করোনাকালে কেমন আছে সমাজের মধ্যবিত্তরা?
করোনার থাবায় বিধ্বস্ত পুরো বিশ্ব। করোনায় বিশ্ববাসীর টনক নড়েছে। অনেক বড় বড় পরাক্রমশালী দেশেরও ভীত কেঁপে ওঠেছে। জনবহুল শহর, বড় বড় রেস্তোরা নিমিষেই যেন সব অচল। লকডাউন নামক বেড়াজালে যেন সবাই আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও লকডাউনের আওতাভুক্ত।
সরকার সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঘরেই দিন যাপন করছে মধ্যবিত্তরা। মধ্যবিত্তদের চাকুরি কিংবা প্রাত্যহিক কর্মের ওপর ভর করেই দিন অতিবাহিত হতো, সংসার চলতো। দীর্ঘ অনেকগুলো প্রহর কেটে গেল তাদের চাকুরি নেয়, উপার্জনের কোন মাধ্যমও নেয়। তারা সব পরিস্থিতি, প্রতিকূলতা হাসি মুখে বরণ করে নিচ্ছে। মুখ ফোটে কষ্টের কথা কারো নিকট শেয়ারও করে না, গরীবের ন্যায় কারো কাছে হাতও বাড়ায় নি।
মধ্যবিত্তদের কাছে আত্মসম্মান অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাহলে কিভাবে চলছে তাদের লকডাউনে চাকুরিহীন, উপার্জনহীন সময় গুলো? করোনাকালে গরিবের জন্য খাদ্য ও অর্থ সহায়তা আছে৷ উচ্চবিত্তের জন্য আছে শিল্পের প্রণোদনা৷ কিন্তু মধ্যবিত্তের জন্য কী আছে? বিশ্বব্যাংক আর গবেষকরা মধ্যবিত্তের একটা চেহারা দাঁড় করিয়েছেন আয় অথবা ক্রয় ক্ষমতা দিয়ে৷
কিন্তু বাংলাদেশে এই করোনায় ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত চেনা যাচ্ছে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার মধ্য দিয়ে৷ কারণ, মধ্যবিত্ত ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারেন না৷ অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারেন না৷ মধ্যবিত্তের অবস্থান মাঝখানে৷ তাই না পারে নীচে নামতে, না পারে উপরে উঠতে৷ এই করোনাকালে তাই সে হাঁসফাঁস করছে মধ্যবিত্ত৷
এখন আমরা যাদের দেখছি, তারা সংজ্ঞায়িত হয়েছে মধ্যবিত্তের প্রথম টায়ার হিসেবে৷ তবে এই করোনা যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে আরো পরের টায়ারেও আঁচ লাগবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা৷
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা জরিপ অনুযায়ী করোনার আগে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২০.৫ ভাগ দারিদ্র্য সীমার নীচে ছিল৷ আর চরম দরিদ্র ছিল ১০ ভাগ৷ বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, এক জনের দৈনিক আয় এক ডলার ৯০ সেন্ট হলে ওই ব্যক্তিকে দরিদ্র ধরা হয় না৷ এর নীচে হলে দরিদ্র৷ এখন মধ্যবিত্তের আয়সীমা কত? এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলছে, এক ব্যক্তির ক্রয় ক্ষমতা (পিপিপি) যদি প্রতিদিন দুই মার্কিন ডলার থেকে ২০ মার্কিন ডলারের মধ্যে হয় তাহলে তাকে মধ্যবিত্ত বলা যায়৷ এই হিসেবে তারা বলছে, বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত হলো তিন কোটি ৭ লাখ৷
বিশ্বব্যাংকের মধ্যবিত্তের আয়ের হিসেবটি একটু বেশি৷ যাদের প্রতিদিন আয় ১০ থেকে ৫০ ডলার, তারা মধ্যবিত্ত৷ তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুই থেকে চার ডলার প্রতিদিনের আয় হলেই মধ্যবিত্ত৷ সেই হিসেবে যার মাসিক আয় ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা সেই মধ্যবিত্ত৷ এটা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ ভাগ৷ ১৬ কোটি মানুষের হিসেবে সংখ্যাটি দাঁড়ায় চার কোটি ৮০ লাখ৷ বিআইডিএস-এর সাম্প্রতিক জরিপে বলা হচ্ছে, করোনায় এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে, দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে গেছে৷ তাই এখন দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি৷
লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।