করোনায় বেতন বন্ধ বেসরকারি শিক্ষকদের, রাষ্ট্র খবর রাখছে কি?
কমপক্ষে তিন কোটি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে দেশের দুই লক্ষাধিক প্রাইভেট স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা (খারেজি) ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ লক্ষাধিক শিক্ষকের অধিকাংশেরই গত মাস থেকে বেতন বন্ধ রয়েছে, কবে বেতন পাবেন তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
উল্লেখ্য, এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভূক্ত নয়; এগুলোর প্রায় সবগুলোই ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত, সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পায় না এরা; প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়।
আপনাদের চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, নিজের গ্রামে খোঁজ নিন, এমন অনেক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, হেফজখানা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাবেন; সরকারি কোন সাহায্য না পেয়েও এ প্রতিষ্ঠানগুলো, নাগরিকদের প্রতি সরকারের যে দায়িত্বগুলো পালন করার কথা, নিজ উদ্যোগে সে দায়িত্ব পালন করার ব্রত নিয়েছেন।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি। যথেষ্ট চাহিদা থাকা স্বত্বেও, নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে, আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। ২০০৯ সালে আমি প্রথম নোয়াখালী সাইন্স এন্ড কমার্স কলেজ, পরে ২০১১ সালে হাই স্কুল প্ৰতিষ্ঠা করি।
গত দশ বছরে, এ শহরে নতুন চারটি প্রাইভেট কলেজ, কমপক্ষে পনেরটি হাই স্কুল, (হাইস্কুল পর্যায়ে পড়ায়) এমন ১৫টি মাদ্রাসা এবং অলিগলিতে অসংখ্য কেজি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; সবমিলিয়ে এগুলোর সংখ্যাস সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকগুণ বেশি। এদের সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েকশ’ অনার্স, মাস্টার্স করা শিক্ষক কাজ করছেন; ব্যতিক্রম ভিন্ন এদের শিক্ষার মানও সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ভালো, তা না হলে, হাজারো অভিভাবক বেতন দিয়ে বাচ্চাদের এগুলোতে পড়াতেন না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি কোন সাহায্য পায় না, এদের সঠিক ডাটাও সরকারের কাছে নেই। এ লেখার উপর ভিত্তি করে সারা দেশের একটা চিত্র কল্পনা করে নিতে পারেন।
প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত দরিদ্র এ শিক্ষকদের কারোরই তেমন একটা সঞ্চয় থাকার সুযোগ নেই। এদের একেকজনের পরিবারে যদি গড়ে চার জন সদস্য থাকেন তাহলে এক কোটি মানুষ রয়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে এ শিক্ষকগন কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন ও কাটাবেন রাষ্ট্র তার কোন খবর রাখছে কি?
এ শিক্ষকরা কি রাষ্ট্রের নাগরিক নয়? রাষ্ট্রের শিক্ষা, অর্থনীতিতে এঁরা যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন, রাষ্ট্র কি তা অস্বীকার করতে পারবে? এদের জন্য রাষ্ট্রের খুব দ্রুত কিছু একটা করা উচিত।
এ শিক্ষকরা হাত পেতে চাইতে পারবেন না। এঁদের এবং এঁদের স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা, পরিবার- পরিজনের আকুতি সরকারের নজরে আসবে আশা রাখি।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা এবং অধ্যক্ষ, নোয়াখালী সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