উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে কেন?

  © টিডিসি ফটো

৬ অক্টোবর মাঝরাতে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পড়ে থাকতে দেখা গেল সিড়ির ওপর। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে জানালো, বেধরক পিটুনিতে নিহত হয়েছে সে। প্রাথমিকভাবে জানা গেল রাত ৮টার দিকে আবরারকে তার রুমমেটদের সামনেই রুম থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী। তারপর আর রুমে ফেরেনি আবরার, মধ্যরাতে মিলল শরীরে অসহ্য জখমে জর্জরিত তার লাশ। এর আগের দিন আবরার বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস লিখেছিল যা আপাত দৃষ্টিতে সরকারের সমঝোতা চুক্তির সমালোচনা। যারা সাম্প্রতিক সময়ের ক্যাম্পাসগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে পত্রিকা মারফত  এটুকু জেনেই তাদের বোঝা হয়ে গিয়েছিল যে ‘ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার দায়ে আবরারকে ঠিক হত্যা করার জন্য নয়, বিশেষ পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য অর্থাৎ নির্যাতন করার জন্য নিয়ে  যাওয়া হয়েছিল যেন সে এমনটা আর কোনদিন না করে। আর দফায় দফায় নতুন প্রশিক্ষকের মাধ্যমে সেই শিক্ষা দেওয়ার ফলেই প্রশিক্ষণের ওভারডোজে বেচারা আবরারের প্রাণবায়ু বেড়িয়ে গেছে- টের পায়নি প্রশিক্ষকগণ।

আর, সন্ধ্যায় একটা ছেলেকে রুম থেকে সবার সামনে ডেকে নিয়ে যাওয়া হলো- কেউ বাঁধা দিলো না, দীর্ঘক্ষণ ছেলেটি ঘরে ফিরলো না, কেউ খোঁজও নিল না- এতে প্রমাণিত হয় যে এমন শিক্ষা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের প্রায়ই দেওয়া হয় ধরে নিয়ে গিয়ে। তাই অন্যরা আবরারকে নিয়ে যাওয়া দেখে ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক মনে করেই নিশ্চিন্তে ছিল এবং এদের মধ্যেই কেউ কেউ ডেকে নিয়ে যাওয়ার কারণ আঁচ করতে পেরে আবরারের মত এমন স্ট্যাটাস আর লিখবে না বলে মনে মনে পণ করছিলো। আর তাই আবরারের হত্যার দায় শুধু প্রত্যক্ষ ক'জন খুনির নয়; এ দায় অসংখ্য বুয়েটিয়ানের। কারণ, তারা নীরবে সমর্থন করে এই দখলদারি, তাবেদারি সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছিলো যার বলি হলো আজকের আবরার ফাহাদ।  সেইসাথে খুনের দায়ে অনিশ্চিত হয়ে গেল আরো কতগুলো সম্ভাবনাময় প্রাণ।
এই হত্যার দায় বুয়েটের শিক্ষক এবং প্রশাসনেরও। তারাও এটাকে জেনে-না জেনে, আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে প্রতিপালন করে আসছিলেন।’ 

পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ এবং শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ জবানবন্দিতে এই বিষয়গুলো উঠে আসে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেল, মেরে ফেলার জন্য নয়, নির্যাতন করার জন্য আবরারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং সে মারা গেছে এটা বুঝতে পারেনি নির্যাতকরা। তাই তারা ডাক্তার ডেকে পরীক্ষা করছিলো আবরার বেঁচে আছে কিনা। প্রভোস্ট এবং ছাত্র কল্যাণ পরিষদ প্রধানকেও ডাকতে দেখা যায়। প্রথম কথা হলো- কাউকে খুন করার উদ্দেশ্যে নিলে ঘর থেকে সবার সামনে পরিচিত জন এসে নিয়ে যেত না। আর মেরে গুম করার বদলে ডাক্তার, প্রাধ্যক্ষ, ছাত্রকল্যাণ প্রধানকেও ডাকা হতো না। খুনের এতগুলো প্রমাণ কেউ রাখে না, আর পূর্ব শত্রুতা ছাড়াও হুট করে কেউ কাউকে খুন করেনা। সুতরাং, এটা স্পষ্ট যে কেবল দখলদারি, তাবেদারি সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ হিসেবেই আবরারের নির্যাতন এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

