১৫ মে ২০২০, ১৯:২১

করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা কী?

  © টিডিসি ফটো

বাসায় বন্দিজীবনে আছি আজ দেড় মাসের বেশি সময় ধরে। অফিসের কাজ বাসা থেকে করছি। বাকি সময় বই পড়ছি, লিখছি। আমার আড়াই বছর বয়সী ছেলের সাথে ‘পড়া পড়া’ খেলা হচ্ছে। কিন্তু ভালো লাগছে না কিছুই; সময় যাচ্ছে উদ্বিগ্নতায়, সীমাহীন দুর্ভাবনার ভেতর দিয়ে।

সারা পৃথিবীজুড়ে সংক্রামক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পরিসংখ্যানে প্রতিদিন আরও নতুন সংখ্যা যোগ হচ্ছে। সবাই করোনার ভয়ে আজ অবরুদ্ধ। ভেঙে পড়েছে জীবনযাপনের সভ্য সকল আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে অনলাইন ছাড়া অন্য সবরকম যোগাযাগও প্রায় বন্ধ। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যাওয়া দূরের কথা, পাশের বাড়িতেও আসা-যাওয়া এখন নিষেধ। সব মিলিয়ে ভয়াবহ এক অনিশ্চয়তায় বিশ্বজুড়ে থমকে গেছে সবার জীবন।

করোনার বিস্তার রোধে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত এবং প্রায় সব শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে বেশিরভাগ দেশে। কার্যত সারা পৃথিবীর শিক্ষাব্যবস্থাই এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিষয়ক নানা পরিকল্পনার কথা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছি। কিন্তু করোনার এই সময়ে শিক্ষা নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে না।

অনেকেই হয়তো ভাবছেন, জীবন বাঁচানোর কার্যক্রম যেখানে পর্যাপ্ত নয়, সেখানে শিক্ষা নিয়ে কথা বলা কতোটা স্বাভাবিক? কিন্তু আসল ব্যাপার হলো, শিক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে জীবন বাঁচানোর জন্যই। শিক্ষাকে অবহেলা করে আমরা আগামীর করোনামুক্ত পৃথিবীতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবো না, কখনোই না। সুতরাং শিক্ষা নিয়ে আমাদের সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক।

গত ২৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতি বুঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হতে পারে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখলে শিক্ষা কার্যক্রম কিভাবে চলবে, সেটি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে জানানো হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের।

এ কারণে কার্যত তারা পড়াশোনা থেকে দূরে থাকছে অনেক ক্ষেত্রেই। সেক্ষেত্রে সিলেবাস সীমিত করে তাদের অল্পদিন পাঠদানের পর পরীক্ষা আয়োজন করা যাবে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলাপ করে জেনেছি, তাদের কোনো গাইডলাইন নেই।

আর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকলে ডিসেম্বরে একটি মাত্র মূল্যায়ণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে উন্নীত করার ব্যবস্থা নেয়া যাবে হয়তো; কিন্তু করোনা যদি আরও সময় ধরে থাকে? তাহলে কী হবে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম? সেই পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষার নীতি নির্ধারকেরা কিছু কি ভাবছেন? কারণ করোনা নামের এই ভাইরাস দীর্ঘদিন পৃথিবীতে থাকতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কোভিড-১৯ এখন বিশ্বের আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়ার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারিতে বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ আক্রান্ত হয়েছিল। সেই সময় প্রথম ধাপে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে স্প্যানিশ ফ্লুর আক্রমণ মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আর করোনাভাইরাসের স্বভাব অনেকটা স্প্যানিশ ফ্লুর মতো মনে করছেন বিশেজ্ঞরা।

খবরে পড়েছি, মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক রবার্ট রেডফিল্ড দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘আগামী শীত মৌসুমে ভাইরাসটির আক্রমণ আরও বেশি কঠিন হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে।’ তার মানে এটি লম্বা সময় ধরে থাকার এবং পরবর্তী ধাপে পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষাপঞ্জিকা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। শিক্ষার পুরো সিলেবাস, ক্লাস, পরীক্ষা এবং সব ধরনের মূল্যায়ণ কার্যক্রম কীভাবে হতে পারে তা নিয়ে এখন থেকেই চিন্তা করতে হবে। সেই বিষয়গুলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার করে জানাতে ও বুঝাতে হবে। এর কারণ বুঝতে হলে ওয়ার্ল্ড ভিশনের এক জরিপে আপনাকে চোখ বুলাতে হবে।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন তাদের করা একটি জরিপ প্রকাশ করেছে। ‘চিলড্রেন ভয়েসেস ইন দ্য টাইম অব কোভিড-১৯’ শিরোনামে প্রকাশিত এই জরিপে বলা হয়, মহামারির সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতনের জন্য সরাসরি তিনটি কারণকে উল্লেখ করেছে শিশুকিশোররা। সেগুলো হলো শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া, সামাজিক দূরত্বের কারণে মানসিক চাপ এবং পরিবারে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া।

