২০ জুন ২০২০, ১৫:৩৩

শিক্ষাব্যবস্থা সচলে অনলাইন ক্লাসই একমাত্র ভরসা

  © টিডিসি ফটো

করোনা ভাইরাসের প্রকোপে স্থবির পুরোদেশ। কবে নাগাদ সবকিছু স্বাভাবিক হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এদিকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েকমাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে। যা করোনা থেকে আমাদের রক্ষা করলেও সেশনজট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না লাখ লাখ শিক্ষার্থী।

দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক সময়েও সেশনজট বিদ্যমান থাকে। এরমধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে যদি একজন শিক্ষার্থীর জীবন থেকে ছ'মাস থেকে একবছর হারিয়ে যায় তাহলে সেটাও আমাদের ক্যারিয়ারে বাজে প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশ অর্থনীতি ও তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকে অনেকটা এগিয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ব্যহত শিক্ষাব্যবস্থাকে বিকল্প পদ্ধতিতে সচল রাখার ব্যাপারে বর্তমানে প্রযুক্তিবিদ্যাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

বর্তমানে ছোঁয়াচে এ ভাইরাসের প্রকোপে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে ঝরে পড়ার ঝুঁকি। তাই শিক্ষা কার্যক্রমের স্থবিরতা কাটাতে অনলাইন ক্লাস সহায়ক হবে বলে আমার ধারণা। যদিও অনলাইন ক্লাস নিতে গিয়ে আমাদের মাঝে অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে অনলাইন ক্লাস কিছুটা অস্বস্তিকর মনে হলেও একসময় বিকল্প পদ্ধতির শিক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সুফল বাড়বে। করোনাকালীন সময়ে ইন্টারনেটের সর্বোত্তম ব্যবহারে আমাদেরও অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে যা যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রাকৃতিক দূর্যোগে সুফল পাব আমরা।

অনলাইন ক্লাসের আগে শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার প্রয়োগ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সময়ানুবর্তীতা ও মূল্যবোধের পরিচয় দিতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। তাদের অনেকে টিউশন করে নিজেকে এবং তার পরিবারকে সচল রাখে। সংকটকালে যেখানে সংসারে টানাপোড়ান সেখানে ইন্টারনেট খরচ করে অনলাইন ক্লাস করা তাদের জন্যে অনেক কষ্টসাধ্য।

অনলাইন ক্লাসে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে যারা আর্থিক কষ্টে আছে কেবল তাদেরকে ইন্টারনেট প্রণোদনার আওতায় আনা যেতে পারে। আবার অনলাইন ক্লাসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পরামর্শ থাকলেও নেটওয়ার্ক সুবিধা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে শিক্ষার্থীদের অনেকে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন।

অনলাইন ক্লাসে সবাইকে যেহেতু নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব নয় তাই এ ব্যাপারে রেকর্ডিং ব্যবস্থা হবে সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়। ক্লাসের রেকর্ডিং যাতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা কিভাবে নেওয়া হবে সে ব্যাপারেও নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা প্রয়োজন। এমনকি যাদের পরীক্ষা চলাকালীন কিংবা কোর্স শেষ হওয়ার পরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় তাদেরকে নতুন সেমিস্টারের আওতায় আনা যেতে পারে। করোনাকালীন সময়ে যদি শিক্ষার্থীদের ব্যহত শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল করতে হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ছাড় দেওয়ার ব্যাপারেও ভাবা জরুরি বলে মনে করছি।

বিশ্বজুড়ে করোনার আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। বাংলাদেশের আইইডিসিআর মহাপরিচালক বলেছেন, করোনাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দুইবছর সময় লাগতে পারে।

ফলে করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতি কোনো কার্যকরী ভ্যাকসিন ব্যতীত প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু কার্যকরী ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অনেক সময়ের ব্যাপার বলছেন বিজ্ঞানীরা। তাই করোনা ভাইরাসকে সাথে নিয়েই সীমিত পরিসরে আমাদেরকে চলাফেরার অভ্যস গড়ে তোলা জরুরী। এসময়টা নিজেকে সুরক্ষায় যেমন সতর্ক থাকতে হবে তেমনি গুরুত্ব দিতে হবে নিজেদের ক্যারিয়ারের উপর,একাডেমিক চর্চার উপর। করোনা থেকে বেঁচে গেলেও ক্যারিয়ারের উপর বাজে প্রভাব হলে তা হবে যেকোনো ব্যক্তির জন্য ভাইরাসের চেয়ে ভয়ঙ্কর।

দীর্ঘদিনের বন্ধে শিক্ষার্থীদের মাঝে একধরণের একঘেয়েমি এসেছে। একাকীত্ব ও হতাশা প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে তাদের । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশায় দিন পার করছে শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস কিছুটা হলেও স্বস্থি দিবে আমার ধারণা। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যেমন একাকীত্ব দূর হবে তেমনি পড়াশোনার প্রতিও একটা আগ্রহ সৃষ্টি হবে। তাই শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক থেকে বাঁচাতে অনলাইন ক্লাসে উদ্বুদ্ধ করার বিকল্প নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।