ঢাবি শিক্ষকতার সুযোগ ছেড়ে দেয়া আমার ঠিক হয়নি?

নাইমুল ইসলাম খান
নাইমুল ইসলাম খান

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে আমরা এমএ করেছি ১৯৮৪ সালে। কিন্তু বিভাগে প্রভাষকের পদ সৃষ্টি অথবা পদ ফাঁকা না হওয়ায় শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ আসে ১৯৯০ সালে। তখন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তৌহিদুল আনোয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। আমাদের ব্যাচে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলো শামীম আহমেদ। আমি ছিলাম দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম। শামীমের নিয়োগ হয়ে যাবে নিশ্চিত, আমারও নিয়োগ হবে সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কিন্তু সেটা হয়নি।

প্রো-ভিসি এমাজউদ্দীন আহমদ স্যার ছিলেন প্রভাষক নিয়োগে ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রধান। ইন্টারভিউয়ের নির্ধারিত তারিখের ২ দিন আগে তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন তার বাসায়। আসার পর অনুরোধ করলেন, একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সন্তানকে বিভাগে নিয়োগের সুযোগ করে দিতে আমি যেন ছাড় দিই, ইন্টারভিউয়ে হাজির না হই। আরও বললেন, ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে আবারও শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আসছে, তখন তোমাকে নিয়ে নেয়া হবে। ইংরেজিতেই বললেন, ‘ইউ উইল বি টেইকেন’। কিন্তু তাদের প্রার্থীর যোগ্যতা তুলনামূলকভাবে কম থাকার কারণে এবার নিতে না পারলে তাকে পরে আর নেয়া সম্ভব হবে না। আমার পরিবর্তে অন্য জনকে শিক্ষক হিসেবে নেয়া তখনই অপছন্দ করেছিলেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

আমি তখন তুমুল জনপ্রিয় ও সফল সাপ্তাহিক সংবাদপত্র খবরের কাগজের সম্পাদক হিসেবে খুবই ব্যস্ত এবং সন্তুষ্ট। খবরের কাগজ থেকে বেতন পাই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে নির্ধারিত বেতনের ৩ গুণেরও বেশি। এমাজউদ্দীন স্যারের অনুরোধ রাখলাম, ইন্টারভিউতে গেলাম না এবং তাদের প্রার্থীর চাকরি হয়ে গেলো।

মোটামুটি ১ বছর পর শিক্ষক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী আমাকে খবর দিলেন, শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি হয়েছে আমি যেন বিভাগে যোগাযোগ করি, আবেদন করি। তখন ১৯৯১ সালে আমি সাপ্তাহিক খবরের কাগজের পাশাপাশি দৈনিক আজকের কাগজেরও সম্পাদক। নতুন ধারার এ সংবাদপত্রের কর্মযজ্ঞে গভীরভাবে মশগুল। আমার বেতনও বেড়ে নির্ধারিত হয়েছে প্রভাষকের যে বেতন তার ১০ গুণ। আবেদন করার আগ্রহ হারালাম।

শিক্ষক হওয়ার দ্বিতীয় সুযোগটাও চলে গেলো। অনেক বছর পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে শিক্ষকতা করেছি। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষকতা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি। পরিহাসের বিষয় হলো আমি যার জন্য প্রথম দফায় শিক্ষকতার চাকরির সুযোগ ছেড়ে দিয়েছিলাম তার পক্ষেও শিক্ষকতা টিকিয়ে রাখা বেশিদিন সম্ভব হয়নি।

ঘটনার ২ যুগ পরে চ্যানেল আইয়ের একটি টকশোতে গিয়ে দেখা হয়েছিলো অধ্যাপক এমাজউদ্দীন স্যারের সঙ্গে, একটু মজা করে তাকে বলেছিলাম, শিক্ষকতার চাকরি না নিয়ে ঠিক হলো না মনে হয়। কিন্তু স্যার বললেন, ‘বাপু আমার সেটা মনে হয় না’। তখন মজা করে বললেও এখন মাঝে মাঝে মনে হয় শিক্ষক হলেই ভালো ছিলো। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার প্রভাষক হিসেবে চাকরির আবেদনে যুক্ত করার জন্য আমার সম্পর্কে প্রত্যয়ন করতে লিখেছিলেন, ‘হি ইজ কিউরিয়াস টু নো অ্যান্ড ঈগার টু লার্ন, আই হ্যাভ সিইন ইন হিম, ভেরি গুড মেইকিং অব এ টিচার’। শিক্ষক হলে মন্দ হতো না। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: সাংবাদিক


সর্বশেষ সংবাদ