বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার ৬ ফর্মুলা

  © ফাইল ফটো

স্কুল কিংবা কলেজ জীবনে একটা ধরা-বাঁধা নিয়মের মধ্যে আমরা পড়াশোনা করে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে আমাদের মধ্যে এক রকম নিয়ন্ত্রনহীনতা কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে চার থেকে পাঁচ বছর অনেক লম্বা একটি সময়। এই সময়ে অনেক কিছুই করা যায়। কিন্তু করতে হলে দরকার দুটি জিনিসের— নিজের ইচ্ছে আর প্রয়োজনীয় তথ্য কিংবা গাইডেন্স।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভালো মেন্টরের ব্যাপক রকমের অভাব রয়েছে। শিক্ষকরা শিক্ষা এবং গবেষণা থেকে অন্য বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত বেশি। আবার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেও নিজেদের উন্নত করার জন্য তেমন একটা উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না।

কেমন করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এই চার থেকে পাঁচ বছরকে ভালো করে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে প্রায় অনেকেই প্রশ্ন করেন। আবার কি করলে ভালো হবে তা নিয়ে অনেক ধরণের মতবাদ আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের চার বছরকে কাজে লাগানোর জন্য এবং নিজেকে আগামী দিনগুলোর জন্য ভালো করে প্রস্তুত করার জন্য নিচের বিষয়গুলো করা যেতে পারে—

ফর্মুলা-১: প্রথমেই নজর দিতে হবে আপনার পড়াশোনার উপর। প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়াশোনা আপনাকে করতেই হবে। পড়াশোনার ব্যাপারটি অনেকটা অনুশীলনের মত। নিয়মিত চর্চা না করলে আপনার জ্ঞান কমে যেতে থাকবে। প্রথমেই নিজের ফলাফলের উপর নজর দিতে হবে। ফলাফল গ্রেডিং পদ্ধতিতে মিনিমাম ৩ রাখতে পারলে ভালো। আর হ্যান্ডসাম ফলাফল হচ্ছে ৩.৫০।

ফলাফলের অন্য প্রথম থেকেই ক্লাস করতে হবে। ক্লাস করার আগে নিজে কোর্স আউটলাইন থেকে প্রস্তুতি নেয়া ভালো। ব্যাচেলর ডিগ্রী জীবনে আমাদের মধ্যে এক ধরণের অলসতা কাজ করে। আর এই অলসতার জন্য আমরা টেক্সটবুক ভালো করে পড়ি না। কিন্তু যে কোনো টেক্সটবুক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে অনেক কিছু জানতে পারা যায়। তাই আমাদের এই অভ্যাসটি গড়ে তুলতে হবে।

ফর্মুলা-২: পড়াশোনার জীবনে সব কিছু সহজে বুঝতে পারবেন এমন না। অনেক ক্ষেত্রে আপনার বুঝতে সমস্যা হতে পারে। যে কোনো কঠিন বিষয় কিংবা টপিককে ভালো করে বুঝার জন্য তিন ধরণের রিডিং পদ্ধতি রয়েছে-

প্রথমে আপনি কেবল বিষয় কিংবা টপিকটি সম্পর্কে পড়ে যাবেন, এই ক্ষেত্রে বোঝার কোনো দরকার নেই। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনি টপিকটি লাইন বাই লাইন পড়বেন এবং প্রতিটি লাইনের অর্থ বোঝার চেষ্টা করবেন। এই ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লাগবে আপনার।

তৃতীয় কিংবা শেষ ধাপে আপনি লাইন বাই লাইন পড়বেন তবে প্রতিটি লাইন থেকে একটি কিংবা দুটি করে কীওয়ার্ড ঠিক করবেন। সবগুলো কীওয়ার্ড এক করে আপনি বিষয় কিংবা টপিকটির উপর একটি ভালো ধারণা ঠিক করতে পারবেন।

ফর্মুলা-৩: কেবল টেক্সটবুক পড়লেই কাজ শেষ হবে না। বেশ কিছু এক্সট্রা বইও পড়তে হবে যেগুলো মূলত আপনার বিষয়ের আধুনিক জ্ঞান সম্পর্কে আপনাকে ধারণা দিবে। আবার বই না পড়ে আপনি চাইলে ইউটুবে আপনার বিষয়ের উপর লেকচারও শুনতে এবং দেখতে পারেন। এতে করে আপনার বিষয়ের বেসিক আপনার কাছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে যা বাইরে পড়াশোনার জন্য খুবই দরকার।

ফর্মুলা-৪: পড়াশোনার পাশাপাশি আপনাকে বেশকিছু ট্রেনিং কিংবা সেমিনার এই বিষয়গুলোতে একটু নজর দিতে হবে। অনেক রকমের ট্রেনিং এবং সেমিনার করার সুযোগ রয়েছে আজকাল।আবার বেশ কিছু শর্ট সার্টিফিকেট কোর্সও করার সুযোগ রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি এই বিষয়গুলোতে নজর দিলে আপনার স্কিল ডেভেলপ করবে অনেক গুনে। এতে করে আপনি কর্পোরেট দুনিয়া কিংবা বাইরে পড়াশোনার জন্য নিজেকে ভালো করে তৈরী করে নিতে পারবেন।

ফর্মুলা-৫: আবার আমাদের মধ্যে ইদানিং একটি প্রবণতা কাজ করে হাতে কম লেখার। আজকাল সবাই স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ ইত্যাদি নিয়ে ব্যাস্ত। হাতে তেমন একটা লেখা হয় না বললেই চলে। অনেকেই আছেন যারা পড়তে পছন্দ করেন না কিন্তু লিখতে ভালোবাসেন। তাদের জন্য পরামর্শ জন্য আপনি না পড়ে আপনার পড়ার বিষয় কিংবা টপিক দেখে দেখে খাতায় লিখবেন।

প্রয়োজনে বইয়ের ভাষা বুঝতে সমস্যা হলে, গুগল করবেন। গুগল করে সহজ ভাষায় বিষয়টি খাতায় নোট করে নিবেন। এতে করে আপনার বিষয়টি সম্পর্কে ধারণাও ক্লিয়ার হয়ে যাবে আবার আগামী দিনে এই নোট আপনার কাজে দিবে।

ফর্মুলা-৬: ৪-৫ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে অনেকগুলো বিষয় পড়া হয়ে থাকে। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে এই বিষয়গুলোর বেশিরভাগই অনেকের মনে থাকে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একদম প্রথম থেকেই একটি ৩০০-৪০০ পৃষ্ঠার খাতা কিনতে হবে যাতে আপনি প্রতি সেমিস্টারে কি কি কোর্স ছিল এবং কি কি জিনিস শিখেছেন তা নোট করে রাখবেন। আবার বেশ কিছু পয়েন্ট যা আপনার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হয় তাও নোট করে রাখবেন।

আপনি যাই করেন না কেন এই বিষয়টি আপনাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। বিশেষ করে যারা বাইরে পড়াশোনা, গবেষণা কিংবা শিক্ষকতা করতে চান তাদের জন্য এটি অনেক ভালো কাজে দিবে।

পরিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের আমরা মূল্যবান সময়গুলো অনেক রকম দরকার নয় এমন কাজ করে শেষ করে ফেলি। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন হচ্ছে আগামী দিনগুলোর প্রস্তুতি গ্রহণের জীবন। তাই এই এই জীবনের প্রতিটি সময়কে কাজে লাগাতে হবে নতুন কিছু জানতে, নতুন কিছু করতে এবং নতুন কিছুর সৃষ্টি করতে।

আশা করছি এই গাইড লাইন মোটামুটি ভালো করে অনুসরণ করলে আপনারা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জিং সময়ের জন্য নিজেদের ভালো করে তৈরী করে নিতে পারবেন।

লেখক: বিবিএ (ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা) ১৪ তম ব্যাচ
এমবিএ (ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া),
ফিন্যান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষক (জাপান)


সর্বশেষ সংবাদ