করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম: গতি ও প্রকৃতি
করোনাভাইরাস (COVID-19, Pandemic)-এর আক্রমণ ও প্রকোপ সমগ্র বিশ্বের জীবন ব্যবস্থা ও সামাজিক চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় চলছে করোনাভাইরাসের তান্ডবে। ভৌগোলিক সীমারেখা অক্ষুন্ন রেখে ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলের মানুষ আজ এক পরিবারে রূপান্তরিত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি উৎপাদন ও বিপণন, সমাজ সংস্কৃতিসহ-জীবন ঘনিষ্ঠ প্রত্যেকটি বিষয়েই বিশ্ব পরিবার আজ পর্যুদস্ত। জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ও মরণব্যাধির আক্রমণকে মোকাবিলা করে জীবন ও জীবিকা রক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধির আলোকে রাষ্ট্রযন্ত্র ও মানুষের জীবনকে সচল রাখার সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে প্রাথমিক স্তর হতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত। করোনাভাইরাসের মহামারীতে দেশজুড়ে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি শিক্ষার্থীদের জীবন ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগস্ট মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার সরকারি সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির পরবর্তী অবস্থা বিবেচনা ও অগ্রগতি মূল্যায়ন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ছুটির বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে জানা যাবে- এই মূহুর্তে শুধু এইটুকু বলা যায়।
করোনার প্রাণঘাতি আক্রমণ থেকে রক্ষাকল্পে আতংক থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং করোনার ক্রমাগত বিস্তার থেকে রক্ষা ও জীবন-জীবিকা সচল রাখার পাশাপাশি দেশের বিশাল সংখ্যক প্রায় কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন রক্ষার প্রসঙ্গটি গুরুত্বসহকারে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থাপিত হচ্ছে। ফলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ চিন্তা ও সেশনজট নিরসনকল্পে ব্যক্তি, অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সরকার ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে করোনাকালীন সংকটময় অবস্থায় শিক্ষা বিষয়ে করণীয় ব্যাপারে সবার মাঝে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়।
সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার ব্যাপারে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে। ফলশ্রুতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ, ভার্চুয়াল, জুম, প্লাটফর্ম, গুগল ক্লাসরুম, গুগল মিট প্রভৃতি ডিজিটাল মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে, এই মর্মে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন ও তথ্যাদি উপস্থাপিত হয়।
সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু করায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও ক্লাস গ্রহণের ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত পাওয়া যায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি বিস্তর লেখালেখি ও আলোচনায় পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে প্রারম্ভিক কাল হতে চলে আসা তর্ক-বিতর্ক, বাদানুবাদ, পক্ষ-বিপক্ষ, যার যার অবস্থান সামনে আসতে শুরু করে এবং করোনাকালীন দুর্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও অনলাইন ক্লাস নেয়া না নেয়া নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলতে থাকে।
করোনাকালীন সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে, এমন একটি বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পাবলিক ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ধারাবাহিক শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার ফলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাস পরিচালনা কেন্দ্রিক তর্ক-বিতর্কের ও পক্ষ-বিপক্ষের বিষয়টি অনেকটাই আড়ালে পড়ে যাচ্ছে এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাস গ্রহণের নেতিবাচক ও ইতিবাচক দিকগুলি উম্মোচিত হচ্ছে। তাই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাস সম্পর্কিত নেতিবাচক ও ইতিবাচক দিকগুলি চিহ্নিতকরণপূর্বক-এর পশ্চাতে ক্রিয়াশীল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ, এই ব্যবস্থার দুর্বলতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি, শক্তিমত্তা ও সফলতার দিকগুলি চিহ্নিত করার পাশাপাশি এ নিয়ে সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, নেতিবাচক ও প্রতিকূল অবস্থা ও ইতিবাচক বাস্তবতার যে বিষয়গুলি প্রাধান্য পাচ্ছে-তা আলোকপাত করা হলো।
নেতিবাচক প্রভাব
