তুলনায় বেশি। অন্যান্য দেশে যখন এই সময়ে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে পড়াশুনায় সময় ব্যয় করে, তখন আমাদের দেশে এই সময়ে ছেলেদের বিভিন্ন পেশার দিকে ঝুঁকতে ও মেয়েদের বিয়ে হতে দেখলেও খুব বেশি অবাক হবার কিছুই নেই।

আবার, এই সময়েই জীবনের অন্যতম বড় অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখা দেয় 'ভর্তি পরীক্ষা'। উচ্চশিক্ষার প্রাথমিক স্তরে প্রবেশ করতেই ঝরে পরে সর্বাধিক। আর যারা এ অগ্নিপরীক্ষা পাশ করে যায়, তারা সাময়িক খুশি হয় ঠিকই কিন্তু পরে তাদেরকেও পেয়ে বসে মানসিক অবসাদে।

মানসিক অবসাদের সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত, একে আমরা 'ডিপ্রেশন' বলতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ব্যক্তিভেদে আমাদের অবসাদের কারণও ভিন্ন, তবে সবার মধ্যে অন্যতম সাধারণ যে কারণটি থাকে তা হলো 'উচ্চাকাঙ্ক্ষা'। আজ আপনাদের কিছু টিপস সম্পর্কে জানাবো যা এই অবসাদগ্রস্ততা কাটাতে অনেকটাই সহায়ক হবে:-

১.প্রথমত আপনাকে মানতে হবে মানসিক অবসাদ মানব জীবনেরই অংশ, যদি তা না হতো তবে এর নামকরণে 'মানস' শব্দটির পরিবর্তে হয়তোবা অন্যকিছুর ব্যবহার করা হতো। অবসাদগ্রস্ততাকে ঠেকানোর সাধ্যি যেহেতু আমাদের নেই। তাই তাকে আসতে দিন, হোক সেটা অনধিকার প্রবেশ।

২. 'কিছুই হয়নি', নিজের কাছে নিজে এমন একটা ভাব ধরে থাকুন। মনে রাখবেন, কোনোকিছুতে জেতার আশা কিংবা কোনোকিছু পাওয়ার আশা মানুষ তখনই ছেড়ে দেয়, যখন নিজেই নিজের মনের কাছে হেরে যায়। সুতরাং, এমন 'ডোন্ট কেয়ার' ভাব নেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের মনের কাছে অপরাজেয় থাকা।

৩.এটার ভিতর দিয়ে যেতে যতো সময়ই লাগুক, নিজেকে দিন। যেহেতু অবসাদ ধীরে ধীরে আপনার মনে জমেছে, সুতরাং এটাও নিশ্চিত যে তা সময় নিয়ে ধীরে ধীরেই মন থেকে চলে যাবে।

৪. জীবনের আগের অর্জনগুলোর স্মৃতিচারণ করুন। এতে মনে আশার আলো দেখতে পাবেন, আপনার হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে এবং চিন্তাগুলো পজিটিভ থাকবে। পজিটিভ চিন্তা আপনার সামনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে বেশি সহায়ক।

৫.আপনার চিন্তাগুলো বুঝবে এমন কাউকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, তাকে সব খুলে বলুন। বিশ্বাস রাখুন, তিনি আপনাকে সম্ভাবনার পথ বাৎলে দিতে পারবেন।

৬.কিছুদিন নিজের পছন্দনীয় কাজগুলো করুন, যেসব কাজ করলে আপনি মানসিক শান্তি পাবেন। ভুলে যাবেন না, মানসিক অবসাদ ও মানসিক শান্তি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একটির অনুপস্থিতিই অন্যটির উৎপত্তি ঘটায়। এতে একই সাথে আপনার অন্য আরো একটি উপকার হবে- নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারবেন, যা অবসাদগ্রস্ততা কাটাতে খুবই কার্যকরী।

৭.শেষের এই পয়েন্টটি সবথেকে কার্যকরী এবং সবার জন্যই প্রযোজ্য। আমরা ছোটবেলায় মোটামুটি সবাই একটি পড়ার সাথে পরিচিত ছিলাম যার সারমর্ম হলো- একব্যক্তি জুতা না থাকার দরুণ ক্রদণরত অবস্থায় অন্য আরেকজনের পা নেই দেখে নিজের জুতা কেনার শোক ভুলে যায়। সুতরাং, আপনারও কাজ হবে নিজের দৃষ্টিকে একটু অবনমিত করা। নিচে তাকালেই দেখবেন, আপনার যা আছে অন্যদের সেটাও নেই। তাই সন্তুষ্ট থাকুন এবং অন্য অত্যাবশ্যক যে কাজটি করতে কখনোই ভুলবেন না, তা হলো- আপনাকে অন্য অনেকের থেকে ভালো রাখার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রার্থ্যনা।


লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।