দাম বাড়ায় বিড়ি-সিগারেট ছেড়েছেন কতজন?
দাম বাড়ায় বিড়ি-সিগারেট ছেড়েছেন কতজন? এ নিয়ে কি কোনো গবেষণা আছে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে। প্রতি বছরই বাজেটে দাম বাড়ার পণ্যের একটি বিড়ি-সিগারেট। মানুষকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করাই দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্য। কিন্তু এ কারণে বছর বছর কত শতাংশ মানুষ বিড়ি-সিগারেট ছাড়ে, তা আমার জানা নেই। সত্যিই কি এ জন্য কেউ ধূমপান ছাড়ে?
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়ার পর থেকে ফেসবুকে দেখছি, বেশি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে এটি। কেউ এর পক্ষে কেউ বিপক্ষে মত দিচ্ছেন।
একটি ঘটনা। ২০১০ সালে, আমি যখন রিপোর্টিং করতাম, দৈনিক ভোরের ডাকে। তখন প্রেসক্লাবে বাজেটের আগে একটি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছিল, বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়ানোর। তখন জানতে পেরেছিলাম, ওই সংবাদ সম্মেলনটি টাকা দিয়ে করিয়েছিল একটি সিগারেট কোম্পানি। ওই সংবাদ সম্মেলনেও বক্তারা বুঝিয়েছিলেন, দাম বাড়লে মানুষ নিরুৎসাহিত হবে। ফলে ধূমপান ছেড়ে দেবে। কারণ, এটি নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন ছিল উচ্চবিত্তদের কি টাকার অভাব আছে? এ প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারেননি।
এ ঘটনার পর থেকে আমার মনে হয়েছে, এই দাম বাড়ানোর পেছনে থাকে সিগারেট কোম্পানিগুলোর লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যও। তাই ধূমপান বন্ধ করতে হলে এর উৎপাদন, বিপণন বন্ধ করাই শ্রেয়। কারণ, একজন ব্যক্তি স্বাস্থ্য সচেতন হয়েই ধূমপান ছাড়েন। টাকার জন্য ছাড়েন না।
শুক্রবার গণমাধ্যমে একটি সংবাদ ছিল 'সিগারেটের দাম বাড়ায় খুশি নারীরা'। এই সংবাদের ফেসবুক শেয়ারে মাঈন সুমন নামে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, ‘যে খায় সে ৫০ টাকা হলেও খাবে, এতো খুশি হয়ে লাভ নাই।’
তাহের মাদমুদ জিন্নাহ লিখেছেন, ‘নারীদের খুশি হওয়ার কিছুই নাই, বরং তাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। কারণ, যে খায় সে শত টাকা হলেও খাবে। তা থেকে কী হবে? সংসারে লস হবে।
বলি, ধূমপানের কারণে সৃষ্ট রোগে চিকিৎসা ব্যয়ের হিসাবটা কষবেন না?
সংসারে ও স্বাস্থ্যের লস বটে, কিন্তু দেশের অর্থনীতিতে এই শিল্পের বাজার বেশ চাঙা। ঢাকার গবেষণা সংস্থা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এইচডিআরসি) ২০১৫ সালের এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ ধূমপায়ী। তবে সেই সংখ্যা এখন দুই কোটি ছাড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই গবেষণা আরও বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষই ধূমপায়ী। ধূমপায়ী পুরুষদের ২৮ শতাংশেরও বেশি সিগারেট খায় এবং কমপক্ষে ২১ শতাংশ পুরুষ বিড়ি খায়।
এবার একটি আনুমানিক হিসাব। যদি ধরি এক কোটি লোকও দিনে গড়ে ৫টি করে সিগারেট খায়। আর তার দাম যদি গড়ে ধরা হয় ১০টা, তাহলে দিনে এই বাজার ৫০ কোটির।
এই বাজার ক্রমাগত বাড়ছে। বাড়ার অন্যতম একটি কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর নিম্নআয়ের মানুষ বিড়ি ছেড়ে সিগারেট ধরছেন। গত বছর জাপান টোব্যাকো এক বিবৃতিতে বলেছিল, বাংলাদেশ বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম সিগারেটের বাজার এবং এই বাজার প্রতি বছর দুই শতাংশে করে বাড়ছে।
আকিজ গ্রুপের সঙ্গে গত বছর চুক্তির পর জাপান টোব্যাকো এও বলেছিল, বাংলাদেশে বছরে আট হাজার ৬০০ কোটি সিগারেট শলাকা বিক্রি হয়। সিগারেট খাতে মুনাফার এমন সুযোগ ও সম্ভাবনা পৃথিবীর খুব কম দেশেই রয়েছে। তবে কী বিড়ি-সিগারেট কোম্পানিগুলোর মালিকরা বিড়বিড়িয়ে বলবেন না? ‘বেশ হয়েছে, দাম বেড়েছে, ব্যবসাও বাড়ছে।’
আর সিগারেট থেকে বাংলাদেশ সরকারও লাভবান। এই খাত থেকে রাজস্ব আয় কমবেশি ১৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের একক বৃহত্তম খাত এটি।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী