অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা পূর্বশর্ত
অনলাইন অথবা অফলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অবধারিত। এতে শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরন পূর্ব শর্ত। করোনার গতি এ যুগের মানবজাতির গতিকে পিছে ফেলে আলোর গতিতে ছুটে চলছে।অপরদিকে মানবজাতির চলন গতি এখন ‘শূন্য’। করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার বা সঠিক চিকিৎসা কবে নাগাদ আসবে এটা কেও না জানলেও সহজেই অনুমান করা যায়- বিশ্ব এ অবস্থায় থাকবে আরো কয়েক বছর। অথবা খুব সহজে করোনাকে দু’এক বছরের মধ্যে বিশ্ব থেকে ঘোষনা দিয়ে তাড়ানো সম্ভব না।
এ থেকে নিরাপদ থাকার একমাত্র মাধ্যম যেমন জনসমাগম থেকে নিজেকে দূরে রেখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাঝে নিজেকে আগলে রাখা, ঠিক অপরদিকে এভাবে লকডাউন বা নিজেদেরকে অবরুদ্ধ অবস্থায় রেখে বিশ্ব চলতে থাকলে অর্থনীতি-সমাজনীতি-রাজনীতি সবকিছুর ধ্বস নিশ্চিত।বিশ্ববাসীকে এই করোনা মোকাবেলায় করোনার সাথে তাল মিলিয়েই ধীরে ধীরে সচল করা প্রয়োজন।
মানবজাতির অভিযোজন ক্ষমতা সবথেকে বেশি।বিশ্ববাসী করোনায় আচ্ছন্ন এ পরিবেশে ধীরে ধীরে অভিযোজিত হয়ে বিশ্বকে সচল করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। আর এরই ধারাবাহিকতায় কয়েকদিন পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু করার ব্যাপারে ‘জুম অ্যাপ’ ভিডিও কনফারেন্সে ডিন এবং সকল বিভাগের চেয়ারম্যানদের সাথে আলোচনা করার আদেশ দেন এ অনলাইন ক্লাসের সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য।
এরই মাঝে শিক্ষামন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী অনলাইন ক্লাস নিতে দেশের সকল সরকারি ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজকে বাধ্যতামূলক আদেশ জারি করেছেন। যেহেতু দেশের সকল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অবধারিত বলেই আমার মতামত।
তবে বিশ্বের অথবা যুগের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমাদের শতকরা ৬০-৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে বাকি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তি মানুষের মৌলিক অধিকারকে সরাসরি ক্ষুন্ন করবে। আর এ অবস্থা একজন সচেতন শিক্ষার্থী যার সকল সুযোগ-সুবিধা আছে অনলাইন ক্লাস করার, সেও এ ধরনের কার্যক্রমে পাবে না।
কেননা, সমপরিমান বেতন -প্রায় সমযোগ্যতার ভিত্তিতে তারা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী হয়েছে।প্রকৃতপক্ষে,অনলাইন ক্লাস করতে প্রয়োজন মোবাইল, ল্যাপটপের মতন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস আর সাথে যেটা বাধ্যতামূলক সেটা হলো ইন্টারনেট। বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের ইন্টারনেটের গতির যে অবস্থা সেটা না হয় বাদই দিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব স্বল্প সেমিস্টার ফিস দিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়।
অধিকাংশ শিক্ষার্থী অর্থের অভাব ঘোচাতে হলগুলোতে ছারপোকার কামড়, রাজনৈতিক নির্যাতন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে বাধ্য হয়: যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে উঠে আসা আর লকডাউনে গ্রামে অবস্থান করছে; প্রয়োজনীয় ডিভাইসের অভাব রয়েছে; মেগাবাইট চড়া মূল্যে কিনতে অক্ষম, তাদের সাথে এই ‘অনলাইন ক্লাস’ বাধ্যতামূলক করার আদেশ শুধু আষাঢ়ে গল্প ছাড়া কিছুই নয়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই শতভাগ শিক্ষার্থীকে ‘অনলাইন ক্লাসে’ অংশগ্রহণ কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটার জন্য প্রথমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কীভাবে কোন ফ্রি ওয়েবসাইট যেখানে শুধু ডিভাইস থাকলেই ফ্রি তথা মেগাবাইট ছাড়া প্রবেশ সম্ভব ও টুজি বা থ্রিজি নেটওয়ার্কেও কীভাবে এ পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যায়। এছাড়াও টিভিতে বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বা রেডিও চ্যানেলগুলোতে এ কার্যক্রম কীভাবে চালালে শতভাগ এ্যাক্সেস সম্ভব অথবা অফলাইনে এই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধে একটি সেমিস্টার যেন শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য বিভিন্ন বুক রিভিউ বা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যায় সে ব্যাপারে বিশিষ্টজনদের বা গবেষকদের নিয়ে সুপরিকল্পনা করতে হবে। তবেই এ অনলাইন ক্লাস শুরুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আর কোন সুব্যবস্থাপনা ব্যতীত যদি এ কার্যক্রম শুরু করে দেয়া হয়, তবে আওতার বাইরে থেকে যাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। গ্রামে যারা রয়েছে, আর্থিক দৈন্যতায় যারা জর্জরিত, কিন্তু মেধার জোরে যাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন, তাদেরকে বাদ রেখে যদি অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু করা হয় তাহলে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’-আর সকল যোগ্য মেধাবীদের নাগালে থাকবে না। পুঁজিবাদী সমাজের ‘শিক্ষা’ যে পণ্য তা প্রমাণে ঢাবি হবে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাই আবারো বলছি- ‘অনলাইন/অফলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অবধারিত : শতভাগ এ্যাক্সেস নিশ্চিতকরন পূর্ব শর্ত।’
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়