জেরেমি করবিন: ভুল সময়ের বাঁশিওয়ালা না বাকসর্বস্ব রাজনীতিবিদ?
ব্রিটেনের রাজনীতিতে বড় আলোড়ন তুলে হাজির হয়েছিলেন জেরেমি করবিন। আমার মতো হাজার-হাজার মাইল থেকে দূরে থাকা মানুষটিও তাঁর ভক্তে পরিণত হয়েছিল। তাঁর আগমনে সংখ্যালঘু ও অভিবাসীরাও নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছিল।
গ্রেট ব্রিটেনের রাজনীতিবিমুখ তরুণরাও বেশ ভালোই সাড়া দিয়ে আসছিল। সংবাদমাধ্যম লিখেছিল, করবিন নামের পঁয়ষট্টি পেরোনো লোকটি লেবার পার্টির দেড়শ’ বছরের ইতিহাসে বিপুল এক বিস্ময় হিসেবে দেখা দিয়ে জনমনে রাজনীতি ও রাজনৈতিক বিষয়ে দারুণ আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হলেন।
তাও আবার কোন সময়ে? যখন কিনা ব্রিটেনের মতো দেশে সাধারণ মানুষ রাজনীতির নামে বিরক্ত, তরুণেরা রাজনীতি নিয়ে দৃশ্যত অনাগ্রহী, নব্য উদারনীতিওয়ালাদের পীড়নে উদারনীতিবাদের রাজনীতি প্রায় গায়েব।
তাঁর নতুনত্ব, অভিবাসন নিয়ে সুস্পষ্ট রেটোরিক, সিরিয়া-সৌদি আরব-বাহরাইন নিয়ে সোজাসাপ্টা কথা, সংখ্যালঘুর পক্ষে অবস্থান তাঁকে যেমন সাধারণের মোহের কেন্দ্রবিন্দুতে হাজির করেছিল, তেমনি এই মোহের দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়েও শঙ্কা ছিল শুরু থেকেই। তাই রাজনীতির প্রপঞ্চতে প্রশ্ন ছিল- করবিন সাধারণের ছায়াপথ হয়ে থাকতে পারবেন, নাকি ধূমকেতু চরিত্রে সমাপ্ত হবেন?
গতকালের নির্বাচনের ফলের অবস্থাদৃষ্টে যা মনে হচ্ছে, তিনি ধূমকেতু চরিত্রে সমাপ্ত হতে যাচ্ছেন। নির্বাচনে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছে বরিস জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টি। লেবার পার্টির আসন্ন শোচনীয় পরাজয়, বরিস জনসনদের মতো উন্মাদদের এই জয়জয়কার অবস্থার জন্য অনেকে করবিনকেই দায়ী করছেন।
তাঁদের মতে, ব্রেক্সিট নিয়ে প্রাগম্যাটিক কোন প্রোপোজিশন না থাকায় করবিনের বাকসর্বস্ব রাজনীতি অচল হিসেবে প্রমাণিত হল। অপরদিকে এটাও সত্য, পুরো পৃথিবী এখন উন্মাদদের দখলে। ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে জেইর বলসোনারো থেকে বরিস জনসন- সবাই তো যেন উন্মাদ। হয়তো পাগলদের জয়জয়কারের এই ভুল সময়েই করবিন এসেছিলেন আদর্শের ফেরিওয়ালা হয়ে।
তাই ধূমকেতু চরিত্রে সমাপ্ত-করবিন, আপনাকে বিদায়। লাল সালাম।
লেখক: ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত এবং লেকচারার, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি