২৪ এপ্রিল ২০২০, ১১:৫০

করোনা যুদ্ধে ইতিবাচক ছাত্ররাজনীতির মুখপাত্র ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’

  © টিডিসি ফটো

বাংলা, বাঙালি, স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় একঝাঁক সূর্যবিজয়ী স্বাধীনতাপ্রেমী তারুণ্যের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়া মহাদেশের ‘বৃহত্তম’ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অসহায়, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য, মাতৃভাষার জন্য পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ৫৪' এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২' এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬' এর 'ছয় দফা' আন্দোলন, ৬৯' এর গণঅভ্যুত্থান,  ৭০' এর সাধারণ নির্বাচন এবং সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে ১৭ হাজার নেতা-কর্মী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর যে স্বপ্ন নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো সেই স্বপ্ন ও অগ্রযাত্রা কক্ষচ্যুত হয়।কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন থেমে থাকেনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রশংসনীয়। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুদ্ধাপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার সময় ছাত্রলীগ রাজপথ পাহারা দিয়েছে। ছাত্রলীগের শত শত কর্মীর বুকের তাজা রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জন্ম শত্রু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় এবং অনেকের বিচারের রায় বাস্তবায়ন হয়। অনেকের মামলা এখনো চলমান। আশা করি সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শতভাগ কলঙ্কমুক্ত হবে।

এতো বড় বড় অর্জনের পরেও ২০০৯ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকে ছাত্রলীগ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ধারাবাহিক ভাবে নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এই সুযোগে ছাত্রলীগ তথা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে এবং বুয়েটে এই দাবিতে সফল ও হয়েছে।সর্বশেষ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেন। এরপরে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত এবং পরবর্তীতে ভারমুক্ত সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আসে আল নাহিয়ান খান জয় ও  লেখক ভট্টাচার্য।দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই তারা একটা পরিবর্তনের ধারায় ইতিবাচকতার ব্রান্ড এম্বাসেডর হিসাবে নতুন ইমেজে অধিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে ছাত্রলীগকে। করোনার এই ক্রান্তিকালে সারা বিশ্বের মানুষ আজ দিশাহারা।জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষ তার মানবিক বোধটুকু হারিয়ে ফেলছে। করোনায় আক্রান্ত মাকে তার সন্তান ফেলে যাচ্ছে জঙ্গলে, মৃত পিতার লাশ দাফন না করে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে তার সন্তান,মানবতা ধারক-বাহক পবিত্র ধর্ম ইসলামের পবিত্র আশ্রয়স্থল মসজিদের ইমামেরা করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ বহনের জন্য ভয়ে যখন মসজিদের খাটিয়া দিচ্ছে না, ঠিক  তখনই বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে আত্মার আত্মীয় হয়ে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

করোনার কারণে লকডাউনের মধ্যে অসহায়, খেটে খাওয়া, দিনমজুর মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরন,নিজ হাতে বানিয়ে বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাক্স বিতরণ, অসহায় শ্রমজীবীদের ফ্রি সবজি বিতরনসহ  অসহায় কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছে ছাত্রলীগ, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা কাঁচা বাজার পৌঁছে দিচ্ছে অসহায় মানুষের ঘরে, অসহায় মা যখন তার নবযাতক সন্তানের খাবার ঘরে না থাকায় চিন্তিত তখন হ্যালো ছাত্রলীগকে ফোন করলেই দুধসহ নবজাতকের খাবার নিয়ে মায়ের সামনে হাজির হচ্ছে ছাত্রলীগ, করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করছে ছাত্রলীগ। কক্সবাজারের মহেশখালীর লবণ চাষীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। যতগুলো মানবীয় ভাল কাজ আছে সবগুলো কাজ আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে।

আমার শৈশবের স্বপ্ন, কৈশোরের প্রথম প্রেম প্রথম ভালোবাসা, যৌবনের প্রচন্ড অহংকার, আজন্ম লালিত স্বপ্ন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তোমাকে নিয়ে আজ গর্ব হয়। আমরা সাবেক ছাত্রলীগ তোমাদের কাজে কর্মে মুগ্ধ। এ ভাবেই যুগে যুগে অসহায় মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্রলীগ এই কামনা থাকলো।

পৃথিবীর ইতিহাসে ছাত্রলীগের মত এমন ছাত্রসংগঠনের অস্তিত্ব বিরল কারণ ছাত্রলীগের ইতিহাস বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসই লেখা অসম্ভব।মহামারী করোনা যুদ্ধ শেষ হলে সেই নতুন পৃথিবী তথা নতুন বাংলাদেশে ছাত্রলীগের রাজনীতি এই ইতিবাচক ধারা ধরে রেখে এক মানবিক ছাত্ররাজনীতির নতুন ধারা সৃষ্টিতে ছাত্রলীগকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। কোন এমপি বা মন্ত্রী বা নেতার ব্যক্তিগত বাহিনী হিসাবে নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শিক ছাত্ররাজনীতির গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে ছাত্ররাজনীতির বন্ধ্যাত্ব ঘুচাতে ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনীতিকে ব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্ত করে রাজনীতিবিদদের হাতে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। পড়াশোনা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, পাঠচক্র, মেধা মননশীলতার বিকাশ ঘটাতে নিতে হবে ভূমিকা। ব্যক্তিগত লাভ অর্থ কামানোর মোহ থেকে মুক্ত হয়ে দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব ও কর্মী তৈরিতে হতে হবে বলিয়ান।

পরিশেষে একটি কথা বলে শেষ করতে চাই, বেগম মুজিব শাড়ীর আচল থেকে জমানো টাকা ছাত্রলীগকে দিতেন, কারণ বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগকে সন্তানের মত ভালবাসতেন দেশ গড়ার কাজে লাগাবে বলে।ঠিক তেমনিভাবেই করোনা যুদ্ধের সফল সমাপ্তির পরে দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করতে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করবেন, সেই যুদ্ধে শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশের অপেক্ষা না করে বরং বঙ্গবন্ধু কন্যার চোখের ভাষা বুঝতে পারার সক্ষমতা অর্জন করে গর্বের প্রতিষ্ঠানে পরিনত হোক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

লেখক: শিক্ষক, বশেমুরবিপ্রবি ও সাবেক সহ-সভাপতি, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