ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল, বাকি ২ শতাংশ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে খবরটি দেখে প্রশ্ন জেগেছে- বাকি ২% তাহলে কী? ছোট বেলা পড়েছিলাম ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী ফলে পরিচয়।’ বাংলাদেশের পরিকাঠামো নাড়ালে যে জিনিষগুলো প্রথমে বেরিয়ে আসবে তার মধ্যে ভেজাল, দুর্নীতি, ভণ্ডামি, গুজব এবং নকল উল্লেখযোগ্য।
ছোট বেলা এও পড়েছিলাম ‘পারিবে না এ কথাটি বলিও না আর একবারে না পারিলে দেখ শত বার।’ বাংলাদেশ স্বাধীন করা থেকে শুরু করে আজ অবদি নকলের ওপর প্রাকটিস করতে করতে শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকলে পরিণত হয়েছে।
সেক্ষেত্রে সারা দেশের পারফরমেন্স বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই উন্নত সে বিষয় আমরা নিশ্চিত। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু আবিষ্কার করা কঠিন এবং ব্যয়বহুল সে ক্ষেত্রে নকল করা এবং শর্টকাট ওয়েতে সমস্যার সমাধান করা বা উদ্দেশ্য সফল করা দোষের কী? এমন ধরণের মন-মানসিকতা দেশের সবার মাঝে বিরাজ করছে।
জাপান, চীন এরাও কিন্তু নকল করতে করতেই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য গোটা বিশ্বে কম খরচে বিক্রি হচ্ছে। কারণ তারা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সফল হয়েছে। তাদের নকলে ভেজাল, দুর্নীতি, ভণ্ডামি নেই এবং তারা জাস্ট ইন টাইম ডেলিভারিতে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়ে আসছে।
ভালো কিছু অর্জন করতে খারাপ কিছু বর্জন করতে শিখতে হয়। এই সহজ শিক্ষাটি আমাদের প্রশিক্ষণে নেই; যার কারণে আমরা জাপান বা চীনাদের মত বহির্বিশ্বে ব্যবসায় গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারছি না।
কথায় বলে ‘building trust building growth.’ কিন্তু আমরা বারবার কথা দিয়ে কথা রাখতে বার্থ হচ্ছি আর হাজার অজুহাত বের করছি। দেখেছেন কি বানরকে ফাঁদের ভেতর খাবার দিয়ে কীভাবে ধরে? বানর তার হাতটি দিব্যি ফাঁদের ভেতরে ঢুকিয়ে প্রথম খাবারটি ধরে পরে খাবারসহ হাত বের করতে ধরা খায়।
খাবারটি ছেড়ে দিলেই কিন্তু হাতটি বের করে সহজেই ছাড়া পেতে পারে কিন্তু কেন বানর এই সহজ কাজটি করতে বার্থ? লোভ, নাকি যত সহজ আমরা মানুষ জাতি বিষয়টি ভাবছি তত সহজ নয় তাদের জন্য। কারণ তারা তো মানুষ নয় তারা বানর। কোন কিছু অর্জন করতে কিছু বর্জন করতে হয়। বানর বর্জন করতে শেখেনি কিন্তু আমরা মানুষ জাতি পরিবর্তনে অভ্যস্ত। তাই অবশ্যই যা আমাদের জন্য ভালো নয় তা বর্জন করতে পারি। আমরা আমাদের কাজ বা আচরণে যদি শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই তবে দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি হবে না। উন্নতি হবে ব্যক্তি মালিকানার মাত্র।
একটি উদাহরণ দেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, তাঁর অফিস, তাঁর চলাফেরার নিরাপত্তা, এমনকি তিনি যখন কোথাও বেড়াতে যান সব ধরনের সুযোগ সুবিধা তাঁকে দেয়া হয়। এ ধরনের সুযোগ সুবিধা উচ্চ পর্যায়ের চাকরিজীবীরা এবং বড়লোকেরাও পেয়ে থাকে।
এখন বাংলাদেশের মোট লোকসংখ্যার মধ্যে এ ধরনের ভিআইপিদের সংখ্যা কত? বাকিদের জীবন যাত্রার মান কেমন, কীভাবে তাদের বসবাস ইত্যাদি? যেহেতু সাধারণ মানুষের সংখ্যা বেশি সে ক্ষেত্রে তাদেরকে পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে প্রথমে। শুধু যদি যার যার জায়গা থেকে কমপ্লেন করা হয় পরিবর্তন হবে না কোনদিনও।
আমি আরও একটি উদাহরণ দেই। সুইডেন, আমেরিকা এবং জার্মানিতে আমাকে কিছু লোক অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা ব্যবসা করতে চায়। আমি বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গাতে যোগাযোগ করেছি। তারা শুরুতেই যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে।
যখনই শর্তে উপনীত হয়েছে ডেলিভারি, টাইম এবং কোয়ালিটির ওপর, এর একটিও বাংলাদেশে মেনটেইন করতে সক্ষম হয়নি। এমনকি আমি নিজে অগ্রীম টাকা দিয়েছি অথচ আমার মাল নির্দিষ্ট সময়ে পাইনি। আরও সমস্যা বাংলাদেশে তা হলো ধরাধরি ছাড়া কোন কাজই হয় না।
হাসপাতালে একটি রুগী ভর্তি করতে হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবদি দৌড়াতে হবে। আছে কি বা হচ্ছে কি এমনটি চীন বা জাপানে? আমাদের স্বভাব না পরিবর্তন করা পর্যন্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলা করা যাবে না। দেশে নকলের চেয়ে ভয়ংকর সমস্যা ঘুষ, দুর্নীতি, ভণ্ডামি এবং অসততা।
সুশিক্ষার অধঃপতনের ফলে মনুষ্যত্বের অবক্ষয় যার কারণে সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথায় বলে সমস্যা যখন জানা যায় তখন সমস্যার সমাধান খুঁজতে হয়। এখন দীর্ঘদিন ধরে যে সমস্ত খারাপ কাজ আমরা অর্জন করেছি তাকে বর্জন করতে হবে, সমাধান হবেই।
“মা তোর বদন খানি মলিন হলে
আমি নয়ন
ওমা আমি নয়ন জ্বলে ভাসি
সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালবাসি।”