আর তাই আবরার হত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেতে হলে বুয়েটকে এই দখলদারি সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। নইলে আবরারদের লাশের সারি দীর্ঘ হবে এবং তার দায়ে সকল বুয়েটিয়ান শাস্তি পাবেই পাবে। এ চর্চা অব্যাহত থাকলে আজকের বুয়েট শিক্ষার্থীর সন্তানরা যখন আবার এই বুয়েটে ভর্তি হবে তখন দেখা যাবে আবরারের মত তথাকথিত উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য নয়, সরাসরি মেরে ফেলার জন্যই শিক্ষার্থীদের ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ, আধিপত্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা মানুষের জন্মগত এবং এই আধিপত্যকামী মনোভাব মনুষ্যত্বকে বিলুপ্ত করে মানুষকে পিশাচে পরিণত করে। আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি সে মনোভাবকে স্থায়ীরূপ দেয়।

পরবর্তীতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা একের পর এক মুখ খোলে। জানায় দীর্ঘদিন যাবত তারা শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা এরকম নির্যাতিত হয়ে আসছিলো এবং বুয়েটে ভিন্নমত পোষণকারী প্রত্যেককেই শিবির আখ্যায়িত করে নিপীড়ন চালানো হতো। এই অবস্থা বছরের পর বছর থেকে বিরাজ করছে বুয়েটে। 

তাই আবরার হত্যার পর ডাকসু ভিপি নূরুল হক প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বুয়েটে গেলে বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও আন্দালনে নেমে পড়লো। তখনও তারা দখলদারদের ভয়ে এতটাই ভীত যে আন্দোলনে বক্তব্য দেওয়ার সময়ও নিজেদের নাম ঘোষণা করছিলো না, পত্রিকায় বিবৃতি, স্বীকৃতি দেওয়ার সময়ও তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থেকেছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের ওপর বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া নিপীড়নের বিবরণ দিয়ে এর প্রতিকার চেয়ে পত্রিকায় আর্টিকেল লিখেছেও বেনামে। এর থেকেই তাদের মনের ভয়ের গভীরতার এক ভয়াবহ চিত্র কল্পনা করা যায়।

আবরার হত্যার বিচার এবং একই ঘটনা যেন পুনর্বার না ঘটে সেজন্য বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বেশকিছু দাবি পেশ করলো প্রশাসনের কাছে। ভয় ছিল, আন্দোলন শেষে হলে-ক্লাসে ফিরলেও তাদের ওপর হয়রানি হবে। তাই এসবকিছু মাথায় রেখে তারা প্রশাসনের কাছে দশ দফা দাবি পেশ করলো যার অন্যতম ছিল- "বুয়েট থেকে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি বাতিল করতে হবে।"
যেহেতু আবরারের হত্যায় জড়িত প্রত্যেকেই ছিল রাজনৈতিক কর্মী এবং তাদের এমন নিপীড়নের অনেক নজির আছে, আবার আন্দোলন শেষেও তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর একই কাজ শুরু করবে তাই তাদের উচ্ছেদ চাইলো শিক্ষার্থীরা। এ চাওয়া নৈতিক, যথার্থ।

কিন্তু সকল সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি বাতিলের দাবি কেন? আমাদের গ্রামের একটা প্রবাদ আছে, ‘আকাম করে বেহুদ্দো, গাল খায় গুষ্টিসুদ্ধ’। অর্থাৎ একটি বংশের যেমন- ‘মোড়ল’ বংশের কেউ একজন অপরাধ করলে বলা হয় মোড়লরাই খারাপ। কিন্তু এটা কি ঠিক? একটি বংশের সবাই কি ভালো কিংবা সবাই কি খারাপ হয়? বাপের অপরাধে কি ছেলেকে ফাঁসি দেওয়া হয়? ছেলের অর্জন করা মেডেল কি বাপের গলায় পরানো হয়?

আচ্ছা, আবরার মৃত্যুর জন্য দায়ী কি ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রইউনিয়ন, ছাত্রফেডারেশন?- নয়তো, তাই না? বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নিপীড়নেরও তো কোন নজির নেই।

তাহলে আবরার হত্যার সাথে জড়িতরা এবং সাম্প্রতিককালে বুয়েটের ছাত্র নিপীড়নের সাথে জড়িতরা প্রত্যেকে যখন ছাত্রলীগ তখন অন্যান্য সংগঠনের ওপর দায় চাপিয়ে সকল সংগঠনের রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া তো যৌক্তিক ন্যায়বিচার হয়না। এটা তো হয় উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর মত অবস্থা।

এখানে উল্লেখ্য, আজকের বুয়েটিয়ানরা দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে ছাত্ররাজনীতি বলতে যা দেখেছে তা হলো ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দলীয় স্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করা, জোর করে কাউকে মিছিলে নিয়ে যাওয়া, হলে হলে আধিপত্য বিস্তার করা, যেনতেন কারণে কাউকে মেরে পঙ্গু করে দেয়া- এমন কিছু কার্যকলাপ।

যেহেতু তারা ছাত্ররাজনীতির নামে শুধু এগুলোই দেখেছে তাই তারা একবাক্যে বললো- ছাত্র রাজনীতিই তাদের শিক্ষা জীবনকে বিষিয়ে দিয়েছে, ছাত্র রাজনীতিই খারাপ। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলেই তারা নিস্তার পাবে। মূলত এক্ষেত্রে  তাদের উপলব্ধি ছিল অপরিপক্ক , এটা ছিল তাদের ব্যর্থতা যে তারা শত্রু চিনতে পারলো না।

এখন অনেকের মনে জাগতে পারে যে তাহলে আমি হয়তো সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির বদলে কেবল ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ হওয়ার দিকে আঙ্গুল তুলছি। না, ব্যাপারটা আসলে তাও নয়।

কোন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যে ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয় তার প্রথমটি হলো- সমস্যার স্বরূপ বিশ্লেষণ। তারপর দ্বিতীয় ধাপে আসে সমস্যার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিতকরণ। তারপর যথাক্রমে অনুমিত সিদ্ধান্তগ্রহণ, সিদ্ধান্ত যাচাই-বাছাইকরণ, সংশ্লিষ্টদের অনুমোদন এবং সবশেষে বাস্তবায়ন। এখানে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের বিশ্লেষণ সঠিক না হলে সিদ্ধান্ত অনিবার্যভাবে ভুল আসে, এবং সমস্যা সমস্যাই থেকে যায়।

খেয়াল করি- সমস্যা হলো- জেনে অথবা না জেনে, পুরোপুরি বা আংশিক জেনে আবরার একটি সরকারি নীতির সমালোচনা করেছে। আর তার জন্য তাকে মারা হয়েছে। একই কাজ অন্যরা করলেও তাদের মারধর করা হয়। আবার ছাত্রদের মধ্যে ভয় এবং আনুগত্য ধরে রাখার জন্য ক্ষমতাসীন সিনিয়রদের সালাম ঠুকতে বাধ্য করা, নতমস্তকে চলাফেরা করতে বাধ্য করা, কথায়-কাজে তাবেদারি করা, শারীরিক-মানসিক নিপীড়ন করা, র‌্যাগিং এর মাধ্যমে দাবিয়ে রাখা- এগুলো হলো সমস্যা।

এসব কারা করতো- ছাত্রলীগ? আমি বলব, না। এসব আসলে করতো ছাত্রলীগ নামধারীরা, যারা ছাত্রলীগের নামে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যায় তারা। রাজনৈতিক ছাত্রলীগ এটা করতে পারে না। কারণ- স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে ছাত্রলীগ গঠিত হয়েছিল পূর্ববাংলার স্বায়ত্বশাসনের জন্য, শাসক গোষ্ঠীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরাধীন দেশে স্বাধীনতার পতাকা ওড়ানোর জন্য, দেশের স্বার্থে জীবন দেয়ার জন্য। সেদিনের ছাত্রলীগ তো কোন সাধারণ ছাত্রের ওপর নির্যাতন চালাতো না। আজ চালায় কেন? আজকের ছাত্রলীগ এবং অতীতের ছাত্রলীগের মধ্যে পার্থক্য তাহলে কোথায়? ব্যাস- একটা জায়গা ই পার্থক্য। আর তা হলো- আজকের ছাত্রলীগের কোর পার্টি আওয়ামী লীগ আছে ক্ষমতায় আর সেদিনের ছাত্রলীগের আওয়ামী লীগ ছিল ক্ষমতার বিপরীতে। সুতরাং আবরারকে ছাত্রলীগ মারেনি, আবরারকে মেরেছে ‘ক্ষমতা’লীগ। বুয়েটের ছাত্রদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের সংস্কৃতি ছাত্রলীগ জাগিয়ে রাখেনি- রেখেছে ক্ষমতালীগ। বর্তমানের ছাত্রদল, সাম্যবাদের আদর্শভিত্তিক প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহ এবং খোদ অতীতের ছাত্রলীগের সাথে বর্তমান ছাত্রলীগের তফাত শুধুই ক্ষমতায়। অত্যাচারের জন্য যা দায়ী তা হলো- ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’।

