জেনে নিন ফেসবুকে রিচ বাড়ানোর ১০টি কার্যকর উপায়
যারা ফেসবুকে রিচ বাড়াতে চান তাঁরা দীর্ঘ হলেও লেখাটি পড়তে পারেন। বিশেষ করে কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে যারা ফুলটাইম বা পার্টটাইম পেশা হিসেবে নিতে চান, তাঁদের হয়তো কাজে লাগবে। আমার অভিজ্ঞতা, কিছু পড়াশোনা এবং মেটার কয়েকটি ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়ে অর্জিত ধারণা থেকে এ দশটি পরামর্শ দিলাম।
১. স্টপ স্ক্রলিং
স্টপ স্ক্রলিং হচ্ছে, পাঠক বা ভিউয়ারকে আপনার পোস্টকে ধরে রাখার কৌশল। সাধারণত তারা কোনো পোস্ট বা ভিডিও একটু দেখেই অন্য পোস্টে চলে যান। তাঁরা যাতে স্ক্রল করে অন্য পোস্টে না গিয়ে আপনার পোস্ট পড়েন বা দেখেন সেটা নিশ্চিত করাই স্টপ স্ক্রলিং। এটা করার জন্য দুটো কৌশল খুব কার্যকর হলো: (ক) সুন্দর ও ক্যাচি ক্যাপশন এবং (খ) শুরু বা ভূমিকা সুন্দর ও ইন্টারেস্টিং হওয়া। এ দুটো নিশ্চিত করা গেলে আপনার পোস্ট পাঠক বা অডিয়েন্স ধরে রাখবে।
২. স্পেস ম্যানেজমেন্ট
লেখায় স্পেস রাখুন। স্পেসবিহীন লেখা ‘রিডিং ফ্রেন্ডলি’ নয়। তাই পাঠক তা এড়িয়ে যান। ফেসবুকে লেখা রিডিং ফ্রেন্ডলি হতে হয়। এর জন্য স্পেস ম্যানেজমেন্ট জরুরি। নিচে উদাহরণ দিলাম। “শেষ বিকেল। সুনন্দা বারান্দায় বসে আছে। আকাশ লালচে। পাখিরা বাড়ি ফিরছে। সুনন্দার মন আজ খুব ভালো। কারণ রাজিব বাড়ি ফিরছে। মাত্র পনেরো দিনের ট্রেনিং। কিন্তু মনে হচ্ছে কত যুগ! এমন সময় দরজায় এসে দাঁড়াল সারিকা। জিজ্ঞেস করল, ‘মা, বাবাকে আনতে কয়টায় এয়ারপোর্ট যাব?’ সুনন্দা উত্তর দিল, ‘রাত আটটার দিকে বেরুব।’ তারপর মা–মেয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বাড়ির ভেতর গেল।”
খেয়াল করুন উপরের লেখাটি একটানে লেখা। স্পেস খুব একটা নেই। তাই অগোছালো লাগে। এ ধরনের লেখা পাঠক এড়িয়ে যান, কারণ তা রিডিং ফ্রেন্ডলি না।
এবার একই লেখা নিচে আবার পড়ুন:
শেষ বিকেল।
সুনন্দা বারান্দায় বসে আছে। আকাশ লালচে। পাখিরা বাড়ি ফিরছে।
সুনন্দার মন আজ খুব ভালো। কারণ রাজিব বাড়ি ফিরছে।
মাত্র পনেরো দিনের ট্রেনিং।
কিন্তু মনে হচ্ছে কত যুগ!
এমন সময় দরজায় এসে দাঁড়াল সারিকা। জিজ্ঞেস করল, ‘মা, বাবাকে আনতে কয়টায় এয়ারপোর্ট যাব?’
