প্রথম বর্ষের আশ্রয়টুকু কেড়ে নেবেন না মাননীয় উপাচার্য
প্রথম বর্ষের আশ্রয়টুকু কেড়ে নেবেন না মাননীয় উপাচার্য। কথাটা বলার কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে না উঠতে অনুরোধ জানিয়েছেন মহান উপাচার্য ড. মো.আখতারুজ্জামান। ফেসবুক আর দুটো অনলাইনের খবরে আজ পড়লাম। আমি জানি না উপাচার্য স্যার আসলেই এভাবে বলেছেন কী না। ঘটনাটা মিথ্যা হলে আমার স্ট্যাটাসটা শেষ। কিন্তু যদি মহান উপাচার্য এমন কথা বলে থাকেন বা ভেবে থাকেন, তাহলে বলবো, শিক্ষার্থীদের সমস্যা কিংবা বাস্তবতা থেকে তিনি যোজন যোজন দূরে।
মাননীয় উপাচার্য, আপনি বোধহয় জানেন না একটা ছেলে বা মেয়ের হলটা সবচেয়ে বেশি লাগে প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরুর পর পর। এরপর যতো সময় যায় ততোই ছেলে বা মেয়েটা সবকিছু বুঝতে শেখে। তার বন্ধুবান্ধব হয়। একটা টিউশনি মেলে। সে লড়াই করতে শেখে। পরে তার আর সমস্যা হয় না। কাজেই প্রথম বর্ষে ছেলেমেয়েরা হলে উঠতে মরিয়া থাকবে। আপনি ওঠা যাবে না বলে মূলত ছাত্রনেতাদের কাছে সাধারণ ছেলেমেয়েদের ধর্ণা দেওয়ার পথটা আরও প্রতিষ্ঠিত করলেন।
মাননীয় স্যার, আপনি না এর আগে বলেছিলেন, মাস্টার্স পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার ১৫ দিন পর কোনোক্রমেই কেউ হলে অবস্থান করতে পারবে না। সেটার কী হলো? এর চেয়েও বেশি জরুরী হলগুলো থেকে অছাত্রদের বার করা। তার কী হলো?
মাননীয় স্যার, আপনি গত অক্টোবর মাসেও প্রথম বর্ষে ছেলেমেয়েদের হলে না ওঠানোর কথা বলেছিলেন। পরে ছেলেরো আন্দোলন করলে আন্দোলনকারীদের আপনার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে প্রথম বর্ষে আবাসিক হলে সিট বরাদ্দ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আপনার কী মনে আছে স্যার, আবাসন সংকট সমাধানে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় আপনার বাসভবনের সামনে ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান সৈকতের নেতৃত্বে বই, তোষক, বালিশ নিয়ে অবস্থান নিয়েছিল গণরুমের শিক্ষার্থীরা। আপনারা তখন সিট সংকট নিরসনে হলের অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণদের বের করার অভিযান চালানোরও আশ্বাস দেন। কী হলো তার?
মাননীয় স্যার, উপাচার্যের ওই বিশাল বাংলো বাড়িতে বসে বা কিছু ভুল মানুষ দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে আপনার পক্ষে বাস্তবতাটা বোঝা কঠিন। আমি বরং, আপনাকে বলবো প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরুর ১৫ দিন আগে সেই ছেলেমেয়েগুলোর হলের ব্যবস্থা করুন। যারা ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। আর পারলে রাজনৈতিক নেতাদের বদলে হল প্রশাসন কাজটা করুন।
মাননীয় স্যার, আপনার বোধহয় জানা নেই হলের ওই গণরুম, এক টুকরো বারান্দা বা মসজিদটাই এই শহরে বহু শিক্ষার্থীদের একমাত্র আশ্রয়। একবেলা বা দুবেলা খেয়ে বা না খেয়ে সেই আশ্রয়ে বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী টিকেছিল এই শহরে যারা পরবর্তীতে জীবনযুদ্ধে সফল হয়েছে।
মাননীয় স্যার, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলের আশ্রয়টা আপনি আরও সুন্দর করতে না পারেন, দয়া করে উঠিয়ে দেবেন না। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাহলে বহু ছেলেমেয়ের জীবন অনিশ্চিত হয়ে যাবে। দয়া করে সেই ভয়াবহ অনিষ্টটা করবেন মহান উপাচার্য। এর চেয়ে আপনি বরং আপনার বাংলোয় আরাম করে ঘুমান। শুভরাত্রি।
লেখক: সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী
পড়ুন: ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরা যেন হলে না উঠে: ঢাবি উপাচার্য