আবার বুয়েট পড়ুয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে খুনি এবং নিপীড়নকারীদের তফাতও শুধু ক্ষমতায়। আবরারের খুনি সেই ছাত্রদেরই অতীত আর বর্তমান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে পার্থক্য শুধু ‘ক্ষমতায়’।
সুতরাং বুয়েটের ছাত্রদের জন্য যদি অকল্যাণকর কিছু করে থাকে সেই বস্তুটি হলো এই ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ নামক বিষয়টি। বাতিল যদি করতে হয় তাহলে এই ক্ষমতার অপব্যবহারকে বাতিল করতে হবে সংগঠন ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতিকে নয়। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দখলদারিত্বকে উচ্ছেদ না করে সংগঠন নিষিদ্ধ করলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমস্যাই থেকে যাবে।

কারণ, ওরা নাম বদলিয়ে আসবে। লাউ ফিরে আসবে কদু নাম নিয়ে, ভূত ফিরে আসবে পেত্নী নাম নিয়ে, মটকাবে ঘাড়। সাংগঠনিক পরিচয়ে না আসলেও দখলদাররা অন্য নাম নিয়ে ফিরে ফিরে আসবে। যখনকার সরকার ক্ষমতায় তার নাম ভাঙিয়ে ওরা দখলদারিত্ব, নিপীড়ন চালিয়ে।   ফলে যেকারণে আবরার মরেছে সেই একই কারণে অন্যরাও মরবে। একই নিপীড়ন তারা অব্যাহত রাখবে। আজ ছাত্রলীগ নাম নিয়ে করেছে কাল ‘নাইলীগ’ নাম নিয়ে করবে। মনে রাখবেন, রাজনৈতিক সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আসেনি। তাই কাল থেকে যখন ওরা সাংস্কৃতিক সংগঠন নাম নিয়ে

নিপীড়ন চালাবে তখন কী বলবেন? পোশাকি নাম হবে সাংস্কৃতিক সংগঠন পোশাকের নিচের মানুষটা যদি আজকের নিপিড়নকারীদেরই একজন হয়- তখন কী হবে?

বুয়েটিয়ান, আপনারাই বলেছেন, প্রশাসনের কাছে এই দখলদার, তাবেদার, নিপীড়কদের নামে বার বার অভিযোগ দিয়েও লাভ হয়নি। বরং নিপীড়ন বেড়েছে; সমাধান হয়নি। একই কাজ যদি তখনও অব্যাহত থাকে তাহলে কী হবে? প্রশাসনের এমন ভূমিকা শুধু আওয়ামী লীগের শাসনামলে এমন নয়, এর আগে বিএনপির শাসনামলেও প্রশাসন এমনই ছিল। সেসময় ছাত্রদলের অনুকূলে ছিল প্রশাসন। অর্থাৎ ক্ষমতা যখন যার হাতে প্রশাসন তখন তার।

এখন মনে হতে পারে তাহলে শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়াই সমাধান।

আচ্ছা অতীতেও তো শিক্ষক ছিলেন। তারা ছাত্রদের নৈতিকতার শিক্ষা দিতেন, স্বাধিকার-স্বাধীনতার শিক্ষা দিতেন, ছাত্রদের পাশে থাকতেন, ছাত্রদের জন্য প্রাণও দিতেন। এমন ছাত্রবান্ধব শিক্ষকেরও নাম শুনেছি যিনি নিজেই গোপনে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নামিয়ে নিজেই আবার সরকারমহলে বলতেন, ‘আমি এদের থামাতে পারছি না, দাবি আদায় ছাড়া উপায় নেই।’

