করোনা সঙ্কটে কী হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের?
দেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তালিকাভুক্ত ও অনুমোদনপ্রাপ্ত মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৫টি ৷ বর্তমান করোনা পরিস্থিতি এবং আক্রন্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে চলছে৷ সেই সাথে দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এদিকে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে টিউশন ফি না পাওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়েছে মহা বিপাকে৷
কেননা এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে কর্মরত রয়েছে লাখো শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ৷ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত মাসিক বেতন ছাড়া এখানকার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়ের অন্য কোনও পথ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোন আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী মানবেতর জীবন কাটানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা৷
গত ২৭ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে এক ভিডিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। হয়তো বন্ধই থাকবে। করোনার ক্রমবর্ধমান গতি দেখে তা-ই মনে হচ্ছে। সরকারের দৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়তে কোনো প্রভাব ফেলে না। তাই, ঝুঁকি না নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের কী হবে? কিভাবে তাদের সামনের দিনগুলো অতিবাহিত হবে এটাও একটু ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের৷ সরকারি ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা না হয় নিয়মিত বেতন-ভাতা পাবেন। কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন কিংবা সরকারি কোনো সুবিধা গ্রহণ করেনা বা পায়না, এসকল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়৷ এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত লাখো শিক্ষক-কর্মচারী৷ আগামী ছয় মাস তাদের সংসার চালাবে কীভাবে?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর লাখো শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন নির্ভর করে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা বেতন দেবে না, এটাই স্বাভাবিক। ফলে, ইচ্ছে থাকা সত্তেও প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না। তাহলে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাবেন কীভাবে?
ধারে নিলাম ধার দেনা করে, খেয়ে না খেয়ে, বাড়িভাড়া বকেয়া রেখে না হয় সংসারটা কোনরকম চললো। কিন্তু প্রতিষ্ঠান খোলার পর কি তাঁদের সমস্যা লাঘব হবে? বকেয়া বেতন কি তাঁরা এক সাথে পাবেন? যদি না পান, তাহলে তাঁরা তাঁদের বাড়িভাড়া ও পূর্বঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে?
যেভাবে করোনা পরিস্থতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে তাতে সবকছু আগের মতো স্বাভাবিক হতে আরো হয়তো ২-৪ মাস লেগে যেতে পারে। তার পরেও যদি অক্টোবরের ১ তারিখেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলো। তখন কয়জন শিক্ষার্থী এক সাথে ছয় মাসের বেতন দিতে পারবে? সরকারি চাকরিজীবী ও উচ্চ বিত্তের সন্তানরা হয়তো বেতনটা পরিশোধ করতে পারবে। যারা প্রবাসী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী, দরিদ্র, হকার, শ্রমিক, ড্রাইভার-তারা? তাদের সন্তানরা কি এক সাথে ছয় মাসের বেতন দেয়ার সামর্থ্য তখন থাকবে৷
দীর্ঘ সময় ধরে করোনা ভাইরাসের নির্মম থাবার পর বিশ্বের মতো বাংলাদেশের চিত্রও বদলাবে। ঋণে জর্জরিত থাকবে বেশিরভাগ মানুষ। দেশে থাকবে অর্থনৈতিক সংকট। লক্ষ লক্ষ কর্মহীন মানুষ ছুটবে বুক ভরা হতাশা নিয়ে। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস উঠবে মানুষের। দেশজুড়ে থাকবে এক অস্থির পরিস্থিতি। এই অবস্থায় কয়জন শিক্ষার্থী একদিনও ক্লাস না করে ছয় মাসের বেতন দিয়ে দেবে৷
মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। আর, এই শিক্ষার একমাত্র কারিগর হলেন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এদের বাঁচিয়ে না রাখলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নাজুক অবস্থায় পড়বে।
তাই, উপর্যুক্ত বিষয়গুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রাখার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়