২২ জুন ২০২০, ১৭:১৯

করোনা মোকাবেলায় সিলেটের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ শাবিপ্রবি

  © টিডিসি ফটো

সময়ের সাথে সাথে করোনা আক্রমণ চরম পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে এবং হয়ত একসময় এর প্রকোপ একেবারে কমে যাবে। পুরো পৃথিবী করোনার দয়ামায়াহীন ছোবলে থেমে গেছে এবং দুনিয়া কাঁপানো ক্ষমতাশালীরা করোনার ভয়ে এখন কাপছে। প্রতিনিয়ত আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে এবং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের হার। প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, পত্র-পত্রিকায় এখন করোনায় আক্রান্তের খবর এবং মৃতের খবরে সয়লাভ। থমকে গিয়েছে শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য। বুকফাটা আর্তনাদ নিয়ে কাজ করছে সেবাধর্মী চাকরিজীবীরা।

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্তের সংখা ৮.৬৯ মিলিয়ন, সুস্থ হয়েছে ৪.২৭ মিলিয়ন এবং মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ৬১ হাজার। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১,০৮,৭৭৫, সুস্থ হয়েছে ৪৩,৯৯৩ এবং মৃতের সংখ্যা ১,৪২৫। আক্রান্তের দিক থেকে বাংলাদেশ ১৮তম অবস্থানে আছে।  

যেসব অঞ্চলে ইউরোপীয় দেশ থেকে প্রবাসীরা প্রবেশ করেছে বেশি, বাংলাদেশে এই থাবাটা বেশি সেসব অঞ্চলে। সিলেট বাংলাদেশের অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। প্রবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগ যুক্তরাষ্ট্রে থাকায়, এই দেশের রাজধানীর নামানুসারে অনেকেই সিলেটকে ২য় লন্ডন হিসেবে সম্বোধন করে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই সিলেটে করোনার আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউরোপ থেকে সিলেটে অনেক প্রবাসী আসেন, যার ফলে এটা অনুমেয় ছিল যে সিলেটে করোনাভাইরাস ভয়াবহরূপ ধারণ করতে পারে। বর্তমানে শুধু সিলেট জেলাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ১৬৪০ জন ছাড়িয়ে গেছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে সারা বাংলাদেশের মত সিলেটেও করোনা পরীক্ষার হার আশাব্যঞ্জক ছিলনা। সিলেটে শুধু নমুনা পরীক্ষা করা হত  সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। যা চাহিদার তুলানায় ছিল অপ্রতুল্য; অল্প সংখ্যক নমুনা পরীক্ষার কারনে আক্রান্তের হার বাড়লেও নমুনা পরীক্ষার অভাবে শনাক্ত করা যাচ্ছিলনা। যার ফলে মানুষকে সচেতন করা ছিল দুরূহ ব্যপার এবং মানুষ এই ব্যাপারে ছিল উদাসীন।

সিলেটের এই ক্রান্তিকালীন সময়ে এগিয়ে আসে শাহজালাল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) প্রশাসন। এটি বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যা শাবিপ্রবি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৮৬-৮৭ সালে। গত ৩৪ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই শাবিই এখন করোনা মোকাবেলায় সিলেটবাসীর জন্য কাজ করছে।

এই ক্রান্তিকালীন মুহূর্তে দক্ষ নেতৃতের পরিচয় দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ স্যার। মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের একান্ত প্রচেষ্টায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ল্যাবকে তৈরি করা হয়। বর্তমানে প্রতিদিন ২৫০-৩০০টি নমুনা পরিক্ষা করছে এই ল্যাব, যা সিলেটের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য অন্যতম মাধ্যম হল প্রচুর পরিমাণে নমুনা পরীক্ষা করা। শাবিপ্রবির ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার সাথে সাথে সিলেটে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে; যা মানুষকে সচেতন করতে ভূমিকা পালন করছে। একদিন হয়ত করোনাভাইরাসের বিলুপ্তি ঘটবে কিন্তু সিলেটবাসী শাবিপ্রবি এবং বর্তমান উপাচার্য মহোদয়ের ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় উপাচার্য মহোদয়সহ এই কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবান জ্ঞাপন করছি।

লেখক: গবেষক এবং দল প্রধান, ইচ্ছেঘুড়ি ফাউন্ডেশন