২৩ জুলাই ২০১৯, ২০:২১

বাংলাদেশ: আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও শকুনের দৃষ্টি

বঙ্গোপসাগরে কারা নিজেদের উপস্থিতি রাখতে চায়? কারা চায় চীনের সাথে বাংলাদেশ সম্পর্কে না জড়াক? কারা সেন্ট মার্টিনে সামরিক ঘাটির প্রস্তাব দিয়েছিল? অতি সম্প্রতি কারা রোহিংগা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ না নিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে অযাচিত ভাবে বাংলাদেশের সাথে জুড়ে দিতে প্রস্তাব করেছিল?

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার বিষয়ক শুনানিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মনোনীত তিন জন প্রতিনিধির বাইরে কিভাবে প্রিয়া সাহা মনোনীত হয়েছিল? কিভাবে মাত্র আধাঘন্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওভাল অফিসে প্রিয়া সাহা এপয়নমেন্ট পেয়েছিল? প্রিয়া সাহা তো যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে যায়নি। তাহলে কারা কি উদ্দেশ্যে মনোনীত তিন জনকে বাদ দিয়ে শুধু প্রিয়া সাহাকেই ওভাল অফিসে নিয়ে গিয়েছিল? আর প্রিয়া সাহা সজ্ঞানে ট্রাম্পের সামনে ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষের গুমের কথা বলে, " প্লিজ, হেল্প আস " বলে বিচার দিয়েছিল।

কিছু হিসাব মিলানো যাক,

১. প্রিয়া সাহা কি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য এসব করেছে? এটার সম্ভাবনা খুবই কম। তার ফ্যমিলির দিকে তাকানো যাক। স্বামী দুদকের বড় অফিসার। দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক দিন থেকে পড়াশোনা করছে। তার ভাষ্যমতে সে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বারই যাতায়াত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার মত সক্ষমতা তার এমনিতেই আছে। তাহলে কেবল রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এত বড় বিস্ফোরক মন্তব্য বা বিচার দেয়ার সম্ভাবনা কম।

২. প্রিয়া সাহা কি ট্রাম্পের মত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্টের সামনে উত্তেজনার বশে বা স্নায়ুচাপে এমন কথা বলে ফেলেছে? কিন্তু পরে ফেসবুকে তার নতুন ভিডিওতে সে পূর্বের অবস্থানের কথাই বারবার বলেছে। তাহলে ওভাল অফিসের বক্তব্য ভেবেচিন্তেই দিয়েছে।

৩। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগেও সারাবিশ্বের সংখ্যালঘুদের নিয়ে এমন শুনানি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে " হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের " অনেকেই গিয়েছেন। কিন্তু কেউ কি রকম কথা বলেছেন? আর প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রে যাবার বিষয়টি তার সংগঠন জানত না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর নিজ থেকেই তাকে আলাদাভাবে নিয়েছে। কেন?

৪। কোন মহল যদি আগ থেকে এভাবে চিন্তা করে যে, প্রিয়া সাহার মন্তব্যে দেশব্যাপী কড়া প্রতিক্রিয়া হবে। হিন্দু মুসলিম সম্পর্কে চিড় ধরবে। মুসলিমরা হিন্দুদের দোষারোপ করবে, হিন্দুরা মুসলিমদের। একটা অস্থিতিশীলতা তৈরী হবে। এই সুযোগে সুযোগসন্ধানী মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ চালাবে। দেশে অরাজকতা তৈরী হবে। এই সুযোগটা নিশ্চিতভাবে কাজে লাগাতে চাইবে তারা, যারা বাংলাদেশকে নিয়ে খেলতে চায়। কব্জায় রাখতে চায়।

৫। ধরা যাক, প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হলো। দেশে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো? কি প্রতিক্রিয়া হবে ভাবুন তো। ট্রাম্পের কানে যাবে, যে মহিলা আপনার কাছে বিচার দিয়েছে, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে আটক করেছে বাংলাদেশ। ক্ষেপে গেল ট্রাম্প। কি হতে পারে??

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে । তৃতীয় বিশ্বের একটি রাষ্ট্র মাথা তুলে দাঁড়াক,সেটা অনেকেরই মাথাব্যাথার কারন। সেই সাথে কারো যদি নিজস্ব স্বার্থ হাসিল না হয় তাহলে কত রকম গেম খেলা হয়, সেটা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ইতিহাস ই চোখে আংগুল দিয়ে প্রমান করে। আর বিশ্ব মোড়লের কথা তো কারো অজানা নয়। নিজ স্বার্থের জন্য কি না করতে পারে?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভেবে চিন্তে আগানোর যে কথা বলেছেন তা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দেশ চালানো, কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে নিজেরা ভাল থাকাটাই আন্তর্জাতিক কূটনীতিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। প্রিয়া সাহাকে ব্যবহার করে কেউ যদি কিছু করতে চায় সেটা কূটনৈতিক ভাবে ঠান্ডা মাথায় করাই সমীচীন। শক্তিশালী খেলোয়ারের সাথে কূটনৈতিক বুদ্ধি দিয়ে লড়াই ই একমাত্র রাস্তা।

ভাল থাকুক বাংলাদেশ, অটুট থাকুক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।

লেখক: সহকারী কমিশনার (কর)