নোবিপ্রবিতে উপেক্ষিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন
ইতিহাস সব সময় কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন জাতির কাছে নোয়াখালীর জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় অসীম সাহসীকতার সাথে যুদ্ধ করে জীবনোৎসর্গের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত হন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত সাত বীরশ্রেষ্ঠের একজন তিনি এই নোয়াখালীরই গর্বিত সন্তান। তাই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের গৌরবদীপ্ত অমর ইতিহাসে নোয়াখালী জেলার নামও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
কিন্তু নোয়াখালীর এ বীর সন্তানের প্রতি স্বাধীনতার চার যুগ পরে যথাযথ সম্মান দেখাতে পারেনি তাঁর নিজ জেলা! তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় স্মৃতিস্তম্ভ, সোনাইমুড়ীর জন্মস্থানে পাঠাগার, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার নামকরণ ছাড়া জেলায় আর তেমন কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। নোয়াখালীতে তাঁর নামে জেলায় একক কোন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেডিয়াম বা বড় কোন ভবন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমনকি নোয়াখালীর একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) তাঁর নামে একটি হলও নির্মিত হয়নি!
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হল থাকলেও কোনোটির নামকরণেই ঠাঁই পায়নি এই বীরশ্রেষ্ঠের নাম!
এ ব্যাপারে নোবিপ্রবি’র রেজিস্ট্রার প্রফেসর মোমিনুল হক জানান, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন শুধু নোয়াখালী জেলার নয়, গোটা জাতির। তার নাম বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকাটা আসলেই লজ্জার ও দুঃখজনক। তার নামে স্থাপনার নামকরণের প্রস্তাব কয়েকবার উঠেছিল।
নোবিপ্রবির জনৈক শিক্ষার্থী বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের একজন। আমি চাই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে অচিরেই বড় কোনো স্থাপনার নামকরণ বা হল নির্মাণ করা হোক।
নোবিপ্রবিতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের স্মৃতি রক্ষার্থে হলের নামকরণ, স্মৃতিস্তম্ভ কিংবা ভাস্কর্য নির্মাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বা সাহিত্য সংগঠনগুলোর দাবিও দীর্ঘদিনের।
এ বিষয়ে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের দৌহিত্র সোহেল চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন, নোবিপ্রবির নামই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের' নামে হবার কথা ছিল। কিন্তু তখনকার রাজনৈতিক বিতর্কে তা আর সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে আমাদের কোনও আফসোস নেই। আজ হোক আর পঞ্চাশ বছর পর হোক, জাতি ঠিকই এই নামগুলো খুঁজে নেবে তাদের নিজেদের পরিচয়ের জন্য অথবা ইতিহাসের প্রয়োজনে।
উল্লেখ্য নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নান্দিয়াপাড়া ইউনিয়নের বাঘপাঁচড়া গ্রামে ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন। এসএসসি পাশের পর ১৯৫৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে খুলনার মংলা বন্দরে নৌবাহিনীর গানবোট ‘পলাশ’র প্রধান ইঞ্জিনরুমে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আক্রান্ত হন মোহাম্মদ রুহুল আমিন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের প্রাক্কালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গানবোট ‘পলাশ’ বাঁচানোর চেষ্টায় বীরত্বের সাথে লড়াই করে শহীদ হন তিনি।
লেখক: (গবেষক ও সমাজকর্মী)
আহবায়ক: নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলন