ভারতে আইন পাস, বিপদ ধেয়ে আসছে বাংলাদেশে!
ভারতের লোকসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস হয়েছে। এই বিল অনুযায়ী পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আগত সমস্ত অমুসলিম ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে শুধু মুসলিমদেরকে কোন নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।
এর আগে আসামে এনআরসির ফলে প্রায় ১৯ লক্ষ ভারতীয় নাগরিককে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। আর তখন সবাইকে অবাক করে দিয়েই, এই ১৯ লক্ষের মধ্যে প্রায় ১৪ লক্ষেরও বেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিককে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ বলেও ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন আজকের এই বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশের ফলে সেই ১৪ লক্ষেরও বেশী হিন্দু সম্প্রদায়কে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা দেয়া হলো। অন্যদিকে এই ১৯ লক্ষের মধ্যে থেকে বাকী রইলো প্রায় ৫ লক্ষ মুসলিম। যাদেরকে ইতিমধ্যেই ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আর আজকের এই বিল পাশের মাধ্যমে তাদেরকে নাগরিকহীন করে দেয়া হলো। আজকে থেকে তারা ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ বলে ভারতের মাটিতে অবৈধ হয়ে গেলো। এখন তাদের সহায়-সম্পত্তি, বাড়ি-ঘর, ব্যাবসাসহ সবকিছু রাষ্ট্রীয় আইনেই জোরজবরদস্তি অধিগ্রহণ করে নেওয়া হবে। এরপর তাদেরকে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকানো হবে। রাতারাতি ভারতের এই মুসলিম নাগরিকরা রাস্তার ফকিরে পরিনত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পের বদ্ধ কারাগারে থাকতে বাধ্য হবেন।
এটাতো শুধু এক আসাম রাজ্যের ঘটনা। এরপর অমিত শাহ’র ঘোষনা মতে পুরো ভারতজুড়ে এনআরসির মারাত্মক খেলা শুরু হবে। ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম নাগরিকদের পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আগত ‘অনুপ্রবেশকারী’ ঘোষনা দিয়ে তাদেরকে নাগরিকত্বহীন করে তাদের বাড়ি-ঘর ক্রোক করে ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢুকানো হবে। তবে, ভারতের এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে শুধু ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম নাগরিকরা একাই ভয়াবহ বলির শিকার হবে না। বরং এতে ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান নামক মুসলিম রাষ্ট্রগুলো অচিরেই কোটি কোটি নাগরিকত্ববিহীন ভারতীয় মুসলিম নাগরিকের ভয়ংকর পুশইন তাণ্ডবের শিকারে পরিনত হবে।
ইতোমধ্যেই ভারত থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে অবৈধভাবে ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের গণহারে পুশইন করা শুরু হয়ে গেছে। সীমান্তে বিজিবি কয়েক দফা এদেরকে গ্রেফতার করে জেলেও পাঠিয়েছে। যদিও আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ অবধি এটা জানেনই না বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন! অন্যদিকে ভারতের নানা প্রান্ত থেকে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে অসংখ্য মুসলিম নারী-পুরুষদের আটক করে দলে দলে কলকাতায় নিয়ে এসে গোপনে ও জোর করে সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে। যা খোদ ভারতের সংবাদ মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে।
আসলে ভারতের উগ্র হিন্দুবাদী সরকার জানে যে, নাগরিকত্ব হারানো মুসলিমদের ভারত থেকে তাড়ানোর আইনী পদ্ধতিটা অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘ। তাই ইতিমধ্যেই তারা এদেরকে তাড়ানোর ডিপোর্টেশন নামক স্বীকৃত আইনী পদ্ধতির ধারে কাছেও না গিয়ে, উল্টা অপেক্ষাকৃত দুর্বল তাবেদার প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে এদেরকে পুশইন করা শুরু করে দিয়েছে। যা এই বিল পাশের মাধ্যমে আজকে থেকে আরো ব্যাপক হারে ঘটতেই থাকবে।
কারণ মোদি সরকার জানে, ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুসারে, এরা যদি ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হয়েও থাকে, তাহলে আদালতে পেশ করে তারা যে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছে সেটার প্রমাণটা আগে দিতে হবে। তারপর ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে এদেরকে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করতে হবে। যা মোদি সরকারের জন্য অত্যন্ত দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ। তাই এতোসব দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতির তোয়াক্কা না করে সোজা গায়ের জোড়ে এদেরকে বাংলাদেশে পুশইন করাটাই হতে যাচ্ছে মোদি-অমিতের উগ্র হিন্দুবাদী চেতনার পরবর্তী পদক্ষেপ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, চরমভাবে বিভক্ত জাতীয় ঐক্যহীন ভারতের তাবেদার এই বাংলাদেশ রাষ্ট্র কি তার উপর আসন্ন এই ভয়াবহ দুর্যোগের মোকাবিলা করার শক্তি রাখে?
লেখক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