জাতিসংঘের বিশেষ অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেসস্কোর ভাষ্যমতে, করোনা মহামারীর প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতির সম্মুখিন হবে। যার মধ্যে রয়েছে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ। বাংলাদেশে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেক-এর বেশি নারী শিক্ষার্থী। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বিশ্বে শিক্ষা বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। কেননা, মহামারীর অভিঘাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার ১৯০টির বেশী দেশে প্রায় ১৬০ কোটি শিক্ষার্থীর বা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের সংখ্যার ৯৯ শতাংশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থা একটি শিক্ষা সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে।
অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করার জন্য যে উপযোগী স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ও ডিভাইসের প্রয়োজন- সব শিক্ষার্থীর তা নেই। যদিও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তথ্যমতে, ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করার উপযোগী মোবাইল ফোন রয়েছে-এই বিষয়টি বিচার বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
অনলাইন ক্লাস করার মত উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওয়াইফাই ও ব্রডব্যান্ড সুবিধা সম্পন্ন প্রযুক্তিগত সংযোগের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এক সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৬২% মোবাইল ডাটা, ৩৬% ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড ও ২ পোর্টেবল মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করে থাকে। অথচ মোবাইল ডাটার মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ পেতে শিক্ষার্থীদের বেশ বেগ পেতে হয়। অন্যদিকে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে মোবাইল ডাটা ছাড়া ইন্টারনেট সেবা পাওয়া দুরূহ। তাছাড়া শহরের বাইরে ইন্টারনেটের গতি বেশ ধীর, ক্ষেত্র বিশেষে অডিও সংযোগ পেলেও ভিডিওতে সংযোগ পাওয়া দুষ্কর। সে সাথে লোডশেডিং বিহীন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার অভাব আছে। তাই ইন্টারনেট সংযোগে বিচ্ছিন্নতা দৃশ্যমান রয়েছে।
তবে এক গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও গ্রামে অবস্থানকারী ৭০% শিক্ষার্থী যথাসময়ে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার অভিপ্রায়ে অনলাইন কার্যক্রমে অংশ নিতে আগ্রহী। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের অনেকেই আর্থিক, পারিবারিক ও সামাজিক সংকট ছাড়াও মানসিক দিক থেকেই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তাসত্ত্বেও, শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত থাকার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে।
অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেট সংযোগ বলয়ের মধ্যে অবস্থান করলেও ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ বেশ ব্যয় সাপেক্ষ-যা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর তিনজন শিক্ষক কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় যে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৬ ভাগ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট ডাটা ক্রয় করা প্রধান চ্যালেঞ্জ। অভিভাবকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যয়, ইন্টারনেট সংযোগের সংকট ও শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক অবস্থার কারণে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাওয়া সহজ হচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থীর যে মোবাইল ফোন রয়েছে-তাতে ইন্টারনেট সুযোগ-সুবিধা থাকলেও- পূর্ণাঙ্গ সক্ষমতার অভাবে ফোনে চার্জ থাকে না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রয়োজনমত ব্যবহার করতে গেলে মোবাইল ফোন বেশ গরম হয়ে যায়।
কারো কারো মতে, প্রত্যাশার চেয়ে কমসংখ্যক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে। ফলে শিক্ষার সমতা ও অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে। অনেকেই মনে করছেন যে, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে সুবিধা প্রাপ্তি ও অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বৈষম্যের মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়েরই মানসিক চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বন্যাজনিত পরিস্থিতির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ক্লাসে অংশ গ্রহণ করতে না পারায় অনলাইন শিক্ষা কর্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং বন্যার প্রভাবে সৃষ্ট দুশ্চিন্তা ও সংকট পারিবারিক ও শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবে। অনলাইন ক্লাসে সাধারণত ক্লাসরুম শিক্ষার মত করে সবকিছু বুঝা যায় না এবং সরাসরি ক্লাসে অংশগ্রহণের মতো করে পারস্পরিক যোগসূত্র স্থাপিত হয় না। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মতো করে অনলাইনে ক্লাসে কথোপকথন ও পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব নয় বিধায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে সফল করা একটি চ্যালেঞ্জ বটে। তাছাড়া, আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে শিক্ষা গ্রহণের কোন বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই।
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসামগ্রী ও সহায়ক গ্রন্থবলীর সহজ প্রাপ্যতা থেকে দুরে অবস্থান করছে। দাবী করা হয় যে, ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে জ্ঞাত ছিল না। ৩৮ শতাংশ অভিভাবক লকডাউন ও করোনাকালীন সময়ে সন্তানের লেখা পড়ায় মনযোগ দিতে পারছেন না। তাছাড়া, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের বিষয়টি শিক্ষার্থীরা সমানভাবে গ্রহণ করতে পারছে না।
দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না, কারণ শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষায় অভ্যস্ত ছিল না। কেউ কেউ মনে করেন যে, অনলাইনের মতো একটি উন্মুক্ত প্লাটফরমে ক্লাস নেবার মত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় ঘাটতিও হয়তো কোন কোন শিক্ষকের মধ্যে দেখা দিতে পারে।
করোনার ভয়াবহ বিস্তারের ফলে জীবন ও জীবিকার উপর ভীষণ চাপ পড়ার ফলে ব্যক্তি ও পরিবার নানা উদ্বিগ্নতা ও টানা পোড়নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে মনস্থির করতে শিক্ষার্থীদের বেগ পেতে হচ্ছে। যে সকল শিক্ষার্থী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নানাবিধ কারণে অনলাইন ক্লাস করতে পাচ্ছেনা বা পারবে না- সে সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে হতাশার জন্ম নিতে পারে।
ডিজিটাল প্লাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ায়-তা সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং অদূরভবিষ্যতে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভার্চুয়াল সুবিধার প্লাটফর্মটি অব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
ইতিবাচক প্রভাব
করোনাকালীন মহামারিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার গুরুত্ব ও প্রয়োজন সম্পর্কে সকলেই প্রায় একমত হয়েছেন। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও স্কুল হতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও অনলাইন ক্লাস গ্রহণের বিষয়টি আশাব্যঞ্জক। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা এবং সেশনযট কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাই আতংকিত হওয়ার চেয়ে শিক্ষার্থীরা আশাবাদী হয়ে উঠছে।
সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাস পরিচালনার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাস শুরু করায় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ বিরতির পর পড়াশোনায় সম্পৃক্ত হচ্ছে।শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাস শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে আছে। তাই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম মেধা রক্ষা ও মেধার লালনে সহায়ক ভ‚মিকা রাখছে।
শিক্ষার্থীদের মতে, অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যুক্ত থাকার ধারাবাহিকতা রক্ষা হচ্ছে। অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে ক্লাস করার সংস্কৃতিতে ফিরে আসতে সচেষ্ট হচ্ছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় যে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৮০% করোনাকালীন সময়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণে আগ্রহী। বিশেষ করে স্নাতক (শেষ পর্ব) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৯০% শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তাদের কোর্সগুলি শেষ করতে চায়।
নিরাপদ পরিবেশে ঘরে বসে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে। যোগাযোগ ও যাতায়াতের জন্য কোন সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে না। বর্তমানে করোনাকালীন সংকটে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সচল রাখার জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার চেয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত শিখতে সক্ষম। ফলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা গ্রহণের তুলনায় ই-লার্নিংয়ে ৪০-৬০% সময় সাশ্রয় হয়।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গিয়েছে যে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রমের তুলনায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশী মনোনিবেশ করতে সক্ষম। শিক্ষা বিষয়ক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, তথ্য প্রবাহ ও তথ্য বিনিময়ের পথ ও পদ্ধতিতে পরিবর্তনের কারণে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কম সময় সাপেক্ষ। তাই বর্তমান বিশ্বে প্রায় সকল উন্নত রাষ্ট্রেই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তথ্য প্রযুক্তি ও বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার বান্ধব হয়ে উঠছে এবং সংশ্লিষ্টদের সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিদিনকার অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে দক্ষ ও সফলভাবে পরিচালনা আরো গতিশীল হবে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বৃদ্ধি ঘটছে।
