বাণিজ্যিক সান্ধ্য কোর্স এবং কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের দায়

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বেশ রসিক মানুষ হিসেবেই পরিচিত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তার কৌতুকপূর্ণ বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাড়াও ফেলে। এর মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু সমস্যা নিয়ে তিনি সমালোচনা করেন প্রায়ই, যেগুলো আসলেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে সান্ধ্য কোর্সের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ এখনকার শিক্ষাব্যবস্থার কথা বিবেচনা করলে বিশ্ববিদ্যালগুলোর আচার্যের কথাগুলো নিখাদ বাস্তব, আগেও তিনি এভাবে সমালোচনা করেছেন।

দেশের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালু আছে, সেখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে দীর্ঘদিন। ছাত্রজীবনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত থেকে তা স্বচক্ষেই দেখেছি। অনেকে বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেনও, তবে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে পারেননি নানা সীমাবদ্ধতার কারণে। অবশ্য কিছু বাম ছাত্র সংগঠন এগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। তবে তা জোরালো না হওয়ায় আলোর মুখ দেখেনি। এই সান্ধ্য কোর্সকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে রীতিমতো ‘শিল্পের’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে গেলে যার দেখা মিলবে। শুধু ব্যবসায় শিক্ষা নয়, আরও কয়েকটি অনুষদের বেশ কিছু বিভাগ ও ইনস্টিটিউটেও চলছে রমরমা সান্ধ্য কোর্স বাণিজ্য।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। বিশেষত আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে নাম না থাকা, গবেষণার বেহাল দশা, সহিংস ছাত্র-রাজনীতি, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ আরও অনেক কিছু নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর সঙ্গে সান্ধ্য কোর্সের মতো কিছু বিষয় দেশের উচ্চশিক্ষায় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। রাষ্ট্রপতির মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এখন ডিপার্টমেন্ট, সান্ধ্য কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও ইনস্টিটিউটের ছড়াছড়ি। নিয়মিত কোর্স ছাড়াও এসব বাণিজ্যিক কোর্স থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। এসব ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

দেশে শতাধিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কোর্স রাখার যৌক্তিকতা কি? কার স্বার্থে? কেনই বা এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না? এ প্রশ্নের উত্তর সেই এক জায়গায় আটকে। সেটি আর্থিক। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আচার্য তার বক্তব্যে সে প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে দিয়েছেন। এতে একশ্রেণির শিক্ষক লাভবান হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তারা নিয়মিত নগদ সুবিধা পাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের পাশাপাশি সার্বিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। তার বক্তব্যের সবচেয়ে আলোচিত অংশ ছিল, ‘অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। কিছু শিক্ষক আছেন, যারা নিয়মিত কোর্সে উদাসীন। কিন্তু সান্ধ্য কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা খুবই সিরিয়াস। কারণ এগুলোতে নগদ প্রাপ্তি থাকে।’

সবমিলিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কার, কিছু শিক্ষকের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় বৃদ্ধি এসব বাণিজ্য কোর্স চালানোর পেছনে মূল কাণ্ডারি হিসেবে কাজ করছে। ফলে যত সমালোচনায় হোক কিংবা মান নিয়ে যতই প্রশ্ন উঠুক না কেন, তাতে আসলে তারা কর্ণপাত করেন না, কর্তৃপক্ষও দেখে না দেখার ভান করে বসে থাকেন। গত নভেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণির শিক্ষকদের এমন সমালোচনা করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আদর্শ, প্রচেষ্টা, বৃত্তি ছাড়া, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। একজন শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ ও ন্যায়-নীতির প্রতীক। কিন্তু ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন অনেক শিক্ষক। এটা একজন শিক্ষকের জন্যই শুধু নয়, গোটা শিক্ষক সমাজের জন্যও অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর।’ ব্যক্তি স্বার্থের কাছে আদর্শ যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয় সে দায়িত্ব শিক্ষকদেরই নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমালোচনা করে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু জনগণের টাকায় চলে, এর জবাবদিহিও জনগণের কাছে।’

তবে সব শিক্ষক কিংবা উপাচার্য যে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ঢালাওভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। কিছুদিন আগে একটি নিউজের প্রয়োজনে কথা হয় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। সান্ধ্য কোর্সের জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে চাপ আসে সে কথা তিনি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষকদের সান্ধ্য কোর্সে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, আমার বিশ্ববিদ্যালয়েও চাপ রয়েছে। তবে আমি এর পক্ষে নই। এতে স্বাভাবিক শিক্ষা কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এসব কোর্সের মানও ভালো নয়। তাছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ব্যবহার করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম করাকে সমর্থন করি না। শিক্ষকদের অবশ্যই গবেষণায় আগ্রহী হতে হবে।’ চাপে পড়েও কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সান্ধ্য কোর্সের অনুমোদন দেননি।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ইভিনিং, ডিপ্লোমা, স্পেশালাইজড, প্রফেশনালসহ নানা নামে দেশের ২০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে কোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি সান্ধ্য কোর্স। ৩৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে অর্ধশতাধিক সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ১৯টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে চালু রয়েছে সান্ধ্য কোর্স। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি করে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটিসহ বেশ কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে বিতর্কিত সান্ধ্য কোর্স।

আশার কথা হলো, রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্য দেওয়ার একদিন পরেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সান্ধ্য কোর্স বন্ধ, উপাচার্যদের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন এবং নতুন বিভাগ ও পদ সৃষ্টিতে ইউজিসির পূর্বানুমোদন গ্রহণ, নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসরণসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। বিতর্কিত সান্ধ্য কোর্স বন্ধে এটি ভালো একটি অগ্রগতি সন্দেহ নেই। তবে ইউজিসির নির্দেশনা কিন্তু মানতে বাধ্য নয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়গুলো। তাদের মর্জির ওপর নির্ভর করবে, সান্ধ্য কোর্স থাকবে নাকি বাতিল হবে।