সুনন্দা উত্তর দিল, ‘রাত আটটার দিকে বেরুব।’
তারপর মা–মেয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বাড়ির ভেতর গেল।
প্রথমটির চাইতে পরেরটি পড়তে অনেক আরাম না? বই এবং ফেসবুকের স্পেস এক রকম হবে না। ফেসবুকের বেশির ভাগ পাঠক ছয় ইঞ্চি মনিটরে পড়েন। তাই এখানে পড়ার ব্যাপারটি চোখের জন্য স্বস্তিদায়ক হওয়া উচিত। বইয়ের জন্য প্রচলিত রীতি এ স্বস্তি দেবে না।
৩. সিরিয়ালে গ্যাপ রাখুন
আপনার লেখায় যদি সিরিয়াল নম্বর থাকে, তবে দুটো সিরিয়ালের মাঝখানে গ্যাপ রাখুন। ব্যাপারটি বোঝার জন্য এ লেখায় কীভাবে নম্বরের সিরিয়াল রাখা হয়েছে তা খেয়াল করতে পারেন।
৪. ছবি সংযুক্ত করুন
ফেসবুক অ্যালগরিদম ছবিসহ পোস্ট বেশি গুরুত্ব দেয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়।
(ক) অর্গানিক বা অরিজিনাল ছবি হলে ভালো।
(খ) কপিরাইটযুক্ত ছবি দেওয়া উচিত নয়। দিলেও অনুমতি নিতে হবে। প্রপার ক্রেডিট দিতে হবে।
(গ) ইন্টারনেট থেকে ছবি নিলে পাবলিক ডোমেইন বা কপিরাইটমুক্ত ছবি দেওয়া উচিত।
৫. শব্দ ব্যবহারে সাবধানতা
যেকোনো পোস্টে শব্দচয়ন খুব সাবধানে করতে হবে। ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে যায় না এমন শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়। যেমন, অশ্লীল, ঘৃণা ছড়ানো, হিং**সা*, ত্ব*ক শব্দ।
৬. টাইমিং
ফেসবুকে কোন সময় পোস্ট করবেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে সময় মানুষ বেশি অনলাইনে থাকেন, তখন পোস্ট করা ভালো। বাংলাদেশে পোস্ট করার ভালো সময় হলো:
সকাল ৭–৯টা: এ সময় ঘুম থেকে উঠে অনেকে স্ক্রল করেন।
দুপুর ১–২টা: লাঞ্চ টাইমে অনেকেই ফেসবুক দেখেন।
রাত ৭–১০টা: বেস্ট টাইমিং। সময়–কাজকর্ম শেষে বেশির ভাগ মানুষ অনলাইনে যান।
এ সময়ে পোস্ট দেওয়া সম্ভব না হলে আপনার সুবিধাজনক সময়ে ‘সিডিউল’ করে রাখুন। তাহলে ফেসবুক নিজেই নির্ধারিত সময়ে পোস্ট আপলোড করবে। আমি তাই করি।
এ ছাড়া, ফেসবুকে পোস্ট সিডিউল করার সময় ‘সাজেস্টেড টাইম’ দেখায়। এটি আপনার জন্য পোস্ট করার উপযুক্ত সময়। কারণ ফেসবুক অ্যালগরিদম আপনার অডিয়েন্স বা পাঠকের উপস্থিতি বিশ্লেষণ করে এ সময়টি নির্ধারণ করে।
ছুটির দিনে ভিউ কম। কারণ মানুষ এসব দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আড্ডা এগুলোতে মনোযোগ দেন। তাই ছুটির দিনে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট না করাই ভালো। চেষ্টা করুন একটি নির্দিষ্ট সময়ে পোস্ট করতে।
৭. একটির বেশি ছবি নয়
অনেকে একসাথে অনেক ছবি পোস্ট করেন। এগুলো ভিউয়ারদের কাছে গুরুত্ব হারায়। তারা একসাথে অনেক ছবি দেখতে আগ্রহী হয় না। তার চাইতে একটি সুন্দর ছবি অনেক বেশি গুরুত্ব পায়।
৮. হ্যাশট্যাগ
পোস্ট রিচের জন্য হ্যাশট্যাগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পোস্টের সঙ্গে যায় এমন কোনো জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন। আমি নিজের সিগনেচার ‘আসুনমায়াছড়াই’-এর সঙ্গে BadalSyed Motivational, Positivevibes, Selfawareness ইত্যাদি হ্যাশট্যাগগুলো ব্যবহার করি।
৯. এনগেজমেন্ট
আপনার পোস্টে যারা কমেন্ট করেন তাঁদের জবাব দেওয়া আপনার দায়িত্ব। এর ফলে ফলোয়ার বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ দৃঢ় হয়। মমতার সম্পর্ক গড়ে উঠে। দিন শেষে তা রিচ বাড়ায়। মমতার বন্ধন খুব শক্তিশালী। কারো সঙ্গে ভিন্নমত হলে আপত্তিকর উত্তর দেবেন না। ভিন্নমতই সৌন্দর্য।
১০. কনসিসটেন্সি
আমি মেটার কয়েকটি ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছি। তাতে বলা হয়েছে, ফেসবুকে রিচ বাড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো কনসিসটেন্সি। একজন বিশেষজ্ঞের লেখায় পড়েছি রিচ বাড়ার শর্ত তিনটি হলো:
(ক) কনসিসটেন্সি।
(খ) কনসিসটেন্সি।
(গ) কনসিসটেন্সি।
তার মানে, আপনি যদি রিচ বাড়ার ব্যাপারে সিরিয়াস হন, আপনাকে পোস্ট করার ব্যাপারে কনসিসটেন্সি বজায় রাখতে হবে।
পরামর্শগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, উপরের কোনো কৌশল কাজ করবে না যদি পোস্টগুলো মৌলিক না হয়। যদি আপনি পাঠক বা অডিয়েন্সকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেন, সেরকম হলে অ্যালগরিদম আপনার পোস্টকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, রিচের কৌশল অ্যালগরিদমে নয়, মানুষের মনে। ফেসবুক বন্ধুদের ভালোবাসুন, তারাই আপনার রিচ বাড়িয়ে দেবেন। ভালোবাসার চাইতে শক্তিশালী আর কোনো অ্যালগরিদম নেই।