তাহলে আজকের যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সমস্যা দেখেও দেখছেন না, উল্টো দখলদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন নরকে পরিণত করছেন সেই শিক্ষকদের সাথে অতীতের ওই ছাত্রবান্ধব শিক্ষকদের পার্থক্য কোথায়? উত্তর ওই একটাই- ক্ষমতায়। সেসময়ের শিক্ষকরা প্রথমে পরাধীন নিপীড়িত পূর্ববাংলার ছাত্র আর তারপর ঐ পরাধীন নিপীড়িত বাংলার শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু আজকের শিক্ষকদের বড় একটি অংশই থাকে ক্ষমতাসীনদের মাধ্যমে আসা দলীয় এজেন্ট। তাই তারা ক্ষমতাসীন নিয়োগদাতা প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেন।

ধরুন, শিক্ষকদের নীল দল (আওয়ামীপন্থী), সাদা দল (বিএনপি পন্থী) থাকলো না, কিন্তু দলানুগত শিক্ষক যদি থেকেই যায় তাহলে কী হবে? নীল দল, সাদা দলের উর্দিটা শিক্ষকদের  গা থেকে খুলে নিলেন কিন্তু উর্দির ভেতরের মানুষটা যদি ক্ষমতার পক্ষে থাকে, যদি নিরপেক্ষভাবে ছাত্রবান্ধব না হয় তাহলে তো আজকের অবস্থাই বিরাজিত থাকবে, তাই না? তখন বেনামে চলবে ছাত্রদের নির্যাতন, আর নীরব থাকবে প্রশাসন।

এক্ষেত্রেও মূল বিষয় হলো- ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে হবে। শিক্ষক রাজনীতি নয়, শিক্ষকদের দলদাসত্ব প্রতিহত করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হলো- এসব প্রতিহত আপনি কীভাবে করবেন? কে করতে পারে?
ছাত্রদের নিরাপত্তা দেবে শিক্ষক-প্রশাসন আর শিক্ষক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগ দিচ্ছে সরকার।

তাই মূলত এই দখলদারি সংস্কৃতির চর্চাকে প্রতিহত করতে পারে সরকার। আর যদি সরকার তাতে আন্তরিক না হয় তবে অতীতের মতই অধিকার আদায়ের দায়িত্ব আবার ছাত্রসমাজকেই কাঁধে নিতে হবে। তখন এই ক্ষমতার রাজনীতিকে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে। সেটা সাধারণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো বটেই  বুয়েট, মেডিকেলের মত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্যও আবশ্যক ।

এখন ছাত্রদের প্রশ্ন- ছাত্র আন্দোলন গড়তে ছাত্রসংগঠনের কী প্রয়োজন। অতীতের ছাত্র সংগঠনগুলোর তো কোন পলিটিক্যাল পার্টির অধীনে থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল না। তাই সাংগঠনিক রাজনীতিকে বাতিল করে ছাত্ররা আগের অবস্থায় ফিরে গেলেই হয়।

হ্যাঁ, এটা সত্যি যে ১৯৭৮ এর পূর্বে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন নেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। তখন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফেডারেশন ছিল স্বতন্ত্র। এদের কোন রাজনৈতিক কোর পার্টি ছিল না। এদের সাথে ছাত্রলীগ এবং কিছু ইসলামি ছাত্র সংগঠন মিলে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জোট গঠন করেছিল এবং এই ছাত্রজোট দেশের সবগুলো সোনালি অর্জনে ভূমিকা রেখেছে।

কিন্তু বর্তমানে সেই অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব কিনা সেটা দেখা যাক-
এক্ষেত্রে সামান্য সমস্যা আছে- অতীতে ছাত্রদের শত্রু ছিল বিদেশী শাসকগোষ্ঠী। কোন ছাত্রসংগঠন ছাত্রসংগঠনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। সেসময় পূর্ববাংলার সকল মানুষ ছিল বিদেশি শাসকের দ্বারা শোষিত। তাই শোষিতে-শোষিতে, অসহায়ে-অসহায়ে ছিল বন্ধুত্ব, আত্মার মিল। সবারই কমন শত্রু ছিল নিপীড়ক শাসক গোষ্ঠী।