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও আনলাইন ক্লাস পরিচালনায় এই মুহুর্তে নতুন করে জনশক্তি নিয়োগও প্রয়োজন নেই। যে পরিমান জনশক্তি আছে তাদেরকে প্রশিক্ষিত করেই এবং সুলভে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে-অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। অত:পর ধারাবাহিকতা ও পর্যায়ক্রমিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শক্ত ভিত রচনা করা সম্ভব হবে।
করণীয়
শিক্ষার্থীদেরকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সরকারী প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন। বিনামূল্যে বা ভূর্তকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিতকরণের আশু পদক্ষেপ জরুরী। অভিভাবকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যয়, ইন্টারনেট সংযোগেরসংকট ও শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক অবস্থার কারণে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে না।
শিক্ষা সরঞ্জামাদি, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ওয়েব ক্যামেরা মাইক্রোফোন ও কম্পিউটার ক্রয় করার ব্যবস্থা করা এবং সহজশর্তে সুদমুক্ত ব্যাংক লোনের ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা। ইউজিসি অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চলমান রাখার পরিকল্পনা থেকে ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ডিভাইস কিনে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সক্ষমতা নেই এমন শিক্ষার্থীদের একটি নির্ভুল তালিকা ২৫ আগস্ট-এর মধ্যে প্রেরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অনুরোধ করেছে।
উপাচার্যগণের মতামতের ভিত্তিতে অনলাইল শিক্ষা কার্যক্রমে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধাসহ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে মোবাইল ডাটা সরবরাহকরণ এবং Soft loan/Grants-এর আওতায় স্মার্টফোন সুবিধার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ইউজিসি’র পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত পত্র ইতোমধ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। এ পদক্ষেপটির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের গতিকে তরান্বিত করবে এবং ব্যক্তিক, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংকট দূরীভূত হবে।
ইউজিসি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অনলাইন ক্লাস পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে বিশেষ বরাদ্দ চাওয়ার সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করবে। শিক্ষার্থীদের সহায়তাদানের সাথে সাথে অপেক্ষাকৃত তরুণ শিক্ষকদেরকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রতিটি শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বর নিবন্ধন করে মোবাইল কোম্পাানিগুলির সাথে চুক্তি করে স্বল্পমূল্যের প্যাকেজ আকারে উচ্চগতি সম্পন্ন মোবাইল ডাটা দেয়ার ব্যবস্থা করা। আর ডাটা প্যাকেজ শুধু অনলাইন ক্লাসের জন্য ব্যবহৃত হবে। গ্রামে অবস্থানকারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির শিক্ষার্থীর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রযুক্তিগত যোগাযোগ তরান্বিত ও দেশব্যাপী শিক্ষা কার্যক্রমের বিস্তার ঘটানোয় প্রয়োজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সমন্বয়ে শিক্ষা বিষয়ক মোবাইল অ্যাপ ও নিজস্ব সফ্টওয়্যার তৈরি করা।
শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক এবং অভিভাবকরা কীভাবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে অনলাইন ক্লাসকে আরো গ্রহণযোগ্য ও কার্যকরী করে তোলা যায়- এই চ্যালেঞ্জটি বাস্তবিক পর্যায় মোকাবিলা করতে হবে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে অধিকতর সম্প্রসারণ করার জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দকে সম্পৃক্ত ও অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে সূলভ এবং সহজপ্রাপ্য করা। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে কীভাবে গতিশীল, বাস্তবমুখি এবং সম্প্রসারণ করা যায়, সেই উদ্যোগকে সামনে রেখে সরকার, মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ একযোগে কাজ করা এবং চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করা।
