অজয় স্যার চলে গেলেন, বেদনা বুকে কাসেম স্যার এখনও আছেন
একদিন কলাভবন লাউঞ্জে আবিষ্কার করলাম অজয় স্যার আর কাসেম স্যার পাশাপাশি বসে আছেন। দু’জনকে একসাথে বসে থাকতে দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো। হতভাগ্য দুই বাবা, দু’জনই সন্তানকে হারিয়েছেন। তাদের তারুণ্যে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করে, চিন্তার প্রকাশ করে তারা জয়ী হয়েছেন, বিদেশী শোষকদের বিরুদ্ধে। তাদের সন্তানরা স্বাধীন দেশে, স্বজাতির কাছে পরাজিত হয়েছেন।
একজন লেখক, আরেকজন প্রকাশক। একই ক্যাম্পাসে দু’জন বড় হয়েছেন, দুই বন্ধু। একজনের বই লিখে, আরেকজন সেই বই প্রকাশ করে ঘাতকের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই দু’জন আমার বয়েসী। অভিজিতের জন্ম ১৯৭১ সালে, আমারও তাই।
দু’জনের মৃত্যুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সভা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। জঙ্গিগোষ্ঠীর টার্গেট কিলিং, সরকারের ভিক্টিম ব্লেমিং- সবকিছুরই প্রতিবাদ করেছি, আজও করছি। তাবড় তাবড় লোকজন ইঁদুরের মতো গর্তে ঢুকেছে, আমরা অল্প কিছু লোক ভয় পাইনি। প্রতিবাদ করেছি।
কিন্তু অজয় স্যার বা কাসেম স্যারের সঙ্গে অভিজিৎ বা দীপনের ব্যাপারে কথা বলতে খুব ভয় লাগে, সাহসে কুলায় না। কোনোদিন তাই বলাও হয়নি।
সেদিন কলাভবনের লাউঞ্জে দু’জনকে একসাথে দেখে কাছে যাবারই সাহস হয়নি। গভীর বেদনাসহ অজয় স্যার চলে গেলেন। গভীর বেদনা বুকে নিয়ে কাসেম স্যার এখনও আছেন।
লেখক: অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়