ভাইয়া চলে যাওয়ার রাতে আমাদের যত ভুল
৭ অক্টোবর এর আগের ব্যাপার গুলো: সর্বপ্রথম আমার পূজার ছুটিতে বাসাতে আসার কথা ছিল না, কিন্তু প্রাইভেটের ভাইয়া বাড়িতে চলে যাওয়ায় ভাইয়াই বারবার বলে বাড়ি যেয়ে ঘুরে আয়। এর এক সপ্তাহ আগেও ভাইয়া ফোন ধরছিলো না, আমার ওখান থেকে যেতে ৫ মিনিট লাগতো। সেদিন রাত ১০টাতেও গেছিলাম ফোন ধরছেনা কেন দেখতে, সেইদিন ফোন সাইলেন্ট ছিলো।
কথা ছিলো ভাইয়া কুষ্টিয়া থেকে আসবে তারপর আমি, বাসায় আসবো। কিন্তু ভাইয়া হঠাৎ ঢাকা আসতে চায় না, তাই আমিও বাসায় আসি আর ভাইয়াও তখন ছিল। তাই হয়তো শেষ কিছুদিন একসাথে কাটাতে পেরেছি।
আগে আম্মু অনেক দিন ভাইয়ার রুমে বসে থাকতে আমাকে বলেছিলো, রুমমেটের নম্বর না নিয়ে আজ বের হবি না। কিন্তু কোনো না কোনো কারণে একদিন ও নেয়া হয়নি।
৭তারিখ ই ভাইয়া ঢাকাতে গেলো। ওই হলের শুধু একজন এর নম্বরই ছিল। ওই ভাইয়ের কাছেই পড়তাম আমি। আবার শুধু ওই ভাই ই আমার নম্বর জানতো। রাত ৩টার পর তার কাছ থেকেই নম্বর নেয় বাসার। কিন্তু সেইদিন ওই ভাইও বাসায় ছিল। যখন ভাইয়া কল ধরছিলো না, ভেবেছিলাম ভাইকে কল দিবো কিন্তু পরে মনে পরে ভাই তো হলে নেই।
রুমমেটদের ফেসবুকে জিজ্ঞেস করার কথাও মাথাতে এসেছিলো, কিন্তু ভাবলাম সত্যি ঘুমাচ্ছে মনে হয়। ওই দিনই গিয়েছিলো বলে ফোন না ধরলেও ভাবছিলাম টায়ার্ড তাই হয়তো ধরছে না, সাইলেন্ট করে ঘুমাচ্ছে। সত্যি বলতে আম্মুকে বলেও ছিলাম ওকে জ্বালাইয়ো না, ও বলে যখনই ঘুমাই তখনই তুমি কল দেও।
ওইদিনই আম্মুর ফোনে ব্যালান্স না থাকায় আর আম্মু নিজে রিচার্জ করতে পারে না তাই ১০টার আগে কল ও দিতে পারেনি। সত্যি বলতে আমারই কেন যেন ইচ্ছা হচ্ছিলো না। যখন করলাম তখন আর কল ধরছিলো না। ১১টার দিকে।
কিন্তু আব্বু ১০টা ৪৫ এর দিকে কল দিয়েছিলো দুইবার, কিন্তু আমাদের বলেনি। তাই ১১টায় কল না ধরলেও বলছিলাম, মনে হয় খাইতে গেছে ঘুম থেকে উঠে। এসে কল দেবে।
রাত ১২টার দিকে আম্মু ঘুমায় গেলে ভাবলাম ভাইয়া গেলো সারাদিন একবার কথাও তো হইলো না।এত রাতে কল দিবো? কিন্তু ম্যাসেঞ্জার এ ঢুকেই দেখলাম ভাইয়াকে সবার আগে একটিভ দেখাচ্ছে আর যেহেতু আগেও ভাইয়ার খোজ পাওয়া না গেলে একটিভ স্ট্যাটাস দেখে বুঝতাম ঠিক আছে কিনা তাই ওই একটিভ দেখে অনেকটা নিশ্চিতই হয়ে গেছিলাম ভাইয়া ঠিক আছে।
আম্মুকেও বলেছিলাম একটিভ আছে চিন্তা করো না। কিন্তু মাথাতে এটাও এসেছিলো যে, তাহলে কল ব্যাক করলো না কেন! কিন্তু ওইদিনই কেন যেন সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম না ব্যাপারগুলো। তখন তো বুঝার উপায় ছিলো না যে ফোন অন্যদের কাছে।
রাতে আর তেমন চেষ্টা করিনি, বার্সেলোনার খেলা দেছিলাম। রাতে ঘুমাতে যায় সাড়ে ৩টার দিকে, যখন সব শেষ। পুরো সময় এখানে জেগেই ছিলাম। ওই দিন ঘুম আসছিলোও না। সাড়ে ৪টার দিকে ঘুম আসে একটু।
আচ্ছা এতগুলো ভুল শুধু ওই একদিনের জন্যই! সত্যি বলতে ব্যাপারগুলো ভাবলে আর কিছুই মাথায় আসে না। পুরো সচেতন ছিলাম, কিন্তু ওই যে একটাই ভুল। ভাইয়া বারবার বলতো ‘আমার রুমমেটরা অনেক ভালো। চিন্তা কইরো না, ওরা থাকতে আমার কিছু হবেনা’। তবে মৃত্যু আসবেই যতই সচেতন হওয়া যাক না কেন।
ফেসবুক থেকে নেয়া
আবরার ফাইয়াজ: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পিটুনিতে নিহত আবরার ফাহাদের ভাই