সেময় কোন দখলদার ছাত্রসংগঠন ছিল না। অতীতের ছাত্রসংগঠনগুলো আদর্শের ভিত্তিতে চলতো, আধিপত্যের ভিত্তিতে নয়। সেকালে, মূল্যবোধ ছিল মানুষের একটি বড় সম্পদ। কোন অবস্থাতেই ছাত্ররা হীনকাজের প্রতি উৎসাহ পেত না সমাজের অধিকাংশের ঘৃণার ভয়ে। তাই সেসময় আইয়ুব সরকারপন্থী এনএসএফ (ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফ্রন্ট) এর ক্ষেত্রে আমরা দেখি, ১৯৬৯ এ যখন পূর্ববাংলার সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিছিলে গুলি চালিয়ে আসাদকে হত্যা করলো পুলিশ, তখন এ অন্যায়ের প্রতিবাদে এনএসএফ থেকে ছাত্রদের একাংশ ভেঙে এসে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সাথে মিশে গেল আন্দোলনে।

সেদিন ছাত্রদের প্রতিপক্ষ ছিল দখলদার বিদেশি সরকার।
কিন্তু আজকের স্বাধীন বাংলায় আমরা দেখি ছাত্রদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র, ছাত্রসংগঠনের প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ছাত্রসংগঠন।

হীরা সবচেয়ে শক্ত ধাতু। তাকে কাটার সমান ধাতু আর নেই। তাই হীরাকে কাটতে হীরারই সাহায্য নিতে হয়। 

আজ ছাত্ররাজনীতিও সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে গেছে, সবচেয়ে বড় অপরাধ ‘খুন’- তারা করছে অবলীলায়। এই সংগঠনকে রুখে দিতে তাই আরেকটি আদর্শভিত্তিক ছাত্রসংগঠনই দরকার। আদর্শ দিয়ে অনাদর্শকে বিলুপ্ত করা দরকার। 
তাই ক্যাম্পাসগুলোতে যা দরকার- তা হলো- রাজনীতির বিলোপ নয় বরং সুস্থ রাজনীতির মাধ্যমে অসুস্থ রাজনীতিকে বিতাড়িত করা, রুখে দেওয়া। এরজন্য

দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসকে সব সংগঠনের জন্য মুক্তাঙ্গন করতে হবে। তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিতে হবে। সাধারণ ছাত্ররা এদের আদর্শ দেখে যেটা ভালো লাগবে সেটা অনুরসণ করবে, না করলে না করবে। কিন্তু জানার দ্বার উন্মুক্ত রাখতে হবে। এভাবে একটি সংগঠন স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করলে আরেক সংগঠন সেটাকে সমালোচনা করবে, তার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করবে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি হবে যৌক্তিকতাকে সাপোর্ট করার সুযোগ। সেদিন দেশপ্রেমিক কেউ দেশের অবস্থান দেখে কথা বললে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তার টুটি চেপে ধরতে পারবে না কেউ।

আমরা জানি, প্রকৃতি একটি ভারসাম্যাবস্থাকে সাপোর্ট করে। ভারসাম্যহীনতা বিপর্যয় ডেকে আনে সবার জন্য। প্রকৃতিতে ব্যাঙয়ের সংখ্যা কমে গেলে সাপের সংখ্যা বাড়বে আর সাপের সংখ্যা কমে গেলে ব্যাঙয়ের পরিমাণ বাড়বে। কারণ, ব্যাঙ খায় সাপের ডিম আর সাপ খায় ব্যাঙকে। সুতরাং ব্যাঙ কিংবা সাপ কোনটাকেই নির্বিচারে নিধন করা যাবে না। সাপকে নিধন করলে ব্যাঙই হয়ে উঠবে সবচেয়ে মারাত্মক। অবলীলায় খেয়ে ফেলবে গৃহপালিত হাঁস-মুরগির ছানা।

