জেদ, অহঙ্কার নয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করুন
- মো. আবু রায়হান
- প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২০, ০১:৫৩ PM , আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০, ০২:২৩ PM
সারা বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্র গুলো যখন মহামারিতে জবুথবু অবস্থা সেখানে আমাদের করোনা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি আছে এমন বক্তব্য হাস্যকর। এখন সবার জীবন নিরাপদ রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমেরিকা জরুরী অবস্থা জারি করেছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্ব নেতাসহ বেশ কয়েক জন নামীদামি ব্যক্তিত্ব। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ব্রাজিলের নেতা জায়ের বলসোনারো, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডোর শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে।সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে তিনিও ১৪ দিন আইসোলেশনে আছেন। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগের শিকার হয়েছেন খোদ ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাদিন ডরিস। বাষট্টির বছর বয়সী ডরিস নিজেই নিজেকে কোয়ারেন্টাইন করে রেখেছেন বাড়িতে।আক্রান্ত হয়েছেন স্পেনের রানি লেতিজিয়া। স্পেন সরকারের এক মন্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে ওই মন্ত্রীর সংস্পর্শে এসেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রানি। আরো আক্রান্ত হয়েছেন অস্কারজয়ী মার্কিন অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস এবং তার স্ত্রী রিটা উইলসন। বৃহস্পতিবার সকালে টুইট করে নিজেই এ কথা জানিয়েছেন এই বিখ্যাত অভিনেতা। বিশ্ব নেতাদের মধ্যে সর্বশেষ আক্রান্ত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডটন। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম পি বার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কন্যা ও উপদেষ্টা ইভানকার সাথে দেখা করার একদিন পরেই গতকাল তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেল।
ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের ১৫০টি দেশের নাগরিক। করোনার প্রকোপ ও ভৌগোলিক বিস্তৃতি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। ইতালিতে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৪ জনে। এখন পর্যন্ত করোনাতে আক্রান্ত হয়ে ৭৪ হাজার ২৭৬ জন সুস্থ হয়েছেন। আকাশপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে প্রায় অর্ধেক পৃথিবীর।করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি যেখানে জনসমাগম থাকে। তাই বিভিন্ন দেশে জনসমাগমের জায়গা ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে। মসজিদ উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খালি করে দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বড় জনসমাগমের জায়গা হওয়ায় এতে তার প্রভাব পড়েছে। ইউনেসকো বা ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন তথ্যমতে ইতিমধ্যে ৬১ দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয়ভাবে বন্ধ করা হয়েছে ৩৯টি দেশে। আঞ্চলিকভাবে আংশিক বন্ধ করা হয়েছে ২২টি দেশে।বাংলাদেশের প্রতিবেশি ভারতের স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।দিল্লি, কেরালা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, এবং ছত্তিশগড়ের পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারও শনিবারে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে।ভারতের প্রতিবেশি হিসেবে আমাদের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে সমস্যা কোথায়?আগে জীবন তারপর না হয় পড়াশোনা, বেঁচে থাকার লড়াই। আমাদের অবস্থা হয়েছে সেই পথচারীর মতো। একজন পথচারীকে একজন ছিনতাইকারী পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করল, জান দিবি না টাকা দিবি? পথচারীও আতঙ্কে বলে ফেলছে ভাই টাকা নেন। জান দিলে খামু কি? বড়ই হাস্যকর! বেকুব কাকে বলে! যেখানে জীবনই বিপন্ন সেখানে তার কাড়িকাড়ি অর্থ বিত্ত কি কাজে লাগবে?
এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত কয়েক দিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। সরকার ও কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে নিজেরােই ক্লাজ বর্জন করেছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে এবার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি তুলছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও। করোনা আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা আজ থেকে সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল দুপুরে বিভাগটির সববর্ষের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে এই ঘোষণা দিয়েছে।মুজিব বর্ষ জীবনে বেঁচে থাকলে পরেও উদযাপন করা যাবে।আপাতত জাতিকে নিস্তার দিন।করোনা আতঙ্ক থেকে বাঁচতে দিন।আমরা একটু হাফ ছেড়ে বাঁচি। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কিছুদিন বন্ধ থাকলে দেশ মেধা সংকটে ভুগবে না। হরতাল ধর্মঘটেও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা বহুবার ব্যাহত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ করোনা মহামারিতে স্কুল, কলেজ বন্ধ রাখলে খুব বেশি সমস্যা হবার কথা নয়। জীবনের চেয়ে বড় পড়াশোনা নয়। বেঁচে থাকলে পড়াশোনার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা যাবে। ইলমে বাহার কিংবা বিদ্যাসাগর হতে পারবে। কিন্তু অকালেই জীবন প্রদীপ নিভে গেলে আফসোসের তো শেষ থাকবে না।
করোনা ভাইরাস সাজানো গুছানো জগৎ সংসার লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। রোগ শোক বিপদ আপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা।মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করলে তাকে শহিদের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেছে ইসলাম। এছাড়া মহামারি এলাকায় কাউকে ঢুকতে ও ঐ স্থান ত্যাগ করতে নিষেধ করেছে। বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা মসজিদ বন্ধের কথা বলছেন। কিন্তু স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কথা বলছেন না। অথচ সবচেয়ে বেশি জনসমাবেশ হয় ঐসব স্থানে। আমাদের মনোবল খুবই শক্তিশালী, করোনা মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত কিন্তু করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আমরা কতোটা তৎপর। বিমান বন্দর ও স্থল বন্দরে থার্মাল মেশিন নেই। থাকলেও অকেজো। বিমানবন্দর দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে লোকজন যাতায়াত করছে তাদের কোনো চেকআপ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাড়ি ফেরার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে যে চেকআপ হয়নি। হুশ ফিরলে পিছনে ছুটে করোনা সনাক্তকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। Prevention Is Better Than Cure এই অমোঘ কথাটি বেমালুম ভুলে আছি। ইউরোপ আমেরিকা চীনের মতো উন্নত রাষ্ট্র যেখানে করোনা নিয়ন্ত্রণে নাকানিচুবানি খাচ্ছে। সেখানে আমাদের দেশে মাইকিং করে করোনাভাইরাসের ওষুধ বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয় আমাদের দেশে করোনা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে শুনতে হাস্যকর শোনায়। কথায় বলে হাতি গেল তল, ভেড়া বলে কত জল।সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ এই পাম্প পট্টিতে জনগণ ফুরফুরে মেজাজে। সেখানে করোনা আমাদের কি ঘোড়ার ডিমটা করবে? অথচ আল্লাহ পাক বলেন, তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান বা ক্ষমতাবান' (সুরা মায়েদাহ, আয়াত - ১২০)।সবশেষে বলি এদেশের প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমতের দৃষ্টি আছে তা না হলে এতো দুর্যোগ, দূর্ঘটনায় দেশটা টিকে আছে কিভাবে? করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ মুকুট। জানি না করোনা কখন কাকে এ মুকুট দিয়ে বরণ করে নেবে তা বলা মুশকিল।আমাদের বাগাড়ম্বর বাদ দিয়ে সচেতন হওয়া এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা ও দোয়া হতে পারে এ মহামারি হতে পরিত্রাণের রক্ষা কবজ।পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৫৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন, তারাই ধৈর্যশীল, যারা বিপদগ্রস্ত হলে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য, আর আমরা তো তার কাছেই ফিরে যাবো) এসব লোকদের জন্য তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে দোয়া ও রহমত, এরাই সরল পথ প্রাপ্ত।