কী লাভ হলো নিয়ম ভেঙ্গে?
বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচ বাইরে থাকার পর সাব্বির রহমান একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। উইন্ডিজ ম্যাচে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ডাইভ দিতে গিয়ে কাঁধে চোট পেলে সুযোগ মেলে সাব্বিরের। তরুণ হার্ডহিটার সুযোগটা কাজে লাগাতে পেরেছেন? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো ‘না’।
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে তার লেগব্রেকের ওপর আস্থা রাখেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। একাদশে সুযোগ পাওয়াতে বড় ভুমিকা রেখেছিল হার্ডহিটিং ব্যাটিং এবং তার চৌকশ ফিল্ডিংয়ের সুনাম। কিন্তু অজিদের বিপক্ষে এই দুই বিভাগেই ব্যর্থ সাব্বির। দলের বিপদে সাতে ব্যাট করতে নেমে গোল্ডেন ডাক মেরেছেন। ফিল্ডিংয়ের সময় অ্যারন ফিঞ্চের ক্যাচ ছেড়েছেন, ডেভিড ওয়ার্নারকে রান আউট করার সুযোগ মিস করেছেন।
এমন বাজে পারফরম্যান্স আর দলে মোসাদ্দেক হোসেনের কার্যকারিতা মিলিয়ে বিশ্বকাপে সাব্বিরের আর সুযোগ মিলবে কিনা সন্দেহ। অথচ তরুণ ক্রিকেটারকে কতো কিছু করেই না নিয়ে যাওয়া হলো বিশ্বকাপ খেলতে।
‘তারকা’ হয়ে উঠার পর থেকেই বিতর্ক সাব্বিরের নিত্যসঙ্গী। কখনো শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে, কখনো দর্শক পিটিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। নারীঘটিত কারণে, সতীর্থের সঙ্গে গণ্ডগোল পাকিয়েও আলোচনা ছড়িয়েছেন। শাস্তিও কম জোটেনি। মোটা অঙ্কের জরিমানা, চুক্তি থেকে বাদ, নিষেধাজ্ঞাসহ অনেক শাস্তিই পেয়েছেন সাব্বির।
২০১৮ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ চলাকালীন সময়ে দর্শক পিটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে ছয় মাস নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। সেই শাস্তি শেষ হতে না হতেই আবার জুটেছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা। এবারের অপরাধ ফেসবুকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেওয়া। বাজে খেলার বিষয়টি উল্লেখ করে সাব্বিরকে খোঁচা দিয়ে ফেসবুকে কিছু কথা লিখেছিলেন এক সমর্থক। পরে সাব্বিরের ফেসবুক আইডি থেকে অশ্লীলভাষায় গালাগাল এবং হুমকি দেওয়া হয় সেই সমর্থককে।
বহু সাবধানতার পর ওই কাণ্ড ঘটালে তরুণ ক্রিকেটারের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিলেন বোর্ড কর্তারা। আজীবন নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় সাব্বিরকে। কিন্তু এই শাস্তির মেয়াদ শেষ না হতেই সব বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে নেওয়া হল তাকে।
বিশ্বকাপে লোয়ার মিডল অর্ডারে একজন হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান চাইছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ম্যাশ স্বীকার না করলেও দলের সূত্র বলেছে, অধিনায়কের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতেই সাব্বিরকে দলে ডেকেছিল টিম ম্যানেজম্যান্ট। বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটপাড়ায় তখন রীতিমতো ঝড় বয়ে গেছে।
বারবার সাবধান করার পরও না শোধরানো সাব্বিরকে দলে নেওয়াটা মানতে পারেননি অনেকেই। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সেটা শেষ না হওয়ার আগেই দলে নেওয়াকে ভবিষ্যতের জন্য বড় বাজে উদাহরণ বলছিলেন কেউ কেউ। তবে এসব কথাকে তখন পাত্তা না দিয়ে ‘বিশ্বকাপের পরীক্ষা’ হিসেবে নিউজিল্যান্ড নিয়ে যাওয়া হয় সাব্বিরকে।
পরে বিশ্বকাপ দলেও জায়গা দেওয়া হয় তাকে। তবে এতো নিয়ম ভেঙে সাব্বিরকে বিশ্বকাপে নিয়ে গিয়ে লাভ হলো কই?
লেখক: ক্রীড়া সাংবাদিক