২৬ এপ্রিল ২০২০, ১১:৪০

করোনাভাইরাস: উচ্চশিক্ষাতেও পড়বে বড় প্রভাব

  © ফাইল ফটো

অদৃশ্য এক শত্রুর হাতে জিম্মি আজ সারা বিশ্ব। খুদে এই করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে বিশ্বের সব দেশ আর সব মানুষ লকডাউনে আটকা পড়ে আছে। সারা পৃথিবীর শিক্ষাব্যবস্থাই একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।

স্থানীয় শিক্ষার্থীরা না হয় বাড়ি চলে যেতে পেরেছেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা? তাঁরা পড়েছেন দুরবস্থায়। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে এখন লকডাউন চলছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা পরিবার–পরিজনবিহীনভাবে আটকে আছেন ঘরে। আবার যাঁদের পড়ার ফান্ডিং বা বৃত্তি নেই, তাঁরা খণ্ডকালীন কাজ করে পড়ার ও থাকার খরচ চালান। কিন্তু করোনাভাইরাসের লকডাউনে সেই কাজ হারিয়ে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক চাপে পড়েছেন তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ায় যেসব বিদেশি শিক্ষার্থীর খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই, তাঁদের বলা হয়েছে নিজের দেশে ফেরত চলে যেতে। যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে কর্মক্ষেত্রে ঢোকার পরিকল্পনা করছিলেন, তাঁদের অনেকেই কোনো চাকরি পাননি। কয়েক মাস আগেও যা ছিল অবিশ্বাস্য।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বার্ষিক বাজেটে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এর প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপরও।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর করছেন, গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ বা ফেলোশিপ যদি কারও থাকে, তাহলে সেটা আপাতত সুরক্ষিত। কিন্তু সরকারের দূরবস্থা যখন হয়, তখন তার প্রভাব গবেষণা খাতের বরাদ্দের ওপরও পড়ে। কাজেই আগামী দুই বছর নন-মেডিকেল খাতে রিসার্চ গ্র্যান্টের তহবিল কম আসবে আন্দাজ করা যায়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই আগামী কয়েক বছর তহবিলের ঘাটতি থাকায় পিএইচডি বা স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ কমে যাবে অনেকাংশে।

আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি শেষ করে বেরোচ্ছেন, তাঁদের জন্য কাজের সুযোগও কমবে। গত দুই মাসে সব কোম্পানির অবস্থার বারোটা বেজেছে, তাই চাকরির সংখ্যা কমবে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ১০ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে গেছে, বেকারের সংখ্যাটা আরও বাড়ছে প্রতিদিন। একাডেমিক কার্যক্রমে নিয়োগ স্থবির হয়ে গেছে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলাম আমার বিভাগে। ইন্টারভিউ শেষ করে আসার পর নির্দেশ এসেছে, সব স্থগিত করে ফেলতে হবে। কার্যত এর মানে, এই বছর যাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরির কথা ভাবছিলেন, তাঁদের কপাল মন্দ। শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, মোটের ওপরে সব বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।

মার্কিন সরকার সাম্প্রতিক কালে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের যে প্রণোদনা বিল পাস করেছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বরাদ্দ আছে ১৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু টাকাটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক যে ক্ষতি হয়েছে, তার তুলনায় নগণ্য। কাজেই আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপরে নিকট ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক চাপটা থাকছেই। একই দৃশ্য বিশ্বের দেশে দেশে হতে যাচ্ছে।

তবু মানুষ তো আশায় বাঁচে। কিছু আশা আমরা করতেই পারি। বিগত প্রতিটি অর্থনৈতিক মন্দার সময়েই বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষার ওপরে প্রভাব পড়েছে। এবারের মতো ভয়াবহ না হলেও কাছাকাছি। কাজেই আশা করা যায়, কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে। প্রবাদ আছে, ‘প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক’। এই করোনাভাইরাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঝুঁকছে অনলাইন শিক্ষাসহ নানা সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে।

মানবজাতির দীর্ঘ ইতিহাস বলছে, আমরা নানা দুর্যোগ থেকে সব সময়ই বেঁচে ফিরেছি, ঘুরে দাঁড়িয়েছি নতুন উদ্যমে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এবারেও তা–ই হবে। সারা বিশ্বের সবকিছু এবং উচ্চশিক্ষার ওপরে যে প্রভাব পড়েছে, তা থেকে উত্তরণ ঘটবেই। সামনের কয়েকটা বছর খুবই কঠিন। তবে আমরা উঠে দাঁড়াবই। ইতিহাস তা–ই বলে।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের সহযোগী অধ্যাপক

সূত্র: প্রথম আলো