শতকরা ৭১ ভাগ শিশু ও তরুণ বলেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে তারা নিজেদের শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তিত। তারা বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ অনুভব করছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন তেরোটি উন্নয়নশীল দেশে এই জরিপ চালিয়েছে। দীর্ঘদিন এমন থাকলে শিশুকিশোরদের দ্বিধা, ভয় ও হতাশা আরও বাড়বে। এর থেকে সরে আসতে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত রাখতে হবে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার কারণে অন্তত চারটি পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। এর মধ্যে স্থগিত রাখা হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। আবার আগামী নভেম্বরে নির্ধারিত পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির দুটি সমাপনী কবে হবে সেটি নিয়েও শিক্ষার্থীরা অনিশ্চিত। ফলে তাদের পড়াশোনা হচ্ছে না। আবার সব পিছিয়ে গেলে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষাও পিছয়ে যাবে এমনটা মনে করছে অনেকে। এখন পর্যন্ত প্রকাশ হয়নি এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফল।

আর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির দুই সমাপনী পরীক্ষা সময়মতো নেয়া হলে কাটছাঁট করতে হবে সিলেবাস। নইলে শিক্ষার্থীরা চাপে পড়বে। সেই সীমিত সিলেবাসের আকার কেমন হতে পারে তা নিয়েও আগে থেকে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।

পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে বলা যায়, আগামী জেএসসি, প্রাথমিক সমাপনী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি ও আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার কী হবে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডগুলো এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। অবশ্য তা পারার কথাও নয়। কেননা পাঠদান ও অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন যদি বন্ধ থাকে, তাহলে পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

এবার নিউইয়র্ক সিটির বিদ্যালয়গুলো আবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার যে পরিকল্পনা তারা নিয়েছে সেটা একটু বলি। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্যাজিও সেপ্টেম্বর ২০২০ নাগাদ আবার বিদ্যালয় শুরুর জন্য পাঁচটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এর আগে তিনি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরুর আগ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেন। মেয়র শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে শিক্ষা প্রদান করা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের শিক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রদান করা এবং আগামী গ্রীষ্মের ছুটির পর যথাসময়ে আবার কার্যক্রম শুরু করা, প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে বাসায় দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় স্টেশনারি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি এপ্রিল মাসের মধ্যে সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছেন।

পাশাপাশি তিনি বাসায় বসে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য সহযোগিতার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করার কথা বলেছেন।

মেয়র বলেন, ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী এক বিদ্যালয় শেষ করে অন্য বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হবে। তারা যাতে এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে তিনি পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন এক গ্রেডিং পলিসি ব্যক্ত করেন। সেখানে অষ্টম ও টুয়েলভথে যে শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে ব্যর্থ হবে তারা গ্রীষ্মকালীন সেশনে তা শেষ করতে পারবে। ইলিমেন্টারি ও মিডল স্কুল শিক্ষার্থীদের বেলায় ‘মিট স্ট্যান্ডার্ড’ ও ‘নিড ইমপ্রুভমেন্ট’ এই ভিত্তিতে গ্রেড নির্ধারণ করা হবে।

তবে, হাইস্কুল শিক্ষার্থীরা স্ট্যান্ডার্ড গ্রেডিং পাবে কিন্তু তাদের ক্লাস ‘পাস’ কিংবা ‘ফেল’ ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। এর অর্থ হচ্ছে, এতে তাদের গ্রেড জিপিএর ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। আমাদের দেশ আমেরিকা নয়। কিন্তু পরিকল্পনা প্রকাশ করা হলে শিক্ষার্থীরা আশ্বস্থ হবে। আর এতে তাদের মানসিক চাপ কমবে। তারা পড়াশোনায় আরও মনোযোগ দেবে।

আমাদের দেশেও যথাযথ সময়ে করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংসদ টিভিতে সীমিত আকারে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠদান চলছে মাসখানেক ধরে। কেবল এটিতে আসলে ক্ষতি কাটবে না। অবশ্য অনেকেই টিভিতে ক্লাসের এই ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

আবার কেউ কেউ বলছেন, যাদের টিভি নেই বা টিভি থাকলেও ডিশলাইন নেই তারা দেখবে কীভাবে? আবার ডিশলাইন থাকলেও অনেকের এলাকায় সংসদ টিভি দেখা যায় না। ব্র্যাক শিক্ষাকর্মীদের করা এক হিসেবে দেখা যায়, সংসদ টিভির ক্লাস গড়ে চল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশ শতাংশ শিক্ষার্থী দেখছে। কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই সংসদ টিভি দেখা যায় না।

তাদের ভাষ্যমতে, এই ক্লাসগুলো যদি বিটিভির মাধ্যমে দেখানো যেতো, তাহলে আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারত। আবার কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ থাকে না। ফেসবুক ও ইউিটিউবে এই পাঠগুলো পাওয়া গেলেও প্রত্যন্ত এলাকায় নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে অনেকে তা চাইলেও দেখতে পারে না। আর তারচেয়ে বড় কথা আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পরিবার দরিদ্র। কার্যত এইসব ব্যবস্থা তাদের তেমন কাজে আসবে না। কেননা দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর বড় একটি অংশ টিভি, ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের মাধ্যমে পাঠদানের সুবিধা নিতে পারবে না।

করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষাই আমাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আর শিক্ষার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত বিশ্বে এখন দূরশিক্ষণ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি ইরানেও অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে প্রধানত জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইরানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘শাদ’ নামে একটি লার্নিং অ্যাপ চালু করেছে।

এ অ্যাপে সব শিক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বলা হয়েছে, যাতে তারা অনলাইনে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া গুগল ক্লাসরুম, গুগল হ্যাংসআউট, স্কাইপ, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে সহজেই শ্রেণিকার্যক্রম চালানো যায়। দূরশিক্ষণের আওতায় অসংখ্য শিক্ষাবিষয়ক অ্যাপস আবিস্কৃত হয়েছে, যা দিয়ে খুব সহজে লকডাউনে থেকেও বাড়িতে বসে শিক্ষাপ্রদান ও গ্রহণ করা যায়। অন্তত শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীরা এ সুবিধার আওতায় আসতে পারে।

আর আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবার অনেক। সেসব পরিবারের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই সরকারকে পুরো পরিকল্পনা সাজাতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় সরকার, শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, টেলিকম এজেন্সি, সুশীল সমাজ এবং এনজিওগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। দেশে যার যে দক্ষতা আছে, এই সময়ে সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। যেমন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালযের দুরশিক্ষণের প্রযুক্তি রয়েছে। এই সময়েই এটি আমরা কাজে লাগাতে পারি।

করোনার থাবায় আমাদের দেশে ও পুরো বিশ্বে বর্তমানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, আমরা তা কল্পনাও করিনি। কেউ আগে থেকে তা জানিও না। তাই সমস্যা মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সম্মিলিত চিন্তা নিয়ে। দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী অনেক। সরকারের পক্ষেই কেবল সম্ভব এদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেই জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।

আমরা জানি, এদেশে বহু অনুৎপাদনশীল খাতে, অযথা রাষ্ট্রীয় সম্পদ অনেক সময় ব্যয় করা হয়। অথচ সেগুলোর কোনো প্রয়োজনই নেই। তাই জরুরি এই খাতে সরকার যেন পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে ব্যবস্থা করে দেয়, তা আমরা চাই। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহামারি বাঁ জরুরি অবস্থার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, যতো বেশি সময় শিশুরা বিদ্যালয় থেকে দূরে থাকে, তাদের বিদ্যালয়ে ফেরার সম্ভাবনা ততোটাই কমে যায়। করোনায় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এ অবস্থা আমরা কোনোভাবেই চাই না। তাই করোনাকালে শিশুদের লেখাপড়া যাতে ঠিক মতো চলে, তার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাজেট দিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: তরুণ কবি ও কলামিস্ট