প্রকৃতিকে বলা হয় সবচেয়ে বড় শিক্ষক। তাই প্রকৃতির এই একই সূত্র বুয়েটের ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে আমরা দেখলাম, সেখানে ভারসাম্যহীনতা বিপর্যয় ডেকে এনেছে। আজ যদি বুয়েটে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফেডারেশন এবং অন্যান্য স্বতন্ত্র ছাত্রসংগঠন  সমানভাবে একটিভ থাকতো তাহলে বুয়েটের নিপীড়ন আবরার হত্যার আগেই জনসমক্ষে আসতো, তারা এই দখদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতো, সংবাদ সম্মেলন করে ভেতরের অবস্থা দেশবাসীকে জানার সুযোগ করে দিতো এবং এভাবে প্রশাসনকে বাধ্য করতো যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।

আজ যদি ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আর একটি ছাত্র সংগঠনও থাকতো তাহলে চার ঘন্টা ধরে মারধর চলতে পারতো না আবরারের ওপর। আবরারের লাশ নিয়ে টালবাহানা হতো না। আবরারের মৃত্যুর আগেই সেখানে মিছিল বের হতো।

একটি বিষয় তার বড় উদাহরণ হতে পারে- আবরারকে মারলো ছাত্রলীগ। তাই ডাকসুর নির্বাচিত ছাত্রলীগ নেতারা একজনও আসলেন না। কেবল ছাত্রলীগের বাইরে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ  পরিষদ থেকে নির্বাচিত নুরুল হক মিছিল নিয়ে বুয়েটে গেলেন সেই সকালবেলা। তারপর সাহস পেয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বের হলেন।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, বুয়েটের মত অবস্থা আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনভাবেই হবে না। কীভাবে?- আজ যদি আবরার ঢাবির কোন শিক্ষার্থী হতো তবে ভিপি নূরসহ ছাত্রলীগের বাইরে যে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী আছে তারা আবরারের ভিন্নমত পোষণ করার ব্যাপারটি আগে থেকেই অবগত থাকতেন এবং তার প্রতি বিশেষ নজর রাখতেন। যদি তাও না হতো তবে অন্তত এমন হতো যে রুম থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর রুমমেটদের কেউ কোনমতে যদি একবার ভিপিপন্থী অথবা ছাত্রলীগ ভিন্ন অন্য কোন সংগঠনের নেতা-কর্মীকে একটা ফোনকল দিয়ে ব্যাপারটা অবগত করতো তাহলে অবশ্যই অবশ্যই নির্যাতনে নিহত হওয়ার আগেই সেখানে মিছিল হতো, হলের দরজা ভেঙে আবরারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হতো।

স্বাধীনতার পর গত ৪৭ বছরে শতাধিক ছাত্র লাশ হয়েছে- কয়টার খবর জেনেছি আমরা? হয়তো আবরার হত্যার খবরও জানতাম না। হয়তো জানতাম আবরার সিড়ি থেকে পড়ে মরে গেছে। মূল বিষয় জানলাম তো তখন, যখন ভিপি নূরের নেতৃত্বে মিছিল শুরু হলো, বুয়েট জাগলো। ৭ তারিখ সারাদিনব্যাপীও জানা যায়নি ৬ তারিখ রাতে কী হয়েছিল- কেউ বলেনি। হয়তো পরেও আর বলতো না যদি না নূরুল হকের চিৎকারে সারাদেশের ছাত্রসমাজের ঘুম ভাঙতো। এটাই হলো ভিন্ন ভিন্ন মতের, ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের ছাত্র সংগঠনগুলোর ক্যাম্পাসে থাকার ফল।

সুতরাং বলা চলে যখন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বুয়েট থেকে পিটিয়ে বের করছিলো ছাত্রলীগ তখন নিরব থেকে সেটাতে সায় দিয়ে ভুল করেছিল বুয়েটিয়ানরা। তাই তারা আজ আবরারের লাশ উপহার পেল অনিবার্যভাবে।

যদি দেশের সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীনদেরই দখলে থাকে তাহলে তাদের নেতা-কর্মীদের হাতে কেউ নিহত হলে কোন প্রতিবাদ আসবে না, ছাত্র মরবে কেউ জানবেও না- বিচার তো আরো দূর। তাই তাদের বিরোধীদের রাজনীতিতে আসার সুযোগ করে দেওয়া আজ আশু দরকার।

