করোনাকালে জীবন নাকি জীবিকা!
বিশ্বের প্রায় সকল দেশই ইতোমধ্যে লকডাউন শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়, বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তো নয়ই। বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভরশীল দেশ, লাখো লাখো খেটে খাওয়া মানুষের এই দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব যেন কোনভাবেই থামছে না।
কিন্তু মানুষকে কি না খেয়ে থাকবে? জীবনে চলার পথে মানুষকে হোঁচট খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত, সবার চাওয়া একটিই পৃথিবী থেকে নিপাত যাক এই মহামারী, আবারো সবুজের শ্যামলী ভরে উঠুক আমার এই প্রাণের বাংলাদেশ, যেখানে থাকবে না কোনো দুঃখ-কষ্ট, ঘূর্ণিঝড়ের মতো তান্ডব লীলা খেলা, দুর্ভিক্ষের কোন ছাপ।
সবার আকুতি একটিই : তিনবেলা যেন পেট পুরে ভাত খেতে পায়! সংগ্রাম থেমে নেই। এই করোনা কালেও লড়েই চলেছি উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা, ঘূর্ণিঝড় আমফাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার, লক্ষাধিক ঘরবাড়ি, কৃষি ক্ষেত, শস্য ভান্ডারন্ডার, তলিয়ে গেছে হাজারো মাছের হ্যাচারি, সবজির বাগান। এক দিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে পেটের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা! জীবনকে বাঁচানোর জন্যই তারা আজ রাস্তায় পথে ঘাটে ছিন্নমূলের মত যেভাবে পেরেছে , জীবিকা নির্বাহ করার আবার চেষ্টা চালাচ্ছে, এক মুঠো খাবারের আশায়, প্রাণ ভরে বাঁচার আশায়।
কেন লকডাউন শিথিল করা অনেক জরুরি হয়ে উঠেছে?
নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষগুলি যেন একদিন ও না খেয়ে থাকে এটা নিশ্চিত করার জন্যই কিন্তু সরকারের আজকের এত এত উদ্যোগ। প্রত্যেকদিনই সরকারি ত্রাণ তহবিল থেকেকোটি কোটি টাকার ত্রাণ গরীব দুঃখী মানুষের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে। গত ৩১শে মে থেকে সীমিত আকারে সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সরকার। কারণ জীবিকার টানে সবাইকে এমনিও পথে নামতেই হচ্ছে, তাই সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমাদের সাধুবাদ জানানো উচিত এবং একই সঙ্গে সরকারি প্রজ্ঞাপনে দেওয়া প্রত্যেকটি নির্দেশাবলী আমাদেরকে পালন করতেই হবে যদি আমরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাই।
আবার যদি একই সাথে জীবনের এই সংগ্রামী মুহূর্তে জীবিকা নির্বাহ করতে চাই। কারণ সচেতনভাবে এবং সঠিক নিয়ম পালনের মাধ্যমে যদি আমরা বাড়ি থেকে বের হই, আশা করি আমরা নিজেদেরকে অনেকটাই সামলে নিতে পারব করোনার ভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে। আমাদেরকে প্রত্যেকটি দিন নিশ্চিত করতে হবে প্রতি ৩ মিনিট পরপর হাত ধোয়া থেকে শুরু করে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, চশমা পরিধান করা এবং একই সাথে তিন ফিট দূরত্ব নিশ্চিত করা সবার মাঝে। সবথেকে সতর্কতামূলক কাজ যেটি আমাদেরকে সবসময়ই পালন করতে হবে সেটি হচ্ছে, হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। আমরা প্রত্যেকেই যদি স্বাস্থ্যবিধি গুলো ঠিকমতো মেনে চলি এবং আমাদের জীবনের একটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এই স্বাস্থ্যবিধি গুলোকে জায়গা করে দিতে পারি, তাহলে আশা করি করোনা মোকাবেলায় আমাদের জয়গান নিশ্চিত হবে একদিন ইনশাল্লাহ। আমরাও আশার আলো দেখব।
করোনার কারণে আমদানি ব্যয় কমে গেছে। আবার রপ্তানি আয়ও কম। তবে প্রবাসী আয় আসছে, সঙ্গে ঋণ ও অনুদানও। এ কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। তবে এটা কত দিন ধরে রাখা যাবে, তা নির্ভর করছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় আসার ওপর। কারণ, দেশের অর্থনীতি সচল করতে আমদানি বাড়াতেই হবে। দেশের এই বর্তমান সংকট কালে আমদানির - রপ্তানির এই কার্যক্রম সর্বক্ষণ সচল রাখা ও অনেকটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে খরচ হবে ডলার। যা ব্যয় হবে রিজার্ভ থেকেই।
কোভিড-১৯ বিশ্বকে করেছে স্থবির, জীবনযাত্রাকে করেছে দুর্বিষহ। প্রত্যেকটি মুহূর্তই সবার জন্য হয়ে উঠেছে আতঙ্কের।মানুষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। দুশ্চিন্তায় প্রতিটা মুহূর্ত মানুষকে আরো বিষিয়ে তুলেছে। বিষণ্নতার ছাপ প্রতি ঘরে ঘরে। কোথাও কেউ নেই, এরকম একটি শূন্যতার হাহাকার বিরাজ করছে প্রত্যেকটি কমিউনিটি এরিয়া গুলোতে। মানুষ চাইলেই এখন জমিয়ে আড্ডা দিতে পারেনা , পারেনা তার সুখ- দুঃখ গুলো ভাগাভাগি করতে সবার সাথে। এ কেমন স্থবিরতা? মহান আল্লাহতালার কাছে প্রার্থনার হাতগুলো চেয়ে আছে প্রতিটা মুহূর্তেই, একটি স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশায়, সহজ সরল জীবনের প্রতিচ্ছবি ফিরে পেতে চাই সবাই। সবাই চাই পৃথিবীটা আবার সুস্থ হয়ে উঠুক, বুক ভরে যেন নিঃশ্বাস নিতে পারে এই অঙ্গীকার সবার মধ্যেই এখন বিরাজমান কিন্তু করোনা ভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাব যেন কোনোভাবেই থামছে না।
করোনার এই সংকটকালে বেঁচে থাকতে হলে একদিন ও সচেতনতার কোনো বিকল্প পথ আর নেই, অফিস-আদালত, কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে, ওষুধের দোকান, বাড়ির উঠান/ আঙ্গিনা সর্বোপরি আমাদের প্রত্যেককে হতে হবে অনেক বেশি সচেতন। বর্তমানে সংগ্রামী এই জীবনে লাভ লোকসানের হিসাব ভুলে একটাই চিন্তা নিশ্চিত করতে হবে : যেন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারি, পরিবার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে যেন পাড়ি দিতে পারি আরো অনেকটা বছর।
করোনাভাইরাসের মতো জীবানু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য যেসব উপাদান দরকার, বাংলাদশে সেগুলো পর্যাপ্ত নেই। তারপর ও প্রতিনিয়ত ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় একসাথে কাজ করে যাচ্ছে, বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় অবস্থিত প্রতিটি হাসপাতালেই যেন আই সি ইউ নিশ্চিত করা হয় এ বিষয়ে অলরেডি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় একযোগে কাজ করছে এবং আমাদের দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে ডাক্তার, নার্স, পুলিশ , প্রশাসন, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা করোনা মোকাবেলায় তাদের সমস্ত কার্যক্রম বহাল রেখেছে।
লেখক: চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।