ভারতে মুসলিম নির্যাতনের একাল-সেকাল

  © টিডিসি ফটো

আমাদের নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। মুসলিমদের দীর্ঘদিনের শাসন ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে আছে গোটা ভারত জুড়ে। প্রায় সাতশ বছর দিল্লী কেন্দ্রিক মুসলিম শাসনে ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল মুসলমানদের অধীনে। যার প্রমাণ ভারতে বর্তমান মুসলিমদের বিভিন্ন স্থাপনা, ঐতিহাসিক নিদর্শন, মুসলিম নাম, সংস্কৃতি ও বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভারতে বাস করার সময় মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশকে নিজেদের আবাসভূমি হিসেবেই গণ্য করতো। ঠিক যেন আল্লামা ইকবালের সেই কবিতার বহিঃপ্রকাশ-

আরব আমার ভারত আমার চীনও আমার নহে গো পর
মুসলিম আমি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছে আমার ঘর।

আজ সে ভারতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু ও ব্যাপক হারে নিগ্রহ নির্যাতনের শিকার। সেই ভারতের নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে আজকের এ লেখার প্রয়াস।

পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৭৫৫ কোটি যার মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১৫৭ কোটি, অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ শতাংশ মুসলমান। আর মুসলমানদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ এশিয়া মহাদেশে বসবাস করে। ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ২০ কোটি ৩০ লাখ মুসলমান বাস করে যা বিশ্বে মোট মুসলমান জনসংখ্যার প্রায় ১৩%। পাকিস্তানে ১৭ কোটি ৪০ লাখ, ভারতে ১৭ কোটি ৭২ লাখ। ইসলাম ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস। জনসংখ্যার বিচারে ভারতে মুসলমানদের স্থান হিন্দুদের ঠিক পরেই। ভারতের জনসংখ্যার মোট ১৩.৪ শতাংশ মুসলমান।

আমেরিকার পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা মতে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়াকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশে পরিণত হবে ভারত।

অষ্টম শতাব্দীতে (৭১২ খ্রি.) মুহাম্মদ বিন কাশিমের নেতৃত্বে আরব মুসলমানরা বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের সিন্ধুপ্রদেশ জয় করেন। সিন্ধু উমাইয়া খিলাফতের পূর্বাঞ্চলের প্রদেশে পরিণত হয়। দশম শতাব্দীর প্রথম ভাগে গজনীর সুলতান মাহমুদ পাঞ্জাব গজনী সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। ঐতিহাসিক হেগ বলেন, He was the first to carry the banner of Islam into the heart of India.

সুলতান মাহমুদ বর্তমান ভারত ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে ১৭ বার অভিযান চালিয়েছিলেন। তবে দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে আরও সফলভাবে ভারতে অভিযান চালান মুহাম্মদ ঘুরি। তাঁর অভিযানের ফলশ্রুতিতে ১১৯২ সালে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজ পরাজিত করে ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন করেন। এতে মুসলিম শাসন প্রায় ৭০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল।

আরবে সপ্তম শতাব্দীর সূচনা লগ্নে ইসলামের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে আরব মুসলমানরা বিশ্বের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়। এরপর আরব বণিক ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বিশ্বের সর্বত্র তাঁদের নতুন ধর্মপ্রচারে মনোনিবেশ করেন। মূলকথা হলো মুসলমানদের সিন্ধু বিজয়, সুলতান মাহমুদের ১৭ বার ভারত অভিযান ও ঘুরির ভারত বিজয়ের পূর্বেই দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছিল।

খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথম ভাগে আরব বণিক সম্প্রদায়ের ভারতে আগমনের সূত্র ধরে ভারতবাসী ইসলাম সম্পর্কে অবগত হয়। আরব ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরবে ইসলাম আগমনের পূর্বে প্রাচীনকাল থেকেই বজায় ছিল। সে যুগে ভারতের পশ্চিমে মালাবার উপকূলের বন্দরগুলিতে আরব বণিকদের নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল। কারণ এসব বন্দর ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্দরগুলির প্রধান যোগসূত্র।

