১৬ মার্চ ২০২০, ১০:৪২

শুধু অনুরোধ, স্কুল-কলেজসহ সবকিছু দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখুন

  © ফাইল ফটো

কেন যেন মনে হচ্ছে, দেশের স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত, বিপনী বিতান-সিনেমা হলসহ সবকিছু আগামী দুই সপ্তাহর জন্য বন্ধ করে দিলে ভালো হয়। ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ। এই দুই সপ্তাহর জন্য জরুরী প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর সব বন্ধ করে দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। করোনা ছড়ানো বা লোকজনের আতঙ্ক রোধে এর চেয়ে ভালো বুদ্ধি আমার মাথায় আসছে না। আপনাদের কারও থাকলে দেন।

হিসেব করে দেখেছি, এই ১৪ দিনে সরকারি কার্যদিবস আছে নয়দিন। করোনা নিয়ে গত এক মাস খবর দেখে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় আমার মনে হয়েছে, নয়দিন বন্ধ থাকুক। শুধু নিশ্চিত করতে হবে, এই দুই সপ্তার ছুটিতে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হবে না। একসাথে অনেক লোক জড়ো হবে না। বিয়ে বা নির্বাচনের মতো কোন ঘটনা ঘটবে না। প্রয়োজনে দুর্যোগ ঘোষণা করুন।

কেউ কেউ আমাকে পাল্টা বলতে পারেন, বাংলাদেশে তো রোগী মাত্র পাঁচজন শনাক্ত, তাহলে কেন সব বন্ধ করতে হবে? প্রতিবেশী ভারতে দেখুন। রোগীর সংখ্যা মাত্র ৮৪। অথচ দেখেন তারা করোনাকে বিপর্যয় ঘোষণা করেছে। গোটা দেশে স্কুল কলেজ, সিনেমা হল বিপনী বিতান সব বন্ধ। সবাইকে বাসা থেকে কাজ করতে বলা হচ্ছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেকে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে। খাবার বা ওষুধ কেনা ছাড়া সবাইকে বাইরে যেতে নিষেধ করেছে দেশটি। নিজেদের কর্মীদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক তাদের সব কর্মীদের বাড়ি থেকে অফিস করতে বলেছে।

আমার ধারণা ছিল চীনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার সেই ভুল ধারণা ইতিমধ্যেই ভেঙে গেছে। ইতালির মতো দেশে একদিনে তিনশ’ লোক মারা গেছে। আমাদের দেশে যদি করোনা ছড়ায় কী হবে ভাবলে গা শিউরে ওঠে।

সরকার বলছে তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। মানছি সাধ্য অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু বাস্তবতা কী? একটা উদাহরণ দেই। চীন ও ইতালির ঘটনায় এটা সারা পৃথিবীর কাছে পরিস্কার যে, শতকরা আশি ভাগ করোনা আক্রান্ত মানুষের প্রতিক্রিয়া হয় অল্প। তাদের ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু বাকি শতকরা বিশ ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। এর মধ্যে শতকরা পাঁচ ভাগকে অন্তত আইসিইউতে নিতে হয়। সমস্যা এখানেই।

আচ্ছা বলেন তো, হঠাৎ করে এক হাজার লোকের আইসিইউ লাগলে কীভাবে আমরা ব্যবস্থা করবো? এই শহরে একটা আইসিইউ পেতে কী করতে হয় সেটা যাদের খুঁজতে হয়েছে তারাই শুধু জানেন। আপনার যতোই চেনাজানা থাকুক সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে বলে দেয়া হয়, আরেকজন না মারা গেলে আইসিইউ মিলবে না। কাজেই চোখের সামনে দেখতে হবে আমাদের বাবা-চাচা-দাদা-দাদীরা করোনায় মারা যাচ্ছে। এমনকি আমরাও কেউ মরে যেতে পারি।

আচ্ছা ধরলাম আইসিইউ লাগবে না। আমাদের ৪-৫ হাজার ছেঁয়াচে রোগীকে আলাদা করে রাখার কোন ব্যবস্থা আছে কী? আছে কোন হাসপাতাল? সরকারি কয়টা বড় মোডিকেলো আইসোলেশনের ব্যবস্থা আছে?

না কাউকে ভয় দেখাচ্ছি না। শুধু বাস্তবতার কথা বলছি। আমাদের সবার প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে দুই- পাঁচজনের বেশি করোনা আক্রান্ত হবে না। আদৌ কী তাই? যদি দুই-পাঁচ হাজার বা ১০-২০ হাজার রোগী আক্রান্ত হয় আমাদের কী ব্যবস্থা আছে? আমার মনে হচ্ছে নেই।

অথচ সারা দুনিয়াটা দেখেন। করোনা থেকে বাঁচতে ওমরাহ বন্ধ। মসজিদে জামায়াতের বদলে বাড়িতে নামাজ আদায় চলছে। আর আমাদের দেশে? জুমার নামায, নির্বাচন, সভা সমিতি এমনকি বিয়ে শাদি কিছুই থেমে নেই। সবাই হয়তো ভাবছে, এয়ারপোর্ট ছাড়া করোনা আর কোন পথ চেনে না। কী ভয়াবহ বিষয়!

আচ্ছা করোনাভাইরাস চিহ্নিত করার জন্য কয়টা জায়গায় টেস্ট করার যন্ত্র কেনা হয়েছে আমাদের? সাধারণ হাসপাতালগুলোতে কি এই টেস্ট করা যায়? কত টাকা লাগে? যারা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, তাদের নিরাপত্তা কী? হোম কোয়ারেন্টাইনে যাদের পাঠানো হয়েছে তারা মানছে তো?

প্রশ্ন করলে এমন আরও অনেক প্রশ্ন করা যায়। আমি সেসব করছি না। শুধু অনুরোধ করছি, দেশের স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত, বিপনী বিতান-সিনেমা হল সব আগামী দুই সপ্তাহর জন্য বন্ধ করে দিন।‌ অনেকেই বলছেন, শুধু স্কুল বন্ধ করতে। হবে না। করলে সব একসাথে করতে হবে। সবাইকে একসাথে বাসায় রাখতে হবে। লোকজন গ্রামে চলে গেলে যাক। তাতে ঘনবসতির ভারসাম্য হবে।

মনে রাখবেন, একবার ছড়িয়ে গেলে, তখন বন্ধ করে খুব বেশি লাভ হবে না। আর বিশ্বের ৪০/৪৫ দেশ যখন সব বন্ধ করে দিয়েছে, আমরা দুই সপ্তাহের জন্য করলে সমস্যা কোথায়? আপনাদের কারও মাথায় যদি এর চেয়েও ভালো পরামর্শ আসে দেন।

তবে আমি মনে করি না, শুধু ছুটি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে। করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হলে ডাক্তারদের পরামর্শ শোনা, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী। বাংলাদেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়লে, বহুজন আক্রান্ত হয়ে গেলে আমাদের অসহায় হয়ে চেয়ে দেখতে হবে। কাজেই যে করেই হোক রোগ ছড়ানো বন্ধ করতে হবে।

শেষ করি একটা কথা দিয়ে। কাল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। আমাদের সত্যিকারের বড় একটি পরীক্ষা সামনে চলে এসেছে। আমরা যেন এই পরীক্ষায় ফেল না করি। আমার অনুরোধ কাল জন্মশতবার্ষিকীতেই আগামী দুই সপ্তাহ ছুটির ঘোষণা দেয়া হোক। এরপর চলুক করোনার বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রস্তুতি। ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ। ভালো থাকুক পৃথিবী।

লেখক: কলামিস্ট ও গণমাধ্যমকর্মী

ফেসবুক থেকে নেয়া