আবার শুধু ছাত্রলীগ নয়, জাতীয় সরকারের পালবদল হলে যদি বিএনপির হাতে শাসন ক্ষমতা যায় তাহলে আবার আজকের ছাত্রলীগের জায়গায় অধিষ্ঠিত হবে ছাত্রদল। তখনও মনে রাখতে হবে, চরম ক্ষমতা মানুষকে চরমভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করে। তাই তখন ছাত্রদলেরও প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে ক্যাম্পাসে থাকতে হবে। অর্থাৎ ক্ষমতায় সমতা আসতে হবে। সকল সংগঠনকে তাদের কার্যক্রম চালাতে দিতে হবে তাহলেই কেবল শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ফিরে আসবে আবার।

আর তখন ছাত্ররা শুধু ছাত্রদেরই নয়, শিক্ষকদের অনিয়মেরও প্রতিবাদ করে চাপ সৃষ্টি করবে। ফলে একটি ভারসাম্যাবস্থা, একটি গণতান্ত্রিক অবস্থা বিরাজ করবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

বুয়েটের সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি বাতিল প্রসঙ্গে এক প্রবীণ রাজনীতিবিদের উদ্ধৃত একটি কথা আমার মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন যে পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ববাংলার (বাংলাদেশ) মানুষ রবীন্দ্রসংগীত শুনতো খুব। একদিন জেনারেল আইয়ুব খান আগ্রহী হয়ে তার এক সহযোগীকে বললেন, ‘সাহাবুদ্দীন, ইয়ে টেগোর সং কীয়া হোতা হ্যায়?’ জনাব সাহাবুদ্দীন তখন তাকে রবীন্দ্র সংগীত বাজিয়ে শোনাতে লাগলেন। স্লো মোশনের রবীন্দ্র সংগীত শুনতে শুনতে জেনারেলের ঘুম পেয়ে গেল। তিনি তখন বললেন, ‘ সাহাবুদ্দীন, এ তোমহারা টেগোর সং হ্যায়! ঠান্ডা ঠান্ডা, পানি পানি- বন্দ কর দো’। একথা শুনে সাহাবুদ্দীন তখন দেশ থেকে রবীন্দ্র সংগীত ব্যান করে দিলেন। জেনারেল যেখানে অডিও প্লেয়ার বন্ধ করতে বললেন সেখানে সাহাবুদ্দীন দেশ থেকে রবীন্দ্র সংগীত ব্যান করার নির্দেশ দিলেন।

আমার প্রশ্ন, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা গত ৫-১০ বছরে ছাত্র রাজনীতির কী দেখেছে যে তারা তা বন্ধ চাইবে? তারা তো দেখেছে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব। তারা সেটাই বন্ধ চেয়েছে। এটা ওই ২০-২২ বছরের তরুণ-তরুণীরা গুছিয়ে বলতে না পারলেও তাদের মনের চাওয়া কী এবং কীসে তাদের কল্যাণ তা বুয়েট প্রশাসন তো ঠিকই জানতো। কিন্তু তারা সাহাবুদ্দীনের ভূমিকা পালন করলেন। লাউকে কদু হয়ে ফিরে আসার পথ খুলে রাখলেন।

শিক্ষার্থীদের আরো একটি প্রশ্ন- বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির কী দরকার?- এর উত্তর হলো- মানুষ জন্মগতভাবেই আধিপত্যকামী। তাই সমাজের কোথাও কোন আধিপত্য বিস্তার করতে না পারলেও অন্তত ঘরের স্ত্রীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, কাজের লোকের সাথে দুর্ব্যবহার করতে চায়। এসব তারাই করে যারা সমতার শিক্ষা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান, অভিজ্ঞতার নানা শাখায় বিচরণের সুযোগ পায়না সাধারণত। বুয়েটকেও যদি একমুখী শিক্ষায় আবদ্ধ করে রাখা হয় তাহলে সেখানে হয় কূপমন্ডুকতা, কুসংস্কার নয়তো আধিপত্যকামিতা বিস্তার লাভ করবে। ঠিক যেভাবে ১৯৬১ এবং ১৯৮৯ এর বিশেষ আইনে বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও একদল ছাত্র এতদিন প্রভাব বিস্তার করে এসেছে।

পরিশেষে, দেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’র নামে বুয়েটের মত করে কোন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে না এবং বুয়েটও তার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসবে- এটাই আমার প্রত্যাশা।


সর্বশেষ সংবাদ