চীনকে ঠেকাতে হবে, দাদাগিরি এখনও আমেরিকার হাতে
বিশ্বজুড়ে মার্কিন আধিপত্যে হাত দিতে গেলে পেট্রো ডলারে বড় একটা ধাক্কা দিতে হবে। কেবল সমরসজ্জা বাড়িয়ে পাওয়ার হাউসে আঘাত করা যাবে না, যদি না তার পেছনে থাকে বড় একটি অর্থনীতি, সবল একটা অর্থনীতি। কেবল তুরস্ক, ইরান আর রাশিয়া চাইলেই পেট্রো ডলারের বিকল্প দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারবে না, তবে চীন- ভারত আর ব্রাজিলের মত দেশ এই শিবিরে যোগ দিলে খেলাটা জমে উঠবে।
কিন্তু তা কখনোই হবে না, কারন চীন চিরবৈরি প্রতিবেশীকে সাথে নিয়ে অর্থনীতির যুদ্ধে নামবে না, সে ভাবছে একাই ওয়ার্ল্ড অর্ডার চেইঞ্জ করে দেবে। আর তা করতে গিয়ে চীন যে কৌশল হাতে নিয়েছে, তা খুবই বিপজ্জনক ও অমানবিক। ঋণের জালে আটকে তৃতীয় বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চীন একাই লড়তে চায় পশ্চিমের বিরুদ্ধে। তার প্রাথমিক টার্গেট আফ্রিকা আর দক্ষিণ এশিয়া। পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, জিম্বাবুয়েতে চীন তার কৌশলের চর্চা করছে বড়ই দাপটের সাথে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে বিশ্ব পরাশক্তির দৌড়ে এগিয়ে ছিল হিটলারের জার্মানি। তারো আগে ব্রিটেন আর ফ্রান্স। সমুদ্রে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্রিটিশদের সাথে ফরাসীদের ছিল ঐতিহাসিক শত্রুতা।কিন্তু একসময় ফ্রান্সকে ছাপিয়ে নৌ-শক্তিতে ব্রিটেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয় জার্মানি। দুই শত্রু এক হয়ে লড়তে চায় হিটলারের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলো। জার্মানিকে ঠেসে ধরা হলো। মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হলো। পরাশক্তি চেঞ্জ হলো, ব্রিটেন এবার বিশ্ব পরাশক্তি।
গুরুত্বপূর্ণ মিডল ইস্টও তার কব্জায়। কিন্তু যুদ্ধে জিতলেও ব্রিটিশ- ফরাসী অর্থনীতির বারোটা বেজে যায়। অর্থনৈতিক দৈন্যদশা কাটাতে ব্রিটেনকে বিভিন্ন অঞ্চলের উপনিবেশ গুটিয়ে ঘরে ফিরতে হয়, একই পথে হাঁটতে হয় ফ্রান্সকেও। বিশ্ব পরাশক্তিতে আবারো পরিবর্তন- ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা রিপ্লেস হলো। অবশ্য তখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে মুদ্রার রিপ্রেজেনটেটর ছিল স্বর্ণ।
১৯৭১ সালে নিক্সনের হাত ধরে স্বর্ণের স্থলে রিপ্রেজেনটেটর হিসেবে জায়গা করে নেয় ডলার, যাকে আমরা বলে থাকি নিক্সন শক। তেল বাণিজ্যকে ঘিরে ডলার অর্থনীতির একটা বড় ভূমিকা সামনে চলে আসে, তাই ডলার আর এখন মামুলি ডলার নয়, এটা হয় পেট্রোডলার। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে আমেরিকা। আর আর্থিক দাদাগিরি তার হাতে বিধায়, মানি আর না মানি বিশ্বরাজনীতির দাদাগিরি এখনো তার হাতেই!
ধূর্ত চীন এই জায়গায় ধাক্কা দিতে চায়। রাশিয়ার চেয়ে চীনকেই তাই প্রধান শত্রু মানছে হোয়াইট হাউস আর পেন্টাগন। চীন এক্ষেত্রে বৈদেশিক বাণিজ্যে ডলারের পাল্টা একটি বিনিময় মুদ্রার ঘোষণা দিতে পারতো, কিন্তু এখনই তা করছে না। তার কাছে আছে ভয়ংকর ও অমানবিক এক কৌশল। ভবিষ্যতে চীনা ঋণের ফাঁদে আটকে যেতে পারে বাংলাদেশও।
সাম্রাজ্যবাদকে যদি মানতে হয়, তাহলে পশ্চিমকেই মানা ভালো, চীন যদি দুনিয়ার বস হয় তার বড় খারাপি দেখবে মানুষ।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী