২৩ জুলাই ২০২০, ১৬:২০

আমরা কবে মানুষ হবো?

  © প্রতীকী ছবি

উন্নত হচ্ছে বিশ্ব, উন্নত হচ্ছি আমরাও। জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছি বিদেশ, নিচ্ছি নানা বড় বড় ডিগ্রী। আবিষ্কার করছি নানা উন্নত প্রযুক্তি, যাপন করছি বিলাসবহুল জীবন। কিন্তু এতো কিছুর ভিড়েও আমাদের বিবেক আজও নিতান্তই মূর্খ। জেগেও ঘুমিয়ে আছে আমাদের বিবেক, মনষ্যত্ব। কি লাভ বড় বড় ডিগ্রির যদি সে ডিগ্রিতে আমার মা বোনের অত্যাচারের বিচার না হয়?

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় অক্ষরে ছাপানো হয় আমার আপনার বোনদের ধর্ষণের খবর। আমরা গর্বিত জাতির মতো তা পড়িও। কিন্তু পরদিন আর খুঁজিনা বোনটা আমার ঠিকঠাক বিচার পেলো কিনা!

বড় বড় সেমিনার, সভায় উচ্চস্বরে ভাষণ দেই নারীদের অধিকার সমান, নারীরা দুর্বল নয় কিন্তু সেই আমরাই যৌতুকের জন্যে দিন রাত অত্যাচার করি সেই নারীকেই। আমরা যখন বর্বর ছিলাম তখনও আমাদের মা বোনেরা অত্যাচারিত হতো কিন্তু আজ তো আমরা সভ্যতার চরম শিখরে আরোহণ করেছি আমরা উন্নত হয়েছি, তবুও কেন এত অন্যায় অবিচার? কেন প্রতিদিন ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধের শিকার হচ্ছে আমাদের মা-বোন? কেন অসভ্য হিংস্র নোংরা মানসিকতার হাত থেকে রেহাই মিলছেনা দু'বছরের শিশুরও? খবরের কাগজে, সোশ্যাল মিডিয়া বা টিভির পর্দায় প্রতিদিন ধর্ষণের খবর দেখি, ধর্ষকের বিচারের খবর কেন দেখি না? ধর্ষকের কঠোর শাস্তির খবর শুনে আতঙ্কে ধর্ষকদের হাড় কেন কেঁপে উঠে না?

জন্মের পর থেকে পরিবার ও সমাজ থেকে মেয়েকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় ‘তুমি দুর্বল, তোমাকে সাবধানে চলতে হবে, নাহলে ধর্ষণের শিকার হতে হবে।’ অথচ ছেলেকে এই ব্যাপারে কোনো ধরনের শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনা পরিবার। কারণ তারা ছেলে বলে? তারা পরিবারের দায়িত্ত্ব পালন করে বলে?

একটা সন্তান যখন বেড়ে উঠতে থাকে তখন পরিবার থেকে তার ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেওয়া হয় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলে যেন সমাজে মুখ দেখানোর জো থাকেনা। কিন্তু কখনো এটা নিয়ে ভাবা হয়না সন্তান কিভাবে বেড়ে উঠছে, কোন মানসিকতায় বড় হচ্ছে, কার সাথে মিশছে। অনেক সময় ছোটবেলার কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা বা নির্যাতনের কারণেও তাদের মানসিক বিকৃতি ঘটতে পারে। যার কারণে তারা আস্তে আস্তে মানুষের প্রতি সম্মান হারিয়ে ফেলে এমনকি এদের আত্মসম্মানবোধ বলেও কিছু থাকে না। এরাই একসময় ধর্ষকে পরিণত হয়।

বর্তমানে ধর্ষণ যেন সমাজের এক মহামারী ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে। এই করোনাকালেও যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ। এমন কোনো দিন খুঁজে পাওয়া মুশকিল যেদিন কোনো মা-বোন ধর্ষণের শিকার হয়না। তারপরও আমরা কিছুই করতে পারিনা। বরং আমরা ধর্ষকের শাস্তির দাবি না জানিয়ে ধর্ষিতার দোষ খুঁজতে ব্যস্ত।

এক বোনের জীবন নষ্ট করার আগে আমরা কেন ভাবিনা বাড়িতে আমারও বোন আছে? কেন সমাজের ভয়ে বাবা তার রাজকন্যাকে নিয়ে আত্মহত্যার মত পাপ কাজের সিদ্ধান্ত নেয়? কেন সেই ধর্ষক শান্তির ঘুম ঘুমোতে পারে?

কবে জাগ্রত হবে আমাদের বিবেক? কবে মানুষ হবো আমরা? কবে এক কন্যা তার বাবার ঘরকে জাহান্নাম মনে করবেনা? কবে এক বোন মাথা উঁচু করে রাস্তা দিয়ে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারবে?

শিক্ষার জন্য মা-বাবা শিক্ষা গুরুর কাছে পাঠান সন্তানকে ভালো মানুষ করতে, বাবার বুক যেনো সকল কন্যার পরম নিরাপদ স্থান, কিন্তু সেই গুরুই যখন ধর্ষক সেই পিতার কাছেই যখন তার রাজকন্যা নিরাপদ নয় তবে হে সমাজ কি লাভ তোমার এতো উন্নতির এতো সভ্যতার?

লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি