আমার হজ্জের টাকা কোথায় যায়?
গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে। ছবিটি দেখলেই প্রাণ ভরে যায় নির্মোহ এক শান্তিতে। ছবিটি হলো হজ্জের। হজ্জ উপলক্ষে পুণ্যভূমি মক্কা মদিনা যেনো আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে আমারও সর্বোচ্চ ইচ্ছে হলো একটিবার হলেও যেনো ইসলামের তীর্থস্থল গমন করতে পারি আর বলতে পারি লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।
হজ্জের শুরুটা হয়েছিলো পয়গম্বর ইব্রাহিম (আ.) এর জমানায়। বর্তমানে যে হজ্জ পালন করা হয় এর রীতিনীতি প্রচলন করেন আখেরি জমানার নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর দ্বারা। হজ্জ ইসলামের মৌলিক স্তম্ভের একটি। এটা পালন করা প্রতিটি নরনারীর জন্য সামর্থ অনুযায়ী আবশ্যক।
দশম হিজরিতে পয়গম্বর মুহাম্মদ স. জিলহজ্জ মাসে আরাফার ময়দানে একটি মুলুকের সেরা ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি সেখানে মানব জাতির পথ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেখানে যা বলা ছিলো তার সার কথা হলো: পাক কুরান এবং হাদিস আগলে রাখা, রক্তপাত, হিংসা, প্রতিশোধ, হত্যা ইত্যাদি পরিহার, একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি না দেয়া, পরস্ত্রী হরন না করা, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা ইত্যাদি।
হজ্জের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলিম ভ্রাতৃত্ব অর্জন করা। এর অর্থ হলো এক যাত্রায় সামিল হওয়া। অর্থাৎ, সারা মুসলিম জাহান একই ছায়াতলে দাড়াঁবে এবং বলবে আল্লাহ আমি হাজির। এর আরেকটি অর্থ হলো সর্বজনীন ইসলামবাদ। জগতের সকল মুসলিম ভাই ভাই।কোনো জাতি, গোষ্ঠী ভেদাভেদ এখানে নেই। সবাই এক আল্লাহর বান্দা। সবারই উদ্দ্যেশ্য আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
হজ্জ যেহেতু মুসলিম্ম উম্মাহর একটি প্রধান ইবাদত। এর শিক্ষাও খুব উচ্চমার্গীয়। এর শিক্ষা হলো মানব কল্যান। প্রত্যেক মানুষ মানুষের জন্যে। একজন মুমিনের দেহের সাথে এর তুলনা করা যায়। একজন ব্যক্তির যেমন শরীরের কোনো একটি অঙ্গে ব্যথা পেলে সারা শরীর জেনে যায় ঠিক তেমনি করে মুসলিম উম্মাহর কোনো একটি দেশ যদি কোনো ব্যথা অনুভব করে তবে তা তামাম জাহানের মুসলিম উম্মাহর ব্যথা অনুভূত হওয়ার কথা। সকলে এক ছায়াতলে অবস্থান হবে এটাই তো মুসলিম উম্মাহর চাওয়া। সর্ব ইসলামবাদ হোক এটাই তো মুসলিম উম্মাহর হজ্জের চাওয়া।
এই হজ্জ থেকে সৌদি আরব বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বোধকরি অন্য কোনো খাত থেকে তা পারেনা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গড়ে প্রতিবছর প্রায় ২০-২৫ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজব্রত পালন করেন। এছাড়াও প্রতিবছর প্রায় ৬০-৭০ লাখ মুসল্লি আল উমরাহ পালন করে থাকে। এতে করে সৌদি সরকার প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে। গড়ে একজন হাজি ৪৬০০ডলার খরচ করে থাকে। সৌদি আরবের অর্থনীতি অপরিশোধিত তেলের উপর দাঁড়িয়ে আছে তা স্বীকার্য কিন্তু সৌদি অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত উৎস হলো ধর্মীয় পর্যটন খাত। এই খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে সৌদি সরকার।
এখন প্রশ্ন হলো এই বিশাল অংকের টাকা ব্যয় হয় কোন খাতে? এর উত্তরে বলা যায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় সামরিক খাতে। সৌদি সরকার মধ্যপ্রাচ্যে দখলদারিত্বের নেশায় মেতে উঠেছে।এরই অংশ হিসেবে তারা ২০১৭ সালে সামরিক ব্যয়ে ৩য় শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। এদের অবস্থান এমনকি রাশিয়ার উপরেও ছিলো। সৌদি আরব বর্তমানে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎসে পরিণত হয়েছে। এদের সাথে রয়েছে কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি। এরই মধ্যে পেন্টাগন ২৬০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্রের অর্ডারও পেয়েছে। এছাড়াও ১০০০ টি জাহাজ ধ্বংসকারী ক্ষেপনাস্ত্র কেনার কথাও রয়েছে।
এই যে লক্ষ্য কোটি ডলারের অস্ত্র কেনা হচ্ছে এর অর্থের অন্যতম প্রধান উৎস হলো ধর্মীয় পর্যটন খাত। ধর্মীয় পর্যটন খাতের টাকা দিয়ে তারা অধর্ম করছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থির করে তুলেছে। তারা ইসরায়েলকে জিইয়ে রেখেছে। ইরানের সাথে সাপেনেউলে সম্পর্কে জড়িয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে তারা ইয়েমেনে নিয়মিতভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। অগণিত নিরস্ত্র অসহায় মানুষ হত্যা করছে। তারা সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকেও অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে। এর আগেও সৌদি সরকার ইরাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদেরও অস্ত্রের যোগান দিয়েছে। তারা গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি এনেছে। আমাদের দেয়া হজ্জের টাকা দিয়েই তারা কিলিং স্কোয়াড পাঠিয়ে জামাল খাসোগিকে হত্যা করেছে। এই মুসলিম উম্মাহর টাকা দিয়েই সৌদি রাজপরিবার সম্ভাব্য প্রতিটি অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। মদ, নারী,নাচ-গানে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মত্য থাকছে।
যে অর্থ খরচ করার কথা ছিলো মানব কল্যাণে, সে অর্থ খরচ হচ্ছে মানবতার ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে। অথচ কোনো মুসলিম দেশ তাদের গলা উঁচু করে বলেনা যে আমার টাকায় এসব অপকর্ম চলতে দেবোনা।
লেখক: শিক্ষার্থী, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।