২৮ আগস্ট ২০২০, ১৮:১৬

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক অন্যরকম স্কুল— সাইন্স বী

  © প্রতীকী ছবি

বিজ্ঞানের প্রথম পাঠ বিদ্যালয় ও পাঠ্যবই থেকে হলেও গৎবাঁধা  সিলেবাস, প্র্যাক্টিক্যাল জ্ঞান এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার দরুন শিক্ষার্থীদের প্রকৃত বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন ইন্টারনেট ও অন্যান্য উৎস থেকে নিজে শেখা। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে বিজ্ঞান এখনও একটি ভীতির বিষয়। 

প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে কৃতকার্যই হতে পারে না যেখানে বর্তমান বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে তাল মেলানোর। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও সাজানো গুছানো প্ল্যাটফর্মের অভাবে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও তার জানার ইচ্ছা পূরণ করতে পারেনা। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সমাজের প্রতিটি স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটানো ও তাদেরকে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষভাবে প্রস্তুত করে তোলার লক্ষ্যেই শুরু হয় ‘সায়েন্স বী’ এর পথচলা। 

২০১৮ সালের ৩১ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মবিন সিকদারের উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে সায়েন্স বী। শুরুটা ছিলো একটি মাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে। এরপর ধীরে ধীরে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন সায়েন্স বী এগিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব গতিতে। বর্তমানের সাইন্স বী তে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আছে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ঝাঁক স্বপ্নবাজ ছাত্রছাত্রী, যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বিজ্ঞানকে সকলের কাছে আরও সাবলীল ও সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য।

দুই বছরের এই যাত্রায় সায়েন্স বী-এর ফেসবুক গ্রুপ “সায়েন্স বী ফ্যামিলি” এখন এক লাখ ৮০ হাজারের বেশি বিজ্ঞান অনুরাগীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত তারা নতুন কিছু শিখছে, নিজে জানছে ও অন্যকে জানাচ্ছে। সায়েন্স বী পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে নানান কৌতুহলী, রহস্যময় এবং জটিল সব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্বলিত ইউনিক কন্টেন্ট। 

সায়েন্স বী এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো সায়েন্স বী ওয়েবসাইট। বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম “ডেইলি সায়েন্স” সায়েন্স বী এর উদ্যোগে গড়ে তোলা একটি প্রোগ্রাম, যেখানে প্রতিদিনই থাকছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জগতের সর্বশেষ খবরাখবর সহ স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, টেকনোলজি ও সচেতনতামূলক নানা ধরনের আপডেট। ইতোমধ্যে ৩০০ এর বেশি নিউজ প্রকাশিত হয়েছে এখানে, যার সবগুলোই লিখেছে সায়েন্স বী নিউজ টিমের সদস্যরা। এছাড়াও আছে “বী ব্লগ”, যেখানে অনেক অভিজ্ঞ ও নতুন লেখক সকলেই নিজের অথ্যবহুল লেখা প্রকাশের মাধ্যমে নিজের লেখনীশক্তি ঝালাই করতে পারছে। বর্তমানে ব্লগে ২০ জন লেখক নিয়মিত লিখছেন ও ২০০টিরও বেশি ব্লগ প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়াও ওয়েবসাইটের অনন্য আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো প্রশ্নোত্তর বিভাগ বা Bee QnA সেকশন। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশ্নোত্তর আর্কাইভ, যেখানে আছে ৮০০ এর বেশি বিজ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তরের চমৎকার সংগ্রহ। এছাড়াও আছে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, নতুন প্রশ্ন যুক্ত করে পয়েন্ট অর্জন ও পুরস্কার জিতে নেবার সুযোগ। বর্তমানে ওয়েবসাইটের রেজিস্টার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৬ হাজার যা প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৫ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপডেটেড রাখছে নিজেদের।

এর পাশাপাশি সায়েন্স বী ২০১৯ সালের ডিসেম্বর ২৭-২৮ তারিখে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার আয়োজিত ইয়ুথ কার্নিভালে অংশ নিয়েছে, যেখানে আমাদের স্টলে দুইদিনব্যাপী ২০০০ এর বেশি মানুষ বিজ্ঞান ও ভবিষ্যৎ উচ্চশিক্ষার নানা বিষয়ে জানতে পেরেছেন। আমরা তাদের কাছে বিজ্ঞানকে মজাদার বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে সেখানে বিভিন্ন ইন্টারেক্টিভ গেমসের আয়োজন করেছিলাম যার মাধ্যমে তারা আনন্দের সাথেই আমাদের ও বিজ্ঞানের বিষয়ে জেনেছেন।