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে হলে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় সমতা আনয়ন ও সকল শিক্ষার্থীর অন্তভর্‚ক্তির লক্ষ্য নিয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে সাজাতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তথা বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থা নতুন বাস্তবতা ও সংকটের মুখে পতিত হয়েছে। আশার ব্যাপার এই যে, সংকট উত্তরণের প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে দেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি অনলাইন কার্যক্রমকে তরান্বিত এবং অংশ গ্রহণমূলক করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে।
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠিানের উচিৎ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো এবং সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা। কোথাও কোথাও এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। কাজেই শিক্ষকদের উচিৎ বিকল্প চিন্তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা এবং উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে মানসিক ভাবে যুক্ত রাখা। শিক্ষার্থীদের মনোজগৎ সমৃদ্ধ ও স্বাভাবিক রাখতে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করা।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য প্রয়োজনে অনুষদ ও প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সার্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ইন্টারনেট সুবিধাসহ করোনাকালীন সংকটে অনলাইন ক্লাসের অংশগ্রহণের উপযোগী শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা সময়ের দাবী। ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা বর্তমান সংকটে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে।অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও অনলাইন ক্লাসসমূহ কার্যকর করার প্রয়োজনে শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে।
চলমান অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও ক্লাস পরিচালনার বিষয়ে অগ্রগতি, নিয়মিত পর্যলোচনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। আর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে অন্তর্ভূক্তিমূলক, গতিশীল ও কার্যকর করে তোলার আশু প্রয়োজনে নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয় দিকগুলি বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার ও বিশ্লেষণের পাশাপাশি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী রাখে। অন্যথায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কতটা পথ অগ্রসর হতে পারবে- তা ক্রমেই নানা প্রশ্নের সম্মুক্ষীণ হবে।
করোনাকালীন সংকটময় পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাস অব্যাহত রাখার জন্য অনলাইন অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ সময়ের দাবী। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা বিষয় অতিদ্রুত কেন্দ্রীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। অন্যথায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বিনিয়োগকৃত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং অগ্রগতি মূল্যায়ন পূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে শক্তিশালী তদারকি টিম থাকা প্রয়োজন। অন্যথায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের অভাবে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা পথে পথে হোঁচট খাবে।
সর্বোপরি, চলমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তর ঘটাতে হবে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনীয় মোবাইল ডাটা এবং এই সহযোগিতাটুকু খুলে দিতে পারে তাদের স্বপ্নের দ্বার। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কোনভাবেই শ্রেণিকক্ষে প্রদত্ত শিক্ষা ব্যবস্থার সমকক্ষ কোন বিকল্প নয়। কিন্তু কোভিড-১৯ জনিত সংকটময় মুহুর্তে অনলাইন ক্লাস করোনা কালীন সময়ে সংকট উত্তরণের কার্যকর পথ হতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইন কার্যক্রমকে সামাজিক ও শিক্ষার আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। প্রায় চার (০৪) কোটি শিক্ষার্থী আমাদের আগামীর বাংলাদেশ। তাই সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মোবাইল কোম্পানীসমূহ, বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, বিত্তবান ও সচ্ছল ব্যক্তিবর্গ, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং বৈশ্বিক ও জাতীয় সংকট মোকাবেলায় যার যার অবস্থান থেকে শিক্ষা বিস্তারের মানবিক কাঠামো তৈরি করে উন্নয়ন সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের উচিৎ সার্বিকভাবে চাপ কমানোর লক্ষে সঠিক পথে দিক নির্দেশনা প্রদান, নীতি নির্ধারকদেরকে সহায়তা করা এবং গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ভিত্তির উপর দাঁড় করানো ও গতিশীল করা।
লেখক: অধ্যাপক ও প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়