০১ জুলাই ২০২০, ২২:৪৪

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ১০ম গ্রেডের বাস্তবতা

তৌহিদুজ্জামান, প্রধান শিক্ষক  © ফাইল ফটো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডসহ গেজেটেড পদমর্যাদা করার জন্য অনেকদিন ধরে শিক্ষকেরা আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলন আরো জোরালো আকার ধারণ করে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ যখন শিক্ষা বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা দেন এবং একই দিনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড পদ মর্যাদা ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে আদেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৯ জন প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে এবং ৫০ হাজারের কাছাকাছি পদের প্রধান শিক্ষক রয়েছেন।

কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির ঘোষণা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা বেতন পান ১১তম ও ১২তম গ্রেডে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির অন্য সব চাকরিজীবী দশম গ্রেডে বেতন পান। এমনকি ৩৪তম বিসিএস থেকে যখন দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয় তখন অন্য সবাই দশম গ্রেড পেলেও শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা পেয়েছেন ১২তম গ্রেড। বর্তমানে প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষক বেতন পান ১২তম গ্রেডে (১১৩০০ টাকা বেতন স্কেল) এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১১তম গ্রেডে (১২৫০০ টাকা বেতন স্কেল)।

আক্ষেপের সুরে বলতে হয় দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষিত হলেও এখনও বেতন ভাতা প্রদান করা ৩য় শ্রেণির বেতন কোড থেকে যার কারণে প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। শিক্ষকতা যেহেতু মহান পেশা তাই শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মান দিলে দেশের উপকার ছাড়া ক্ষতি হবে না একথা আমিসহ সকল পেশার মানুষই দৃঢ়ভাবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। কিন্তু অধরাই থেকে যায়।

আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারেও শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমুখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষা খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনও রয়ে গেছে তার মধ্যে ১০ম গ্রেড প্রাপ্তি বিষয়টা অন্যতম ।

যেকোনো দেশের শিক্ষার ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা, যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সহজেই অনুমেয় যে এই ভিত্তিকে যাঁরা যত বেশি শক্ত ও মজবুত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, তাঁরাই সফলকাম। প্রাথমিক শিক্ষার মানের উন্নয়ন না ঘটলে দেশের সার্বিক উন্নতি বাধাপ্রপাপ্ত হবে বলে আমি মনে করি।

বর্তমান শিক্ষা বান্ধব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জনাব মো. জাকির হোসেন স্যার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব জনাব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন স্যার ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক জনাব মোঃ ফসিউল্লাহ স্যারের কাছে বিনীত প্রার্থনা যে, সার্বিক দিক বিবেচনা করে দ্রুততার সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়িত হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করা। ১০ম গ্রেডের সাথে সাথে অন্যান্য সমস্যাগুলো চিহ্তি করে তা অনতিবিলম্বে লাঘব করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আশায় থাকবো এই মুজিববর্ষেই আমাদের সকল প্রধান শিক্ষকদের প্রাণের দাবি ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন হবে।

বর্তমানে শতভাগ ছেলেমেয়েওা স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যের বই বিতরণ, শিক্ষা উপকরণ ও প্রতিটি শিক্ষার্থীর মায়েদের হাতে উপবৃত্তি বাবদ অর্থ তুলে দেয়া হচ্ছে এর সাথে এবছর থেকে স্কুল ড্রেস ক্রয় করার জন্য শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এসকল বিষয়বস্তুর সাথে শিক্ষকদের উপযুক্ত মর্যাদা প্রদানের সাথে সাথে বেতন বৈষম্য দূর করতে পারলে প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়বে এবং সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষার গতি ত্বরাণিত হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। সার্বিক দিক বিবেচনা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সকল সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও আমি মনে করি। এই শিক্ষায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে পারলে শিক্ষার মান বাড়বে।

সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে ও ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।


লেখক: প্রধান শিক্ষক (৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার) ১০১ নং পূর্ব তেঁতুলবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝিনাইদহ সদর, ঝিনাইদহ।