সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা: আশা ও হতাশা
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি পরীক্ষা নামক অগ্নিপরীক্ষা জয় করে নিজের আসনটি ছিনিয়ে আনতে তুমুল লড়াই করতে হয়। এ সময়টি জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হওয়ায় একটি সিটের জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবকরাও নিরলস সগ্রাম করে যায়। সারাদেশের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য। আর এ ছুটে চলার দীর্ঘ পথ খুবই বন্ধুর এবং কণ্টকাকীর্ণ ।
কেননা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন বিভাগ কিংবা জেলা পর্যায়ে অবস্থিত এবং অধিকাংশ সময় দেখা যায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার পরের দিন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ফলে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা হিমশিম পরিস্থতির সম্মুখীন হয়। অনেক শিক্ষার্থী কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে যায়, যা তার স্বপ্ন পূরণের পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
এবার একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষার সময়ে কেমন খরচ লাগতে পারে তার এর একটি মোটামুটি ধারণা দেওয়া যাক - বাংলাদেশে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়,প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে আসন রয়েছে ৬৪ হাজার। কিন্তু প্রতি বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রায় আট লাখ কিংবা তারও বেশি শিক্ষার্থী ফলে ভর্তি পরীক্ষা রণাঙ্গনে পরিণত হয়।
ফলশ্রুতিতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য হয় না। ফলে তাদের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছুটে চলতে হয়। আর একজন শিক্ষার্থী নিজেকে নিরাপদ রাখতে যদি কমপক্ষে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে, তাহলে তার মোট আবেদন ফি লাগে ন্যূনতম ৫০০*২০=১০,০০০ টাকা। তবে এমনো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে একটি ইউনিটে আবেদন করতেই লাগে ১০০০ কিংবা ১৫০০ টাকা। এর সাথে যাতায়াত খরচ এবং থাকা খাওয়ার খরচ মিলিয়ে একটি মোটা অঙ্কের বাজেট লাগে।
কিন্তুপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। আর এ ধরণের গাঁ-গ্রামের একজন শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষে এতো খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। এমন শত ভোগান্তি লাঘব করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ( টএঈ) সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা শিক্ষার্থী বান্ধব এবং প্রশংসনীয়।
তবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে যেগুলো মোকাবেলা করতে না পারলে দেশের মেধাবি শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে আসবে চরম বিপর্যয়। প্রথমত, প্রশ্ন ফাঁসের আতঙ্ক যা বর্তমানে পরীক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বা কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলে বঞ্চিত হবে প্রকৃত মেধাবি ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা এবং অযোগ্যরা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলোতে নিজেদের জায়গা করে নেবে, যা দেশ ও জাতির জন্য হুমকি স্বরূপ।
অন্যদিকে, যেহেতু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার এক ঘন্টার মধ্যেই লাখো প্রতিযোগিদের মধ্যে প্রকৃত মেধাবিদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে, সেহেতু যদি কোনো পরীক্ষার্থী অসুস্থ্যতা বা অন্য কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে, তাহলে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় তাকে কাতরাতে হবে দীর্ঘদিন।
আর এমন ঘটনা যদি সেকেন্ড টাইমারদের ক্ষেত্রে ঘটে তাহলে এর পরিণাম কতটা ভয়ানক হতে পারে তা কল্পনা করাও দুরূহ। অন্যদিকে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বিষয় না থাকায় চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিষয় পছন্দক্রমে জটিলতার সম্মুখীন হবে।
এরূপ কিছু নেতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষার্থীবান্ধব। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সকল ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে কঠোর নজরদারি রাখবে এবং পুরো প্রক্রিয়া পড়ুয়া, মেধাবি ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ মঙ্গলময় হবে বলেই আশা করছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল: sajibprodhanbd@gmail.com