৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল কবে?
বাংলাদেশের খেলার পর লিখেছিলাম, ৩৮তম ওভারের প্রথম তিন বলে লিটনের তিন ছক্কাটা দারুণ লেগেছে। অথচ সেটা পড়ে বিসিএসের এক প্রার্থী লিখেছেন, আমি ভেবেছিলাম আপনি ৩৮তম বিসিএসের আপডেট দিচ্ছেন! কথাটা শুনে খারাপ লাগলো। গত কয়েকদিনে নানা জনের ইনবক্স আর ক্রিকেটের স্ট্যাটাসে বিসিএসের আপডেট জানতে চাওয়াটার বার্তা একটাই। লিখিত পরীক্ষা হয়ে গেছে প্রায় এক বছর। পরীক্ষার্থীরা এখন ফল চায়। অন্তত সর্বশেষ তথ্য চায়।
আমি কয়েকজনকে বলেছিলাম, এই সপ্তাহে পিএসসিতে খোঁজ নিয়ে তথ্য জানাব। সর্বশেষ সেই তথ্য জানলাম, জুলাইয়ের শেষ ছাড়া এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, কেন প্রায় এক বছর লাগছে ফল দিতে? সেটাও বোঝার চেষ্টা করছি।
বহুদিন ধরে বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, তিনি ভালো পরীক্ষা দিলেও কাঙ্খিত নম্বর পাননি। এসব কারণেই প্রথমবারের মতো সিদ্ধান্ত হয়, ৩৮তম বিসিএস থেকে দুজন নিরীক্ষক খাতা মূল্যায়ন করবেন। এরপর সেটির গড় হবে।
ফেব্রুয়ারি মাসে আমি জানিয়েছিলাম, এই বিসিএসের প্রথম মূল্যায়ন শেষে দ্বিতীয় নিরীক্ষকের কাছে খাতা গেছে। পিএসসি ভেবেছিল, এই দুই নিরীক্ষা শেষ করে এপ্রিল-মে নাগাদ ফল দিতে পারবেন। কিন্তু এখন সমস্যা বেঁধেছে দুই নিরীক্ষকের নম্বররের ব্যবধান।
পিএসসি ভেবেছিল, অল্প কিছু প্রার্থীর ক্ষেত্রে হয়তো দুই পরীক্ষার নম্বরের বিশাল ব্যবধান হতে পারে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সংখ্যাটা বিশাল। অনেক ক্ষেত্রে নম্বরের ব্যবধান ৩০ বা আরও বেশি হয়েছে। মোট পরীক্ষার্থীদের কত শতাংশের ক্ষেত্রে সেটি হয়েছে সেটি শুনলে অবাক হতে হয়। পিএসসি এখন এসব খাতা তৃতীয় নিরীক্ষকের কাছে পাঠিয়েছে। যেসব বিষয়ে বেশি খাতা সেগুলো মোটামুটি শেষ পর্যায়ে।
আমি যেটা বোঝার চেষ্টা করেছিলাম এসব প্রক্রিয়া শেষ করে কবে নাগাদ ফল হতে পারে? পিএসসি আশা করছে, জুলাইয়ের শেষের দিকে। তবে কোনভাবেই তারা জুলাই ক্রস করতে চান না। তার মানে জুলাইয়ের শেষের আগে ফল পাচ্ছেন না। তবে এটা ভেবে খুশি থাকতে পারেন, অতীতে একজন নিরীক্ষককের খামখেয়ালি বা অসতর্কতার কারণে যতো ছেলেমেয়ের কপাল পুড়েছে এবার সেটি হচ্ছে না। তারপরেও আমি বলবো, এই দীর্ঘসূত্রতা কমানো জরুরী। ৩৮তম বিসিএসের ছেলেমেয়েদের জন্য শুভ কামনা।
এই সুযোগে আরও কয়েকটা আপডেট দেই। ৪০তম বিসিএসের প্রিলি তো মে মাসেই হয়ে গেছে। এর ফলও জুলাইতে পাবেন। জুলাইয়ের মাঝামাঝি হয়ে যেতে পারে।
এবার ৪১তম বিসিএসের তথ্য। ফেব্রুয়ারি মাসে বলেছিলাম, ৪১তম বিসিএস বিশেষ হবে এমন কোন কথা আমি শুনিনি। আপনারা নিশ্চয়ই এতেদিনে সবাই জেনেছেন, সাধারণ এই বিসিএসের মাধ্যমে ২ হাজার ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে ৪১তম বিসিএসের এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে। কাজেই প্রস্ততি নিতে শুরু করেন।
এবার ৩৭ ননক্যাডার প্রসঙ্গ। এর আগে প্রথম শ্রেণীতে কিছু নিয়োগের সুপারিশ এসেছে এখানে। এই মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে আরেক দফা সুপারিশ করবে পিএসসি। তাতেও দেড় থেকে দুইশজন নিয়োগ পেতে পারেন।
আমি আমার পর্যবেক্ষণ থেকে আগেও বলেছি, বারবার পরীক্ষার জটিলতা এড়িয়ে মেধাবীরা যেন নিয়োগ পায় সে কারণেই ২০১০ সালে ননক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা করা হয়েছিল।
বিসিএস উত্তীর্ণ ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন দফতরে ননক্যাডারে নিয়োগ দিয়ে দেখা গেছে, তারা সততার সঙ্গে অনেক বেশি সেবা দিচ্ছে। তাদের কাজের মানও খুব ভালো। কিন্তু তারপরেও অনেক মন্ত্রণালয় ও দফতর চাহিদা দিতে আগ্রহী না। তারপরেও যতো চাহিদা এসেছে, পিএসসি চায় বেশি বেশি ছেলেমেয়ে নিয়োগ পাক। আমার ধারণা, ৩৭তমের ননক্যাডারে শেষ পর্যন্ত ভালো কিছুই হবে। শুভকামনা তাদের জন্যও।
আরেকটা বিষয়। বিসিএস থেকে নন ক্যাডারে যাওয়া ছেলেমেয়েরা খুব ভালো করছে। আমি মনে করি বছরে একটি বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে সেখান থেকে ক্যাডার, ননক্যাডার, প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি- এমনকি অন্য সব পদেও বেশি বেশি নিয়োগ দেয়া উচিত। তাতে নিয়োগে অনিয়ম কমবে।
অনেকেই একটা প্রশ্ন করেন, কেন এতো ছেলেমেয়ে বিসিএস দেয়? মর্যাদা, বেতন, কর্মসংস্থান এসব কারণের পাশাপাশি, কোনো তদবির ছাড়া সাধারণ ছেলেমেয়েদের চাকরির জন্য বিসিএস ছাড়া আর কোন সুযোগ নেই।
আরেকটা কথা, আমি বহুবার বলেছি, কোটাপ্রথা সংস্কারের পাশাপাশি বিসিএস পদ্ধতিতে আরও কিছু সংস্কার দরকার। বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা যায়, সেটি খুব ভালো সিদ্ধান্ত হবে। আর একটা দেশের নিয়োগ প্রক্রিয়া যতো স্বচ্ছ হবে, ততোই জনপ্রশাসনের জন্য মঙ্গল।
প্রয়োজনে পুরো ফল বিস্তারিত মেধা তালিকাসহ ওয়েবসাইটে দেয়া যেতে পারে। আর একটা বিসিএস নিয়োগে এক বছরের বেশি লাগা উচিত না। দীর্ঘসূত্রতা কমাতেই হবে। যাই হোক সব বিসিএস প্রত্যাশীদের জন্য শুভকামনা। (লেখক: কলামিস্ট)
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মােহাম্মদ সাদিক বলেন, প্রথমবারের মতাে ৩৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা আমরা দু’জন পরীক্ষকের দ্বারা মূল্যায়ন করেছি। ঈদের পর থেকে কিছু কিছু খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বিস্তারিত দেখুন: বিসিএসে এই প্রথম তৃতীয় পরীক্ষক নিয়োগ