বর্তমানে সায়েন্স বীতে ৪টি টিমে ভাগ হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৩৫ জনের বেশি সদস্য কাজ করছে। টিমগুলো হলো ডিজাইন টিম, ভিডিও কন্টেন্ট টিম, নিউজ রাইটিং টিম ও ম্যানেজমেন্ট টিম। ডিজাইন টিমের সদস্যরা প্রতিদিন বিজ্ঞানসম্পর্কিত গবেষণাভিত্তিক নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে ফ্যাক্ট ডিজাইন করেন, যা প্রকাশিত হয় সায়েন্স বী এর অফিশিয়াল পেইজ ও গ্রুপে। 

বর্তমানে ভিজুয়াল কন্টেন্ট নতুন কিছু শেখার জন্য খুবই জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সে লক্ষ্যেই ভিডিও টিম নিয়মিত বিভিন্ন রকম মজাদার ও চমকপ্রদ বিষয়ের উপরে ভিডিও তৈরি করে, যা চমৎকার উপস্থাপনার মাধ্যমে শেখাকে আরো আনন্দঘন করে তোলে। শিক্ষার্থীদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জগতে আপডেটেড রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে এক ঝাঁক উদ্যমী তরুণ-তরুণীদের নিয়ে গঠিত নিউজ টিম। তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র, রিসার্চ পেপার থেকে মূল আবিষ্কারকে সাবলীল মার্তৃভাষায় তুলে ধরছে সবার সামনে। 

সায়েন্স বী এর ফেসবুক কমিউনিটিতে যুক্ত দেড় লক্ষ কৌতূহলী শিক্ষার্থীর নানাবিধ প্রশ্ন, নতুন তথ্য জানানো ও নির্ভরযোগ্য তথ্য চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট টিম। প্রতিদিন গ্রুপে প্রায় ৬০০ এর বেশি তথ্যমূলক পোস্ট, আর্টিকেল, ফ্যাক্টস, ব্লগ, প্রশ্ন প্রকাশিত হয়, যার নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করে সর্বোচ্চ যৌক্তিক উত্তর দিতে বদ্ধপরিকর ম্যানেজমেন্ট টিমের সদস্যরা। 

শিক্ষার্থীদেরকে শুধু জানানোই নয়, তারা যেন তা মনে রাখে এবং নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সে জ্ঞান কাজে লাগাতে পারে, সে জন্য সায়েন্স বী ইতোমধ্যে ৪০টির বেশি কন্টেস্টের আয়োজন করেছে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসাহ ও আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজয়ীদেরকে পুরস্কৃত করেছে। এছাড়াও, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দক্ষতা ঝালাই করতে সাইন্স বী একমাসব্যাপী প্রস্তুতিমূলক অনলাইন মডেল টেস্ট এর আয়োজন করে, যেখানে প্রতিটি পরীক্ষাতেই সর্বোচ্চ ৩ স্কোরারের জন্য ছিলো পুরস্কার। 

সায়েন্স বী বাংলাদেশের এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানপিপাসু ও কৌতূহলী শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চা ও জানার আগ্রহ পূরণ করে যাচ্ছে। তাদের মিশন হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত করে সবাইকে এ অগ্রযাত্রায় শামিল হতে সুযোগ করে দেওয়া।

সায়েন্স বী স্বপ্ন দেখে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত বাংলাদেশের, যার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে বিজ্ঞান ভীতি ও কুসংস্কার দূর করা খুবই প্রয়োজন। উৎকর্ষের পথে এই বাঁধা গুলো পেরুনোর জন্যে সায়েন্স বী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ গুলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। 

তাদের কর্মক্ষেত্রের মাঝে আছে একাডেমিক শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং স্কিল ডেভলপমেন্ট। একুশ শতকে শিক্ষার্থীদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়ার পথে আরো বহুদূর এগিয়ে যাবে সায়েন্স বী, এই বিশ্বাসই ধারণ করে সায়েন্স বী পরিবারের সকলে।