৬৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ প্রথম মুসলমান পর্যটকরা নৌপথে ভারতীয় উপকূলে আগমন করেন। সপ্তম শতাব্দীর শেষভাগে আরব মুসলমানরা প্রথম ভারতের উপকূলীয় এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। ৬২৯ সালের দিকে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবদ্দশাতেই ভারতে প্রথম মসজিদ স্থাপিত হয়। চেরামন পেরুমল নামে ধর্মান্তরিত মুসলমানের নির্দেশে কেরালার ত্রিসূর জেলায় মালিক বিন দিনার এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। সে হিসেবে পেরুমলকেই প্রথম ভারতীয় মুসলমান গণ্য করা হয়।

ধারণা করা হয় মালাবার উপকূলের মোপলা সম্প্রদায় সম্ভবত প্রথম ভারতীয় ধর্মান্তরিত মুসলমান সম্প্রদায়। কারণ এ সম্প্রদায়ই আরব বণিকদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করত। এই সময় সমগ্র উপকূল জুড়ে ব্যাপক ইসলামের প্রচার করা হয় এতে বেশ কিছু স্থানীয় অধিবাসী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এই সকল ধর্মান্তরিত নব মুসলিমরা মোপলা সম্প্রদায়ভুক্ত হয়েছিলেন। আরব বণিকদের সঙ্গে এই সম্প্রদায়ের বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়েছিল।

মুসলমানরা সেই ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে আরব, তুরস্ক, ইরান-তুরান প্রভৃতি দেশ থেকে বাংলা তথা ভারত উপমহাদেশে আগমন করে। অতঃপর এ দেশকে তারা নিজের দেশ মনে করে দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবেসেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা এ দেশের হিন্দুদের সাথে পাশাপাশি বাস করে এসেছে। এই পাশাপাশি বাস করেও উভয়ের মধ্যে সবসময় একটা দূরত্ব বজায় ছিল।

এই দূরত্ব বজায় থাকার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার (বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ) বলেন, এই দুই সম্প্রদায়ের ধর্ম বিশ্বাস ও সমাজবিধান সম্পূর্ণ বিপরীত। হিন্দুরা বাংলা সাহিত্যের প্রেরণা পায় সংস্কৃত থেকে আর মুসলমানরা পায় আরবী-ফারসী থেকে। মুসলমানদের ধর্মের গোঁড়ামি যেমন হিন্দুদের তাদের প্রতি বিমুখ করে ছিল, হিন্দুদের সামাজিক গোঁড়ামিও মুসলমানদের তাদের প্রতি বিরূপ করেছিল। হিন্দুরা যাতে মুসলমান সমাজের দিকে বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখাতে না পারে, তার জন্য হিন্দু সমাজের নেতাগণ কঠোর বিধানের ব্যবস্থা করেছিলেন।

১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর মুসলিম শাসনের অবসান ও ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর উপমহাদেশে মুসলমানদের অস্তিত্বই ছিল হিন্দুদের কাছে এলার্জির মতো। ভারতীয় মুসলমানরা যখন হিন্দুদের তাঁবেদারী না করে মুসলিম ঐতিহ্য ও তমদ্দুন প্রতিষ্ঠার পথে এগোতে শুরু করেছে, তখন থেকেই এবং আরো পরিষ্কার করে বলা যায় মুসলমানদের স্থায়ী দাস তথা শুদ্র বানাবার হিন্দুবাদী চক্রান্তের ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার কথা। তখনই চক্রান্তকারী হিন্দুরা মুসলমানদের ওপর শুরু করলো নির্যাতন।

১৭৫৭ সালে সিরাজদৌলার পতন থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের জীবনে নেমে এসেছিল চরম দুর্দিন ও ঘোর অন্ধকার। এসময় হিন্দু কবি লেখকেরা তাদের সাহিত্যে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক কুৎসা রটনায় ভরপুর করে ফেলেন।

বঙ্কিমচন্দ্র ‘আনন্দমঠ’ লিখে একদিকে মুসলমান জাতির বিরুদ্ধে তার স্বজাতিকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছেন এবং বন্দে মাতরম সঙ্গীতের মাধ্যমে হিন্দুজাতির মধ্যে পুনর্জাগরণের প্রেরণা সৃষ্টি করেছেন। বলা হয় বঙ্কিম সাহিত্যের মাধ্যমে হিন্দুজাতির মধ্যে পুনর্জাগরণের প্রেরণা সৃষ্টি ছিল অখণ্ড ভারতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের মূল হোতা ও উৎস।

