বশেমুরবিপ্রবি: বিবেকের আয়নায় ১০৭ শিক্ষক কী বলবেন?

  © ফাইল ফটো

কয়েকদিন আগে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ১০৬/৭ জন শিক্ষক কথিত ‘উপচার্য’র পক্ষে একটি বিবৃতি দিয়েছিলো। যেখানে তারা বলেছিলেন, কতিপয় স্বার্থান্বেষী শিক্ষকদের সরাসরি ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান রাখা অনভিপ্রেত বলে সাধারণ শিক্ষকরা মনে করেন।

আমার বিশ্বাস, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা ইতিমধ্যে ‘স্বার্থান্বেষী’দের চিনে ফেলেছেন। রক্ত দিয়ে, মার খেয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীরা আর কিছু না শিখলেও তারা নিজেদের অধিকার আদায় করতে শিখেছে, অশিক্ষার অন্ধকার থেকে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। এরা বড় হয়ে আর যা হোক, অন্তত এই ১০৭ জনের মতো বিবেকহীন শিক্ষিত মানুষ হবেন না।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবাজ, নীতি ব্যবসায়ী, গাঁড়ল ‘উপচার্য’র পক্ষে এই ১০৭ জনের তালিকাটি ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছেন। চাকরি বাঁচাতে নিজেদের মূল্যবোধ বিকিয়ে দেয়া এইসব শিক্ষকরা যে অন্যায়কারীর পক্ষ নিয়ে সাফাই গেয়েছেন, কয়েকদিন পর ক্লাসে এইসব শিক্ষকরা কি কোনদিন শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার শিক্ষাটুকু দিতে পারবেন কী? কোন মুখে তারা বলবেন, তোমরা বড় হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে? কোন বিবেকের তাড়নায় তারা শিক্ষার্থীদের সততার শিক্ষা দেবেন?

আমি লজ্জিত এই শিক্ষকদের আচরণে। যারা নিজেরাই এই নাসিরউদ্দিনের দ্বারা শোষিত, নিগৃহীত, নানার অত্যাচারের শিকার, তারা কিভাবে এমন একটি বিবৃতিতে বলতে পারলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলেও তারা অসহযোগিতা করে এবং অশোভন আচরণ প্রদর্শন করে?

তো স্যার, আপনারা কতজন হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াছিলেন? কতজন শিক্ষক প্রশাসনের কাছে গিয়ে নিজেদের সন্তানদের সুরক্ষা চেয়েছিলেন? কতজন শিক্ষক এক বাটি ভাত নিয়ে আন্দোলনরতদের দিয়েছিলেন?

না আপনারা নিজেদের বিবেকের কাছে পরাজিত। নিজেরা যদি আজ মেধা দিয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেতেন, তাহলে আজ বিবেকের তাড়নায় ছটফট করতেন। সুপারিশ নিয়ে শিক্ষক হলে এভাবে অন্যায়কারীও পূজা করতে হয়।

এখনো সময় আছে, শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলুন। এই বার হাজার শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকতার পেশাকে ভুলভাব উপস্থাপন করবেন না। আজকের শিক্ষার্থীরা যা আপনাদের কাছ থেকে শিখবে তা ভবিষ্যতে লালন করবে। তাদেরকে যদি আপনারা ভুল মেসেজ দেন তাহলে, আগামীতে এদের কাছে আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষক হয়ে যাবেন।

লেখক: পিএইচডি গবেষক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান


সর্বশেষ সংবাদ