প্রধান শিক্ষক সংকটের ক্ষতি সুদূরপ্রসারী

  © টিডিসি ফটো

উন্নত জাতি গঠন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নাই। কারণ বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ও মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হইবার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রাথমিক শিক্ষা। এহেন শিক্ষার বৃহত্তর অংশকে শিক্ষক সংকট এবং প্রধান শিক্ষকবিহীন রাখিয়া আমরা এই শিক্ষার ক্ষেত্রটিতে চূড়ান্ত অবহেলার পরিচয় দিতেছি। গত মঙ্গলবার ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হইয়াছে, প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলিতেছে ৭ হাজার ১৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইহার কারণ হিসাবে উঠিয়া আসিয়াছে প্রশাসনিক জটিলতার কথা। একাধিক শিক্ষক জানাইয়াছেন, অনেক বিদ্যালয়ই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম শিক্ষক লইয়া চলিতেছে। অথচ দাপ্তরিক কাজে তাহাদের মাসে অন্তত ১০ কর্মদিবসে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যাইতে হয়। কোনো স্কুলে যদি চার জন শিক্ষক থাকেন, তাহা হইলে সেইখানে বাকি তিন শিক্ষককে দিয়া চলিতেছে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ক্লাসসহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণির ক্লাস। এমনিতেই দেশে বর্তমানে প্রাথমিকের ২১ হাজার ৮১৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। তাহার উপর এই সকল কর্মরত শিক্ষককেই ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ করা, ভোট গ্রহণ, শিশু জরিপ, কৃষিশুমারি, আদমশুমারি, উপবৃত্তি তালিকা প্রণয়ন ও প্রাপ্তিতে সহযোগিতাসহ ১৩ ধরনের কাজ করিতে হয়। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকিবার দরুন এই ক্ষেত্রে তাহাদের ভোগান্তির সীমা নাই।

জানা গিয়াছে, শিক্ষকদের পদোন্নতি লইয়া উচ্চ আদালতে একাধিক মামলা রহিয়াছে। গ্রেডেশন তালিকা সঠিক না হইবার কারণে পদোন্নতিপ্রত্যাশী সহকারী শিক্ষকেরা এই সকল মামলা করিয়াছেন। এই কারণেও প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি সমস্যা দূর হইতেছে না। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হইতেছে বলিয়া জানাইয়াছে মন্ত্রণালয়। তবে এই ক্ষেত্রেও সমস্যা কম নাই। শিক্ষকদের ভিতর হইতে অস্থায়ীভাবে কাউকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হইলে অন্য শিক্ষকেরা অনেক ক্ষেত্রেই তাহাকে মানিতে চাহেন না। তাহারা মনে করেন, প্রধান শিক্ষক হিসাবে যাহাকে দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে, তিনি তাহাদের মতোই তো সহকারী শিক্ষক—সুতরাং তাহার নেতৃত্ব কেন মানিবে? ইহা লইয়া নানা ধরনের আইনি জটিলতাও দেখা গিয়াছে বহুবার। অতএব প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা নিরসন ব্যতীত এই সমস্যার সমাধান হইবে না।

আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৪ নম্বর অভীষ্ট হইল—সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তি ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি, যাহার ৯.২ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা হইল ২০২০ সালের মধ্যে দেশে প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি হিসাবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাসহ শৈশবের একেবারে গোড়া হইতে মানসম্মত বিকাশ ও পরিচর্চার মধ্য দিয়া বাড়িয়া উঠার নিশ্চয়তা বিধান করা। এই ক্ষেত্রেও গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করিবার জন্য এত বিপুলসংখ্যক প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রাখাটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। উন্নত জাতি গঠনে প্রাথমিক পর্যায়ে ন্যূনতম শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা অপরিহার্য। ইহার ব্যত্যয়ে আমাদের শিশুদের বৃহত্ একটি অংশ দেশের সম্পদে পরিণত হইতে পারিবে না।

সুত্র: জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক


সর্বশেষ সংবাদ