একটু মানবিকতা, বদলে দিবে একটি পথশিশুর জীবন
জীবন চলার পথে আমরা অনেক মানুষ দেখতে পাই। এখানে কেউ উচ্চবিত্ত, কেউ মধ্যবিত্ত, কেউবা আবার নিম্নবিত্ত। আর এই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকেই পথশিশুর জন্ম। আমাদের দেশের অলিতে-গলিতে অনেক পথশিশু আছে যাদের কারো বাবা নেই, কারো মা নেই কিংবা কারো পরিবারের কেউ অসুস্থ। আর এই পথশিশু গুলো তখন নিজেরাই পরিবারের বোঝা বহন করে। দারিদ্র্যের কষাঘাত সহ্য করতে না পেরে কেউ ইট ভাটায় কাজ করে, কেউ গাড়ির হেল্পারি করে, কেউ টুকায়, কেউ ভিক্ষা করে, কেউবা চুরি করে। সমাজে এরা লেখাপড়া ও অনন্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাচ্ছে না সঠিক পথের দিশা
রাস্তাঘাটে, হাটবাজারে, স্কুল-কলেজের সামনে আমরা অনেক পথশিশু দের দেখতে পাই। কিন্তু কখনো কি একজন পথশিশুর জীবনের গল্প শুনতে চেয়েছি? খুব অদ্ভুত ভাবে বেড়ে উঠে এই পথশিশুরা। খুব অল্প বয়সেই জীবনকে বুঝে নিতে শেখে। এরা সমাজের সুবিধা ভোগ করতে পারেনা। এজন্য এদের আরেক নাম সুবিধা বঞ্চিত শিশু।
যে বয়সে আমরা পড়াশুনা করি, বন্ধুদের সাথে খেলাই মত্ত থাকি সে বয়সে এই পথশিশুরা বেঁচে থাকার উপকরণ খুঁজে। পড়ালেখা করে যে বিবেকবোধ আমরা তৈরি করতে পারিনা, পথের ধুলোয় অদ্ভুত ভাবে বেড়ে উঠার মাঝেও তারা নিজেদের বিবেকবোধ তৈরি করে নেয়।
যে বয়সে আমরা ভাবতাম স্কুলে যেয়ে টিফিনে কি খাব, কার পাশে বসবো, স্যারের কোন হোমওয়ার্ক আছে কিনা। আর এই পথশিশুরা ভাবে রোজ সকালে কোন রাস্তায় ভিক্ষা করলে বেশি টাকা পাবে। ৫০ টাকা আমাদের একদিন মোবাইল খরচ যায় আর ওদের পরিবারের সবাই মিলে একবেলা খাওয়া হয়ে যায়। জীবন একটা, স্রষ্টা একটা অথচ কত পার্থক্য!
যেখানে আমাদের উচিত তাদের দেখাশুনা করা উল্টা আমরা অহংকার করি। গরীব দের মানুষ ভাবিনা। আবার কখনো তাদের গায়ে হাত তুলি। কাছে আসলে রুমাল নাকে দিই। আমাদের ভাব ভঙ্গি এমন যে আজ আমাদের যা ভালো পজিশন এর ক্রেডিট আমাদের। আল্লাহ চাইলে আমাদেরকে এমন পরিস্থিতির সমক্ষিণ করতে পারতো, তাদের জায়গায় নিজেকে ভাবলে কেমন বোধ হবে! নিম্নবিত্ত এই মানুষ গুলোর জীবন বৈচিত্রের সাথে তুলনা না দেওয়া পর্যন্ত সত্যিই বুঝিনা আমরা কতটা সুখে আছি, কতটা ভাল আছি।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এই সুবিধা বঞ্চিত শিশুরাও চাই মানুষের মতো মানুষ হতে। তারাও চাই আমাদের মতো পড়াশুনা করতে। অন্য ৮/১০ টা শিশুর মতো তারাও হাসি খুশি থাকতে চাই। তাদের অনেক স্বপ্ন থাকে। তাদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছে না বলে আজ তাদের প্রতিভাগুলো চাপা পড়ে যায়। তাই কখনো এই সব ছোট পথ শিশুদের গায়ে হাত তুলবেন না, নাকে রুমাল দিয়ে তাদের কে তাড়িয়ে দিবেন না, তাদেরই সমবয়সী আমাদের ও ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে আছে। তাদের প্রতি আমাদের মানবিক চিন্তা থাকা উচিত। তারা আমাদের মুখের দিকে চেয়ে থাকে শুধুমাত্র দু'মুঠো ভাতের জন্য। তাদের জন্য কিছু করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
আসুন আমরা সবাই তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই, তাদের প্রতিভাগুলো বিকশিত করার চেষ্টা করি। তাদের সুন্দর এক জীবন উপহার দেই।