আমি, আরবী বিভাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- মাহমুদ হাসান তাবিব
- প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০১:৫৫ PM , আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০২:০৬ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী ভাষার উপর স্নাতক করছি। দু’হাজার পনেরো সালের ভর্তি পরীক্ষায় আমি ‘খ’ ইউনিট থেকে এই বিভাগে ভর্তি হই। আরবী ভাষায় ভর্তি হবার পেছনের মূল কারণ ছিলো আমার বাবা। তিনিও এই বিভাগ থেকেই পড়াশোনা করেছেন।
আমার বাবা অদ্ভুত রস-কষহীন রাগী মানুষ। তবে বাবার উপর আমার আস্থা প্রচুর। তিনি আরবী বিভাগে ভর্তি হতে বললেন। আমি আর কিছুই ভাবিনি। বাবা যখন বলেছেন, আরবী বিভাগ সেরা। বাবারা সন্তানের জন্য সবসময় সেরা জিনিসগুলই পছন্দ করেন।
আরবী বিভাগকে যারা কাঠমোল্লার হাবিজাবি মনে করেন তাদের জন্য আফসোস! আহা, যদি বুঝতেন। আমি বলছি না আরবী বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা বিভাগ। কিন্তু এটি যে ঢাবির সেরা বিভাগগুলোর থেকে কোনোভাবেই কম নয় এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
আজকের পুঁজিবাদি বিশ্ব চিনে টাকা। এজন্য টাকা দিয়েই শুরু করি। পৃথিবীর টাকার খনি হচ্ছে আরব বিশ্ব। একটি ল্যাম্বর্গিনি যেখানে উন্নত বিশ্বের মানুষের স্বপ্ন সেখানে আরবের শেখদের পছন্দ স্বর্ণের ল্যাম্বর্গিনি। তথাকথিত উন্নত দেশগুলো যেখানে কুত্তার গলায় বেল্ট পরিয়ে ঘুরে, সেখানে আরবের পিচ্চি বাচ্চারা সিংহ পুষে। বাঘকে তারা খাচায় রাখে না। বরং বিড়ালের মত পুষে।
এই আরবের সাথে বিজনেস করার মত সক্ষম শিক্ষা আরবী বিভাগে দেয়া হয়। আরবের সাথে বিজনেসকে যারা এখনো না বুঝে গুনায় ধরছেন না তাদের স্মরণ করিতে দিতে চাই, সিডরের পর পৃথিবী থেকে বাংলাদেশে আঠারশ কোটি টাকা অনুদান এসেছিলো। এক আরব ব্যবসায়ী একাই দিয়েছিলেন সারে নয়শ কোটি টাকা। সে ব্যবসায়ী নিজের নাম পর্যন্ত প্রকাশ করেননি।
আরবের সাথে একটি বিজনেস ডিল যে কত বড় হতে পারে তা চাকরি খোঁজা আমাদের জন্য বুঝা একটু কঠিনই বটে।
এবার আসি সাহিত্যের বাজারে। আরবী ভাষায় লিখা উপন্যাস গল্প নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। এ এক বিশাল ভান্ডার। বাংলাদেশে বর্তমান সিনেমা, নাটক, টেলিফিল্মে যা হচ্ছে তা আপনারা দেখছেন। ভালো গল্পের অভাব কতটুকু তা আপনারা ভালই জানেন। আরবী ভাষায় আমার দেখা হাজার গল্প যে কত নাটকের, সিনেমার স্ক্রিপ্ট হতে পারে তার ইয়াত্তা নেই।
সম্প্রতি আমার কয়েকজন বন্ধু নাটকের স্ক্রিপ্ট করছে। সুনামধন্য একজন নির্মাতা নাটক নির্মাণ করবেন। প্রতিটি নাটকের জন্য ওরা যা পাচ্ছে, তা একজন বিসিএস ক্যাডারের মাসিক বেতনের থেকে অনেক বেশি। ওদের একটি গল্পের স্ক্রিপ্ট করতে দুই সপ্তাহের বেশি লাগে না।
প্রতিটি বিভাগেই ভালো ছাত্র-খারাপ ছাত্র থাকে। আমি ভালো ছাত্রদের কথা বলছি। আরবী বিভাগে যারা ভালো ছাত্র তারা আমার দেখা লিজেন্ড। একটু উদাহরণ দেই। আবদুল্লাহ মাহমুদ নজীব আমার দেখা আরবী বিভাগের একজন আদর্শ শিক্ষার্থী। তার কোয়ালিফিকেশন বলতে গেলে একটি কথাই বলব, তার লেখা ‘বৃষ্টিমুখর রৌদ্রমুখর’ বইটি পড়ুন। দুর্দান্ত ছেলেটি আমার দেখা ঢাবির সেরা শিক্ষার্থী।
এ তো একজন নজীব গেলো। যারা আরবী বিভাগের সিলেবাস মোটামুটি আয়ত্ত্বে আনতে পেরেছে তাদের প্রত্যেককে দেখেই আপনি অবাক হবেন। যেমন আরবী তেমন ইংরেজি। সাথে সমসাময়িক বিশ্বের জ্ঞান থাকলে এই পৃথিবীতে চলতে কিছু লাগে না বলে মনে হয়।
এতক্ষণ যে আলোচনা শুনলেন তা সিলেবাসের বাহিরের। বিসিএস ক্যাডার আরবী বিভাগ থেকেও হচ্ছে। ব্যাংকে, অফিসে, কল কারখানা-ইন্ডাস্ট্রিতে আরবী বিভাগের শিক্ষার্থীরাও জব করছে। সমানে সমান।
আমি বলতে চাচ্ছি, বিএমডব্লিউ যদি খারাপ ড্রাইভার চালায় এবং এক্সিডেন্টে হয় তাতে বিএমডব্লিউ এর কিছু যায় আসে না। আমার চোখে আরবী বিভাগ ঢাবির একটি বিএমডব্লিউ সাবজেক্ট।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
(ফেসবুক থেকে নেয়া)