১৫ মে ২০২০, ১১:১৯

অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া যায় কীভাবে?

  © সংগৃহীত

অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্ট নেয়াটা আলাদা কিছু না। সমস্যাটা বাধে পরীক্ষা নেয়ার জন্য। কোর্সে যদি মিডটার্ম বা ফাইনাল পরীক্ষা থাকে যেটা আগে ক্লাসে বসে নেয়া হত, সেটা অনলাইনে নিতে গেলেই জটিলতার সৃষ্টি হয়।

ক্লাসে বসে পরীক্ষা নেয়ার সময়ে শিক্ষক দেখতে পাচ্ছেন সবাইকে, তাই অসদুপায় অবলম্বন করার প্রবণতা বন্ধ করা যায়। কিন্তু অনলাইনে যদি সময় বেঁধেও দেয়া হয়, তাহলেও শিক্ষক তো আর ছাত্রকে দেখতে পাচ্ছেন না। কাজেই শিক্ষার্থী যে গুগল সার্চ করে বা বই খুলে বা অন্য কারো সাথে ফোনে চ্যাটে বা সরাসরি কথা বলে উত্তর বের করে ফেলছে না, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তাহলে উপায় কী?

দেখা যাক কয়েকটি পদ্ধতি—

১) প্রক্টরিং-ভিত্তিক পরীক্ষা- এই পদ্ধতিতে অনলাইনে একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রশ্ন দেয়া হবে। পরীক্ষার জন্য যতটা সময় পেত ছাত্ররা, ধরা যাক ১ ঘণ্টা বা ৩ ঘণ্টা, সেটুকু সময়ই দেয়া হবে। সমাধান করতে হবে কম্পিউটারে। কিন্তু এই পুরো সময়টা পরীক্ষার্থীকে ওয়েবক্যামে নজরে রাখবেন একজন প্রক্টর বা গার্ড। এবং পরীক্ষার্থীর কম্পিউটারে কী করা হচ্ছে, তাও নিয়ন্ত্রণ করা হবে সফটওয়ারের মাধ্যমে।

আমার বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম এ এই অপশনটি আছে। প্রক্টরিং এর জন্য ProctorU নামের একটি কোম্পানির সাথে আমাদের কনট্রাক্ট আছে। কিন্তু এটা ব্যয়বহুল। ছাত্ররা অনলাইন ক্লাসের জন্য যা ফী দেয়, সেটা থেকে এই প্রক্টরইউ নামের কোম্পানির ফী দেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই রকম ফী দেয়া সম্ভব না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশী স্টার্টাপদের একটা সুযোগ আছে, এই রকম প্রক্টরিং কোম্পানি বাংলাদেশেই শুরু করার।

প্রক্টরিং পদ্ধতির সুবিধা হল প্রথাগত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রকে বেশি পাল্টাতে হয় না। কাজেই শিক্ষকেরা যাতে অভ্যস্ত সেভাবেই প্রশ্ন করেন। শিক্ষার্থীদের জন্যও নতুন কোন সিস্টেম শেখার দরকার নাই।

কিন্তু কিছু সমস্যাও আছে। সমস্যাটা হল অনেক সময়েই শিক্ষার্থীরা খুব অস্বস্তিতে থাকে, কারণ কয়েক ঘণ্টা ধরে অপরিচিত একটা মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে এটা বেশ অস্বস্তির ব্যাপার। তার উপরে পুরো ঘরে কী আছে তা ক্যামেরা দিয়ে দেখাতে হয়। এসবের কারণে আমার ক্লাসের শিক্ষার্থীরাই আমাকে বলেছে, তারা এই পদ্ধতিটা চায় না।

২) টেইক হোম এক্সাম- এই পদ্ধতিতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের দিয়ে একটু লম্বা সময় দেয়া হয়, হয়তো ১ দিন বা ২ দিন। এবং শিক্ষার্থীরা বই নোট অনলাইন সহ যে কোন কিছু দেখে পরীক্ষা দিতে পারবে, সেটা বলে দেয়া হয়।

(বই দেখতে পারবে? পরীক্ষকের মাথা খারাপ নাকি? এই কথা ভেবে ইয়াহু বলে লাফাবার আগে একটু পড়েন নিচে)

যেহেতু শিক্ষার্থী কী করছে তা নজরদারী করা হয় না, সেজন্য প্রশ্নটাকেই এমনভাবে বানানো হয়, যাতে করে সরাসরি এর উত্তর কোনখান থেকে কপি পেস্ট করা সম্ভব না।

যেমন মান্ধাতার আমলের উপপাদ্য মুখস্ত লেখা মার্কা প্রশ্নের বদলে বাস্তব জীবনে সেটা প্রয়োগ করে একটা সমস্যার সমাধান করার প্রশ্ন দেয়া যেতে পারে গণিতে। মোট কথা, প্রশ্ন এমন হতে হবে যাতে করে শিক্ষার্থী কোর্সে শেখা জ্ঞান দিয়ে চিন্তা ভাবনা করে প্রায়োগিক একটি সমাধান লিখে উত্তর হিসাবে।

এই পদ্ধতিতে অনলাইনে সার্চ করে কপি পেস্ট করা বা বই থেকে কপি করা বন্ধ করা গেল, কিন্তু আরেকটা সমস্যা থাকে, তা হল কয়েকজন মিলে একসাথে প্রবলেম সল্ভ করে জমা দিতে পারে। তা এড়াবার উপায় হল প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আলাদা প্রশ্ন দেয়া। ধরা যাক গণিতের একটি সমস্যা, সেখানে সংখ্যাগুলো পাল্টে দেয়া যায়। অথবা শিক্ষার্থীর নামের উপরে ভিত্তি করে কোন সেট সলভ করতে হবে তা বলা যায় অথবা নাম থেকে ইনপুট নিয়ে প্রশ্নটি হবে সেভাবে সেট করা যায়।

এই পদ্ধতিতে শিক্ষকের কাজ অনেক বেশি। কারণ এমনভাবে প্রশ্ন সেট করতে হবে যাতে করে শিক্ষার্থীরা চিন্তাভাবনা করে প্রশ্নের জবাব বের করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সুবিধা হল নজরদারীর ব্যাপার থাকে না, প্রাইভেসি ভঙ্গেরও সম্ভাবনা নাই।

৩) অনলাইন অটোমেশন- প্রথমে বলা পদ্ধতির আরেকটা ভ্যারিয়েশন হল সময় কম দিয়ে দ্রুত পরীক্ষা নেয়া যাতে করে শিক্ষার্থীরা কোন জায়গা থেকে কপি করার সুযোগই না পায়। সেজন্য মূলত এমসিকিউ ধরণের প্রশ্ন কাজে আসে। যদি প্রশ্ন প্রতি ১ মিনিটের কম সময় দেয়া হয়, তাহলে এই অল্প সময়ে কারো পক্ষে সার্চ করে প্রশ্নের জবাব বের করা কঠিন।

উপরের তিনটি পদ্ধতি ছাড়াও আরো কিছু উপায়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া যায়। আশা করি, শিক্ষকেরা এগুলোর মাধ্যমে এবং শিক্ষার্থীদের নানা সুবিধা অসুবিধার কথা মাথায় রেখে তাদের অনলাইন কোর্সের পরীক্ষার পদ্ধতি নির্বাচন করবেন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহাম, যুক্তরাষ্ট্র