শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফু দিলেই উড়ে যাবে সন্ত্রাসীরা
সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে রাবিতে মানববন্ধন করেছে কিছু ছাত্র! এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ এটা শুধু রাবিতেই প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় খুনি ও সন্ত্রাসীদের পক্ষে মানুষের মত দেখতে কিছু অমানুষের দেখা মিলেছে! নুসরাতের খুনিদের পক্ষেও মানববন্ধন হয়েছিল, তারাও নিজেরা ছাত্র পরিচয় ব্যবহার করেছিল!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সোহরাবকে নির্যাতনে আহত করার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের ২ নেতার বেধড়ক মারধরে মারাত্মকভাবে আহত হন ওই শিক্ষার্থী। এতে তার মাথা সহ বাম হাতের দুই জায়গাও ভেঙে গেছে।গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের তৃতীয় ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।
এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে এবং মহাসড়ক অবরোধ করে। পরের দিন আবারও প্রশাসন ভবন অবরোধ করলে প্রশাসন তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের ঘোষণা দেয়।
সে আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে নিজদের অবস্থান ক্ষমতা দেখাতে, সন্ত্রাসীদের পক্ষে মানববন্ধন করেছে কিছু নামধারী। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সন্ত্রাসীদের রামরাজত্ব চলছে, তার পক্ষেই যে এ মানববন্ধন তা দৃশ্যমান হলো!
সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি গোটা বিশ্ববিদ্যালয়! তা না হলে ৩৮ হাজার স্টুডেন্টের ক্যাম্পাসে গুটি কয়েক সন্ত্রাসী একের পর এক সন্ত্রাস করে পার পেয়ে যেতে পারে? আজ হাজার হাজার শিক্ষার্থীর চোখের সামনে কিছু অমানুষের দল সন্ত্রাসীদের পক্ষে গলা উঁচু করে কথা বলার স্পর্ধা দেখায় কি করে? এই কারণেই সাহস পায় যে, আমরা সংখ্যায় ৩৮ হাজার হলেও অন্যায়কে অন্যায় বলার সৎ সাহস আমরা ৩৮ জনও পাই না!
একবার চিন্তা করুন গোটা ক্যাম্পাসে যত অন্যায়, অবিচার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে এর সাথে জড়িতদের সংখ্যা কত হবে? ৫০-১০০? খুব বেশি হলে ২০০? শতকরা হিসেবে এরা ০.২৬-০.৫৩%!
সন্ত্রাসীদের সংখ্যা যেখানে ১% এরও কম সেখানে কিভাবে তারা ৯৯%+ শিক্ষার্থীদের উপর আধিপত্য আর নির্যাতন বজায় রাখতে পারে? এই জন্যই পারে যে আমরা ৯৯% এর মধ্যে ১% শিক্ষার্থীও প্রতিবাদ করার সাহস পাই না! আমরা সবাই মুখ বন্ধ করে সকল জুলুম নির্যাতন সহ্য করি! আমাদের এই নিরবতা সন্ত্রাসীদের উৎসাহী করে।
অর্থাৎ আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিনা মানে কোন না কোনভাবে অন্যায়কেই সমর্থন করছি, প্রশ্রয় দিচ্ছি! এটা কি সন্ত্রাসীদের শক্তিশালী করার জন্য যথেষ্ট নয়?
শিক্ষার্থীরা যখন এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে, প্রতিবাদে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে, সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করছে ঠিক তখনই সন্ত্রাসীরা নিজেদের শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে!
তারা বিভিন্নভাবে ফেসবুকে সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কুটূক্তি খাড়া করছে! আজ যখন প্রকাশ্যে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের শাস্তি বাতিল চায় এবং আন্দোলনকারীদের উস্কানীদাতা, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল করার ষঢ়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় কি! এখন আশঙ্কা হচ্ছে সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারীদের কোনো ক্ষতি করবে কিনা?
সন্ত্রাসীদের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছিল প্রক্টর মহোদয় তখন বলছিলেন যারা হামলা করেছে, মেরে রক্তাক্ত করেছে তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না, এদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চালাবে! তিনি আরও বলেছিলেন, 'যে ঘটনা ঘটেছে একজন শিক্ষার্থীও এটাকে সমর্থন করবে না এমনকি আমিও না!'
তাহলে প্রক্টরের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের সমর্থন করে মানববন্ধন করল কিভাবে? অথচ শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে গেলে প্রক্টর নানানভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা! করেন! তাহলে কি ভেবে নেব প্রশাসনও সন্ত্রাসীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে?
চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে সহজেই প্রতিয়মান হবে যে প্রশাসনের আশ্রয় প্রশ্রয়েই সকল অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে! এবং এরপর ক্যাম্পাসে যত অপকর্ম হবে সবগুলোর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।
আর ছাত্রলীগের যারা নিজেদের ক্লিন ইমেজধারী দাবি করেন, তারা কি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পেরেছেন? যারা বলেন ছাত্রলীগের সবাই সন্ত্রাস না, তারা কি সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছেন? নাকি সন্ত্রাসীদের সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছেন? যদি না পারেন তাহলে কি দায়টা আপনাদের সবার উপর বর্তায় না?
সর্বপরি বলতে চাই গুটি কয়েক সন্ত্রাসীদের কাছে ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী তথা গোটা ক্যাম্পাস জিম্মি থাকতে পারে না! আমরা ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে চাই। গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে চাই। ভয়হীন নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে চাই। সাহস করে একবার আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলি।কারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফু দিলে সাইক্লোন হয়ে উড়ে যাবে সন্ত্রাসীরা!
এমফিল শিক্ষার্থী, রাবি ও সমন্বয়ক, রাকসু আন্দোলন মঞ্চ।