প্রাথমিকে আগে দশম গ্রেড না টাইমস্কেল
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেশ কিছু সমস্যা বিদ্যমান। যেমন- শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি, টাইমস্কেল জটিলতা নিরসন, দশম গ্রেড প্রদান, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পদ স্থায়ীকরণসহ নানা সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
এর মধ্যে আজ আমি প্রধান শিক্ষকদের ৯ মার্চ’১৪ হতে ১৪ ডিসেম্বর’১৫ পর্যন্ত টাইমস্কেল জটিলতা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। তবে এ বিষয়ে আলোচনার পূর্বেই কিছু তথ্য জানানো একান্ত জরুরি বলে মনে করি। এই টাইমস্কেল জটিলতার কারণে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষকগণ। প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন ভাতা কম পাচ্ছেন। ফলে শিক্ষকগণ আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি টাইমস্কেল না পাওয়ায় হতাশায় মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। অনেকে আবার চাকরির প্রতি নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতা হারিয়ে ফেলছেন। যা প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অশনিসংকেত।
বর্তমানে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকগণ ৩/৪টি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এক. সিনিয়র শিক্ষক যারা ৩টা টাইমস্কেল পেয়েছেন তারা চাইছে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। জীবনে একবার হলেও পদোন্নতি নিয়ে সম্মানের সাথে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া। দুই. টাইমস্কেল বঞ্চিত প্রধান শিক্ষকরা চাইছেন প্রাপ্য টাইমস্কেল। অন্যকিছু পাক বা নাপাক অন্তত আর্থিকভাবে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অন্যদিকে নবীন প্রধান শিক্ষকরা ৯ মার্চ’১৪ হতেই দশম গ্রেড বাস্তবায়ন করার জন্য মরিয়া। অন্যদের দিকে তাকানোর কোন সুযোগ বা সময় নেই তাদের। পদোন্নতি বা টাইমস্কেলে তাদের তেমন একটা লাভ হবে না। তাই তারা চাই মর্যাদা। অর্থাৎ দশম গ্রেড।
আমরা শিক্ষক নেতারা এসব বিষয়ে কোনটাতেই তেমন একটা যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছি না। বিধায় শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য সুযোগ সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ করণে শিক্ষকরা বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ছেন।
নবীন প্রধান শিক্ষকরা কেবল মাত্র নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ভাবছেন। অন্যের স্বার্থের কথা তেমন একটা ভাবছেন না। এটা আমাদের মোটেও কাম্য নয়। এটা কোন সমিতির বৈশিষ্ট্যও হতে পারে না। সমিতি হতে হবে সামগ্রিক। যেখানে সকল শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে যেখানে সামগ্রিক শিক্ষকদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। সমিতি একক কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়। সমিতি হবে সার্বজনীন তা না করে আমাদের নবীন প্রধান শিক্ষকরা কেবল নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১০ গ্রেড নিয়েই ভাবছেন। অন্য প্রধান শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের তেমন একটা ভূমিকা নেই বল্লেই চলে। যা সত্যিই দুঃখজনক।
আমরা সিনিয়র প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেডের বিপক্ষে নই। আমরাও দশম গ্রেড চাই। এ গ্রেড হলে তো আমাদেরও বেতন স্কেল একধাপ বৃদ্ধি পাবে। দশম গ্রড কেনা চাই? তবে আগে টাইমস্কেল পরে দশম গ্রেড। তাহলে সকল শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে। এতে আমরা সকল শ্রেণির প্রধান শিক্ষকরাই উপকৃত ও লাভবান হবো।
আমাদের সমিতির উদ্দেশ্য অত্যন্ত পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট। আমরা সকল প্রকার প্রধান শিক্ষকদের নিয়েই এগিয়ে চলছি এবং সকল প্রকার শিক্ষকদের মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। এমন কি আমরা সহকারী শিক্ষকদের স্বার্থ নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। যার ফলশ্রুতিতে প্রাথমিকের ১৪টি সংগঠন নিয়ে গঠিত হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের মতো শক্তিশালী সংগঠন।
আমরা পুরো শিক্ষক পরিবার নিয়েই সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তবায়ন করতে চাই। উদ্দেশ্য ভালো থাকলে তা কখনো বিফলে যায় না। কেননা কোন সমিতি কখনো একক, গোষ্ঠী বা খন্ডিত অংশের হতে পারে না। যারা খন্ডিত অংশের নিয়ে ভাবছেন তারা কালের আবর্তে তলিয়ে যাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
তাই আমি তাদের প্রতি অনুরোধ করছি, আসুন আপনারা শুধু নিজেকে নিয়েই না ভেবে সবাইকে নিয়ে ভাবুন, সবাইকে নিয়ে কাজ করুন। তাহলে সকল শিক্ষকদের মঙ্গল সাধিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়ন হবে।
তাই আমরা ক্ষুদ্রতা পরিহার করে উদারতার পরিচয় দিই। আমিত্ব পরিহার করে সার্বজনিন হয়ে উঠি। সকলের তরে সকলে মোরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে। এই যেন হয় আমাদের পথ চলার মূলমন্ত্র। তা নাহলে নিজেদের মধ্যে রশি টানাটানি করে কারোও কোন লাভ হবে না। আমরা সকলেই না পাওয়ার বঞ্চনা ও হতাশা নিয়েই একদিন চলে যেতে হবে।
লেখা চলমান। ২য় পর্বে টাইমস্কেল নিয়ে বিস্তারিত কথা হবে ।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি