০১ এপ্রিল ২০২০, ২০:১২

করোনাভাইরাসে মৃত্যুপুরী থেকে সান্তনা

  © ফাইল ফটো

মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে আমেরিকার নিউইয়র্ক স্টেট। শুধু নিউইয়র্ক শহরে এখন করোনা আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার, মৃত্যু প্রায় এক হাজার। সেখানে প্রিয়জনের কাছে ফোন করি খোঁজ নেয়ার জন্য। তাদের সান্তনা দিবো কি?

দেখি তারা উল্টো চিন্তিত হয়ে আছেন আমাদের নিয়ে। শুধু একটা শহরে আক্রান্ত ৫০ হাজার, আর আমাদের পুরো দেশে ১০০-ও না, তাহলে তারা কেন উ্দ্বিগ্ন আমাদের নিয়ে?

কাল রাতে নিউইয়র্ক-এ মনির হায়দার এ প্রশ্ন শুনে হাসলেন। তিনি দেশে একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক ছিলেন। এখনও দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তথ্য নেয়ার সুযোগ আছে তার। তার বক্তব্য সংক্ষেপে এরকম।

এক. করোনো হলে বাংলাদেশে আমরা চিকিৎসা দূরের কথা ঠিকমতো দাফনও পাবো নাকি সন্দেহ। করোনাকালে অন্য কোন অসুখ হলেও মরবো বিনা চিকিৎসায়। সর্দি-কাশির লক্ষন নিয়ে মরলে পরিণতি হবে করোনার মতো।

অন্যদিক নিউইয়র্ক-এ করেনো হলেও খুব ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে, এটা শতভাগ নিশ্চিত। কেউ মারা গেলে সৎকার আর দাফনও হবে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালোভাবে।

দুই. করোনাকালে দেশের অনেকে মারা যাবে না খেয়ে বা ভুগবে খাদ্য, নিরাপত্তা আর জীবিকার অভাবে। সবচেয়ে সুবিধাভোগী শ্রেনীও ভুগবে কিছুটা। নিউইয়র্ক এসব হবে না। যেমন মনির উদাহরণ দিলেন সেখানেকার মাঝারি মানের স্কুলেও প্রত্যাককে ল্যাপটপ দিয়ে বাসায় রেখে নিয়মিত ক্লাস করানো হচ্ছে। বাংলাদেশে এ সুবিধা সবচেয়ে দামী স্কুলেও নেই।

তিন. সবচেয়ে ভয়াবহ যা, তা হচ্ছে- করোনা হচ্ছে কিনা তা আমাদের জানতে দেয়া হবে না। করোনা হলে সবার টেস্ট করা হবে না চিকিৎসা নেই বলে, সরকার এ ব্যর্থতা কাউকে জানতে দিতে চায় না বলে। যে কয়েকশত আইসিইউ/ভেন্টিলেটর আছে তা সংরক্ষিত আছে ভিভিআইপিদের জন্য।

শুধুমাত্র বড় বড় নেতা আর বিপুল সম্পদের মালিক ব্যবসায়ীদের পরিবাররা আক্রান্ত হলে তারা এসবের সুবিধা পাবে। অন্য কেউ এই সুবিধা পাবে না।

মনির কি ভুল বলেছে? বলেনি। বাংলাদেশে অবস্থা হতে পারে আরো খারাপ। মৃত্যুপুরী থেকে মনির সান্তনা দেয় ‘প্রায় করোনামুক্ত’ একটা দেশের আমাকে। আমি তা গ্রহণও করি অবনতচিত্তে।

পৃথিবীতে এদেশের মতো রাষ্ট্রব্যবস্থা আর কোথায় আছে? আগে পান থেকে চুন খসলে ‘উদ্ভট উটের পীঠে চলেছে স্বদেশ’ বলে তেড়েফুড়ে’ উঠতো কিছু মানুষ। আজ তারা কোথায়? কোথায় তাদের বিবেক, চেতনা আর প্রতিবাদী সত্ত্বা?

লক্ষ কোটি টাকা কর দেই আমরা, দেই রেমিটেন্স। আমাদের টাকা খরচ হয় কোথায়, কাদের জন্য?

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(ফেসবুক থেকে নেয়া)