অবহেলিত সুস্বাদু গাবের পুষ্টিগুণ

  © টিডিসি ফটো

গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে উঠা সকলের কাছে গাব একটি পরিচিত দেশজ ফল। অ্যাপেল আকৃতির কাঁচা গাব সবুজ রংয়ের, আর পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। সবুজ পাতা সম্বলিত গাব গাছ সর্বোচ্চ ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বাড়ীর চারপাশে এবং পুকুর পাড়ে গাব গাছের বেড়ে উঠা। বিলেতি গাব হিসেবে পরিচিত আরেক প্রজাতির গাব বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই আছে। বিলাতি গাব খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় সকলেই ভালো জাতের ফলের গাছের মতো যত্ম সহকারে বাড়ীর উঠানের পাশে সহ নিরাপত্তাবেশিষ্ট জায়গার মধ্যে রোপন করেন। দেশি গাবের আদি নিবাস আমাদের দক্ষিণ এশিয়াতেই। আর বিলাতি গাবের আদি নিবাস ফিলিপাইন। বিলাতি গাব পাকলে গাঢ় লাল রংয়ের হয়। দেশি গাবের তুলনায় বিলাতি গাব খেতে বেশ সুস্বাদু।

গ্রামের ছেলেরা শৈশব-কৈশোরে পাকা গাব খাওয়ার জন্য পুকুর পাড়ে, বাড়ীর চারপাশে থাকা গাব গাছে চষে বেড়ানো নিত্যদিনের চিত্র। দেশি গাব খাওয়া কিংবা ফল হিসেবে বিক্রি করার তেমন প্রচলন না থাকায় ছোট ছোট ছেলেরা পাকা গাব খাওয়ার লড়াইয়ে মত্ত হয়। আমাদের শৈশবের অনেকটা সময় জুড়ে দেশি গাব ছিলো বিনা মূল্যে পাওয়া একটি ফল। দেশি গাবের ঘন সবুজ পাতার কারনে পুরো গাছটি অন্ধকার হয়ে থাকায় দস্যিপনায় মেতে থাকা ছেলেরা ব্যতীত অন্যান্যরা তেমন একটা গাব গাছে উঠে না ভয়ে। অপরদিকে বিলাতি গাবের বেশ কদর সব জায়গাতেই। ভালো জাতের ফলের মতো বিলাতি গাব গাছের পরিচর্যা করা হয়। নিজেরা খাওয়া সহ বাজারে বিক্রিও করেন অনেকে। বর্তমানে শহর এলাকায়ও ভ্যানগাড়ীতে করে কিংবা ফলের দোকানগুলোতে বিলাতি গাব বিক্রি করতে দেখা যায়। দেশি পাকা গাবও বিক্রি করেন অনেকে।

দেশি গাবের নানামুখী ব্যবহার। কাঁচা অবস্থায় গাবের রস মাছ ধরার জালকে মজবুত করার জন্য ব্যবহার করা হয়। সেই সাথে নৌকায় মাখানো সহ কালো কাপড়ও দেশি গাবের রস মাখা হয়। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কাচা ও পাকা গাব উপকারী। গাবে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা সর্দি, জ্বর, কফ-কাশি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। গাব শারীরিক দুর্বলতা কমায়, হাড়কে মজবুত করে। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও গাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাবের পাতা সিদ্ধ করা কাথ চর্মরোগ সারাতে ভূমিকা রাখে। হজমে সহায়ক, রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায়। এছাড়াও গাব গাছের ছাল আমাশায় ও পেটের অসুখের জন্য বেশ কার্যকরী। আয়ুবের্দিক চিকিৎসক ও গবেষকরা গাবের সুষ্টু ব্যবহারের মাধ্যমে ঔষধ উপযোগী করে চিকিৎসা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

গাব গাছ ফল উপযোগী হওয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এবং গাবের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনে গাব গাছের যথাযথ পরিচর্যা ও চাষ করা হয় না। অথচ একাধিক রোগের জন্য কার্যকরী এই ফলটি খেতে সুস্বাদু হওয়া সহ দেশি কাঁচা গাবের বহুবিধ ব্যবহার মিলিয়ে গাব অত্যন্ত উপকারী ও প্রয়োজনীয় একটি ফল। বিলাতি গাব গাছ অনেকেই নতুন করে রোপন এবং কোন কোন অঞ্চলে বাগান করলেও দেশি গাব গাছের চাষ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। যাদের বাড়ীতে পুরনো গাছ আছে সেগুলো থাকা ব্যতীত নতুন করে চারা গজানোর পর একটু বড় হলেই কেটে ফেলে দেন অনেকে।

গাব গাছ চাষের জন্য নির্দিষ্ট কোন মাটি ও পরিবেশের দরকার হয় না। সব মাটিতেই গাব গাছ চাষ করা যায়। বিলাতী গাব উর্বর মাটিতে কিছুটা ভালো হয়। তবে দুই প্রজাতির গাব গাছের জন্যই তেমন যত্মের প্রয়োজন হয় না, চারা গাছ গবাদী পশু খেয়ে ফেলা কিংবা কেউ যেনো গাছ কেটে ফেলতে বা চারা গাছ ভেঙ্গে ফেলতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখা ছাড়া। ৮ বছর থেকেই গাব গাছ ফলন দেয়া শুরু করে। কেটে না ফেললে দীর্ঘদিন ফল দেয় গাব গাছ। বর্ষা শুরুর পরপরই গাব পেকে যায়, মৌসুম থাকে সর্বোচ্চ দেড় মাসের মতো।

তুলনামুলক দেশি গাবের তুলনায় বিলাতি গাবের মূল্যায়ণ বেশি হলেও দেশি গাবের পুষ্টিগুণ, ভেষজ চিকিৎসা কাজে ব্যবহার, পাকা গাব খাওয়া এবং কাঁচা গাবের রস জাল, নৌকা ও কালো কাপড়ে ব্যবহারের মাধ্যমে মজবুত করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। যাদের অনাবাদি পতিত জমি আছে এবং বাড়ীর চারপাশে পতিত জমি আছে, তারা গাব গাছ চাষ করতে পারেন। পাকা গাব শহরে বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়। এছাড়াও কাঁচা গাবের বহুবিধ ব্যবহার সহ সুস্বাদু পাকা গাব নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকার সহায়ক হতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)


সর্বশেষ সংবাদ