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র, কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, রংগলাল বন্দোপধ্যায়, হেমচন্দ্র বন্দোপধ্যায় এবং নবীন চন্দ্র থেকে শুরু করে ছোট-বড় সকল হিন্দু কবি সাহিত্যিক ইসলাম ও মুসলমানদের চরিত্র বিকৃত করণকে পেশা ও নেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তারা এসব কাল্পনিক লেখা লিখে হিন্দুদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষ্যাপিয়ে তোলেন।

অথচ কবি জীবনানন্দ দাশ লিখলেন সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে হিন্দু মুসলিম মিলনের কবিতা। তিনি হিন্দু-মুসলমান কবিতায় লিখেছেন।

-নিখিল ভারতময়
মুসলমানের স্বপন-প্রেমের গরিমা জাগিয়া রয়!
এসেছিল যারা ঊষর ধুসর মরুগিরিপথ বেয়ে,
একদা যাদের শিবিরে সৈন্যে ভারত গেছিল ছেয়ে,
আজিকে তাহারা পড়শি মোদের, মোদের বহিন-ভাই;
আমাদের বুকে বক্ষে তাদের, আমাদের কোলে ঠাঁই
কাফের যবন টুটিয়া গিয়াছে, ছুটিয়া গিয়াছে ঘৃণা,
মোসলেম বিনা ভারত বিফল, বিফল হিন্দু বিনা;
-মহামৈত্রীর গান
বাজিছে আকাশে নব ভারতের গরিমায় গরীয়ান!

হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষের আরও একটি কারণ ছিল মসজিদের সামনে হিন্দুদের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার এবং জমিদারীর অধীনে ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় মুসলমানদের গো কোরবানীতে বাধা প্রদান করা। হিন্দুরা উপমহাদেশে মুসলমানদের সাথে সংঘর্ষ বাধাবার অজুহাত হিসেবে গরুকে হিন্দুদের উপাস্য ও দেবতার আসনে স্থান দেয়া হয়। অতঃপর ‘গো হত্যা-নিবারণ সমিতি, ‘গোরক্ষিণী সমিতি’ প্রভৃতি স্থাপন করে মুসলমানদের সাথে তারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির কিছু পূর্বে পাঞ্জাব অঞ্চলে যে ধর্মীয় দাঙ্গা বেধেছিল, তাতে উভয় ধর্মের ২০০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ জন মানুষ নিহত হয়ে ছিলেন। ইউএনএইচসিআরের হিসেব অনুসারে, ১ কোটি ৪০ লক্ষ হিন্দু, শিখ ও মুসলমান ভারত বিভাজনের ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এতে মানব ইতিহাসের বৃহত্তম দেশত্যাগের ঘটনাটি ঘটে।

পাক ভারত আলাদা হলেও হিন্দু-মুসলিম সংঘাত বা দাঙ্গা বন্ধ হয়নি। এখনো ভারতের বিশাল সংখ্যক মুসলিমের বাস। তারা প্রতিনিয়ত নানান বৈষম্য, শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার ছোট বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। নিহত হয়েছেন হাজার হাজার মুসলমান।

১৯৪৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় দাঙ্গার একটি আংশিক চিত্রে দেখা যাচ্ছে উপরোক্ত সময়ে শুধুমাত্র বড় বড় দাঙ্গাতেই ২৬,০০০ লোক নিহত হয়।

ধর্মনিরপেক্ষ এবং আপোষহীন গণতন্ত্রী হবার দাবিদার কংগ্রেসের সময়েই অধিকাংশ দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে। আবার হিন্দুবাদী রাজনীতির ধারক বিজেপি এবং তার সমর্থিত অথবা অনুসৃত সংঘ পরিবার তো কোনও না কোনও ভাবে দাঙ্গার সাথে স্পষ্ট জড়িত। বিজেপির বড় নেতা নরেন্দ্রমোদি গুজরাটে যে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা সংঘটিত করেছেন তার মতো ভয়াবহতা দুনিয়ার মানুষ খুব কমই দেখেছে। আবার সেই নরেন্দ্রমোদি নির্দোষও প্রমাণিত হয়েছেন এখন তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীও। গুজরাট দাঙ্গা ভারতের সাম্প্রদায়িক ইতিহাসের সকল নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

২০০২ সালে সংঘটিত হয় আরেক হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। সরকারি হিসেবেই ওই দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মুসলমান প্রাণ হারায়। তবে বেসরকারি একাধিক সূত্রে নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে জানানো হয়। সংখ্যালঘু মুসলমানদের হাজার হাজার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০০ কোটি রুপি। দু’লাখ মুসলমান গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। ১৯৯২ সালে চরমপন্থি হিন্দুদের আক্রমণে ভারতের বাবরি মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়। এর ফলে ১৯৯২ সালে ভারতের প্রধান শহরগুলোতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয় যা মুম্বাই ও দিল্লী শহরে ২০০০ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়।

ভারতে বর্তমান বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম নির্যাতন ও হত্যা বীভৎস আকার ধারণ করেছে। জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিতে মুসলিমদের বাধ্য করা হচ্ছে। জয় শ্রীরাম না বললে মুসলিমদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হচ্ছে। যার চিত্র গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে বেশ করে ঘুরছে।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায় ভারতের পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ ঝাড়খন্ডে ২৪ বছর বয়সী তাবরেজ আনসারি গত ১৮ জুন নির্যাতিত হওয়ার পর ২২জুন মারা যান। তাবরেজ আনসারির বিরুদ্ধে মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগ এনে গণপিটুনি দেয়া হয়। গণপিটুনির বহু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি তাবরেজকে একটি কাঠের লাঠি দিয়ে নৃশংসভাবে পেটাচ্ছেন। আক্রান্ত যুবক ছেড়ে দেওয়ার আকুতি নিয়ে হাত জোড় করলেও তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই ওই ব্যক্তির। আর একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, জোর করে তাবরেজকে বলানো হচ্ছে ‘জয় শ্রী রাম’ ও ‘জয় হনুমান’। এটি একটি ঘটনা মাত্র।

এরকম ঘটনা এখন ভারতের প্রতিদিনের চিত্র। এটা হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ভাইরাল হওয়ার কারণে আমরা সাধারণ মানুষ জানতে পেরেছি। পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক মহম্মদ আফরাজুলকে রাজস্থানে পুড়িয়ে মেরে ফেলা, গোরক্ষকদের তাণ্ডবে পহেলু খান বা উমের খানদের মৃত্যু, কিংবা হরিয়ানায় কিশোর জুনেইদ খানকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা- এই জাতীয় বহু ঘটনার নীরব সাক্ষী এখন ভারত।

অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ কাশ্মীরে চলছে মুসলিম নিধন। যুবা ও তরুণ কাশ্মীরিদের টার্গেট করে চালানো হচ্ছে গুম খুন ও নির্যাতন। কাশ্মীরের হত্যাযজ্ঞের চিত্রে সেখানকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও ভাষাতাত্ত্বিক অধ্যাপক শেলডন পোলক বলেন, মুসলমান শাসকরা জোর করে ধর্মান্তর করালে ভারতে একজনও হিন্দু থাকত না। কারণ, মুসলমান শাসকরা ভারতে প্রায় বারোশো বছর রাজত্ব করেছিলেন।

ভারতের মুসলিম নির্যাতন বন্ধ করে হিন্দু মুসলিম সহাবস্থান এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে বিশাল সংখ্যক মুসলিমের ভারতে বাস। মুসলিমদের অবহেলা ও তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে কোনো সমাধান হবে না। প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।

কবি নজরুল ইসলামের অমর কবিতা হতে পারে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির ও ঐক্যের চিরস্থায়ী ভিত। হিন্দু-মুসলিমের মিলনের জন্য তিনি রচনা করেছেন-

‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান,
হিন্দু তার নয়ন মনি মুসলিম তাহার প্রাণ।’


সর্বশেষ সংবাদ