অবশ্য ইউজিসির নির্দেশনার পরপরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সান্ধ্য কোর্স বাতিল করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। যাদের সান্ধ্য কোর্স নিয়ে বিতর্ক বেশি, বিশেষত ঢাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলায়- তাদের কাছ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি। তবে সান্ধ্য কোর্স নিয়ে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আগেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন। এতে অনেক অসংগতি পাওয়া গেছে উল্লেখ করে এও জানিয়েছেন, আগে থেকেই সান্ধ্য কোর্স পছন্দ করেন না তিনি। দেশের শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এমন অবস্থান ভালো দিক নিঃসন্দেহে।

ইউজিসির নির্দেশনার পর নানা মহলে আলোচনা চলছে। অনেকের ভয়ের জায়গাটা আসলে অন্যখানে। তাদের মতে, শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী। সে অনুযায়ী, ইউজিসির নির্দেশনা মানতে বাধ্য নন তারা। এছাড়া সান্ধ্য কোর্সের সঙ্গে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ারও ব্যাপার রয়েছে। ফলে তারা এ নির্দেশনা মানবেন কি না, তা নিয়ে কিন্তু সংশয় রয়েই গেছে। সে জন্য ইউজিসি নির্দেশনা দিলেও সান্ধ্য কোর্স বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কোনো আশা-ভরসা দেখছেন না অনেকে। তবে আশার দিকও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি নিজে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় সান্ধ্য কোর্স বাতিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচেষ্ট হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

ইউজিসির নির্দেশনার পর উল্টো চিত্রও দেখা গেছে। মাত্র একদিন পরেই সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গত শুক্রবারের পত্রিকায় দেখা গেছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ সান্ধ্য কোর্সে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। পিছিয়ে থাকেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। আইবিএ থেকে দেওয়া হয়েছে এক্সিকিউটিভ এমবিএ ভর্তির বিজ্ঞপ্তি। যেটাকে সান্ধ্য কোর্সকে একটু ভিন্ন নামে চালানো বলে অভিহিত করেছেন অনেকে। ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার গণমাধ্যমকে বলেছেন চরম বাস্তব (!) একটি কথা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ইভিনিং বলে কিছু নেই, এক্সিকিউটিভ এমবিএ। ইউজিসি কোথাও এক্সিকিউটিভ এমবিএ নিয়ে নিষেধ করেনি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসি আমরা নিজেরাই ঠিক করি।’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্স বাণিজ্যিকভাবে চালানো হচ্ছে সেটা স্পষ্ট। এটি চালানোর পেছনে সংশ্লিষ্টরা যেসব যুক্তি দিচ্ছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মনে রাখা জরুরি, দেশের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের টাকায় চলছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তাদের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সে দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি স্কেলে সর্বোচ্চ গ্রেডে প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বেতন পাচ্ছেন। সেখানে আর্থিক বিষয়টি কারণ হিসেবে তোলার সুযোগ নেই। সরকারি অবকাঠামো ব্যবহার করে বাণিজ্য চলতে পারে না। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াসহ আরও অনেকভাবেই শিক্ষকদের আয়ের সুযোগ রয়েছে। ভালো গবেষণা করলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসহ অনেক কিছুই মিলবে। সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য দারুণ সম্মানেরও বটে।

বাণিজ্যিক সান্ধ্য কোর্স চালানোর জন্য বহুলাংশে এক শ্রেণির শিক্ষকের আগ্রহকে বেশি দায়ী করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, গবেষণা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোর্সে আগ্রহ কমলেও সান্ধ্য কোর্স এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে তাদের আগ্রহ বেশি। শুধু আর্থিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণির শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ড নৈতিকভাবেও সমর্থনযোগ্য নয়। যুগে যুগে শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন মানুষ। কিছু শিক্ষকের কারণে সে মর্যাদার আসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা কাম্য নয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে এবং জনগণ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সান্ধ্য কোর্স অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সঙ্গে মৌলিক গবেষণা এবং মূলধারার কোর্সে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা জোর দেবেন বলেই প্রত্যাশা সবার।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি ও মৌলিক কাজ। কিন্তু সেখানেই শিক্ষকদের আগ্রহ ক্রমেই কমতে দেখা যাচ্ছে। এটা প্রত্যাশিত নয়। শিক্ষকদেরকে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পাশাপাশি গবেষণায় আগ্রহী হয়ে ওঠাটা সবচেয়ে প্রত্যাশিত। তা না করে, সান্ধ্য কোর্সে আগ্রহী হওয়া যৌক্তিক নয়। এসব কোর্সের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোযুক্ত সনদ পেতে অনেকে চড়া মূল্যে এ ধরনের কোর্স করতে আসেন। সে ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে পৌঁছায়? মনে রাখতে হবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা এবং গবেষণাকর্ম যত এগিয়ে যাবে, দেশও তত সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু সান্ধ্য কোর্সে বাড়তি গুরুত্ব দিলে তা উচ্চশিক্ষায় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দেশে উচ্চশিক্ষিত মানুষ বাড়লেও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব কিন্তু বাড়ছে। সবদিক বিবেচনা করে এবং রাষ্ট্রপতির সমালোচনা ও ইউজিসির নির্দেশনা আমলে নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্রুত সান্ধ্য কোর্স বন্ধে পদক্ষেপ নেবে-দেশের একজন নাগরিক হিসেবে প্রত্যাশা থাকবে সেটাই। (সূত্র: শেয়ার বিজ)

গণমাধ্যমকর্মী
touhiddu.rahman1@gmail.com


সর্বশেষ সংবাদ