১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৫৪

আপনার শিশুসন্তানকে যাদের সঙ্গে মিশতে দেবেন না

বাদল সৈয়দ  © টিডিসি সম্পাদিত

শিশুরা কার সঙ্গে মিশছে এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। সারাজীবন এর প্রভাব থাকে। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিত। অভিজ্ঞতা থেকে আমি নিচে সাত ধরনের মানুষের কথা বললাম। বলে রাখা ভালো, এসব ত্রুটি আমাদের অনেকের কমবেশি আছে। তাই আমি গড়পড়তা সবার কথা বলছি না। স্বভাবগতভাবে ভাবে এ ত্রুটিগুলো যাদের গভীরভাবে আছে তাদের কথা বলছি।

১। স্বভাবগত অভদ্র
ভদ্রতা এমন একটি গুণ যা শিশু বিকাশের সাথে সাথে গড়ে উঠে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে চাইলেই এ গুণ আয়ত্ব করা যায় না। এটি দীর্ঘদিনের ফসল। শিশুরা চারপাশের মানুষ ও পরিবেশ থেকে এ গুণ অর্জন করে। তারা যদি অভদ্র মানুষের সাথে মিশে তবে সহজে ভদ্রতা শিখবে না। কারণ সে বড়ই হয়েছে অভদ্র আচরণ দেখে। ভদ্রতা তার মগজের কোষে জায়গা পাবে কোত্থেকে?

২। স্বভাবগত নেতিবাচক
এরা সারাক্ষণ নেগেটিভ কথা বলে শিশুদের মনোবল গড়ে উঠার দরজা বন্ধ করে দেয়। এধরনের মানুষের প্রভাবে শিশুদে পক্ষে ইতিবাচক চিন্তা করা কঠিন হয়ে উঠে। জীবনের প্রতি জন্ম নেয় বিতৃষ্ণা। এ বিতৃষ্ণা সারাজীবন তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

৩। স্বভাবগত বদরাগী
এধরনের সঙ্গ বাচ্চাদের দুটো ক্ষতি করে। এক নম্বর হলো, তারা এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বদরাগী হয়ে উঠে। দুনম্বর হলো, রাগী মানুষের ক্ষিপ্ত আচরণ শিশুদের মধ্যে ভীতি তৈরি করে।  যা তারা পরবর্তী জীবনে সহজে কাটিয়ে উঠতে পারে না। ( মাঝে মাঝে রাগারাগি আমরা সবাই করি। এখানে অতি বদরাগীদের কথা বলা হয়েছে)

৪। স্বভাবগত হতাশাবাদী
হতাশাবাদী মানুষ শুধু শিশুদের আত্মবিশ্বাস গুঁড়ো গুঁড়ো করে দেয়। তাদের ভরসার আলো নিভিয়ে দেয়। এদের আশেপাশে থাকা শিশুরা ভাবতে শুরু করে, তাদের দ্বারা কিছুই সম্ভব নয়। শিশুদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে চাইলে হতাশাবাদীদে কাছ থেকে দূরে রাখা উচিত 

৫। স্বভাবগত মিথ্যাবাদী
মিথ্যাবাদীকে এমনকি তার সন্তানেরাও বিশ্বাস করে না। আমরা নিশ্চয় চাইব না, আমাদের বাচ্চারা মিথ্যা বলা শিখুক। তাই তাদের মিথ্যাবাদীদের কাছ থেকে দূরে রাখুন। নয়ত সত্যের উজ্জ্বল আলো তারা আবিষ্কার করতে পারবে না।

৬। নেশাসক্ত
খবরদার! নেশাসক্তদের কোনো তাললয় নেই। ভাষার ঠিক নেই। আচরণের ঠিক নেই। শিশুরা এদের আশেপাশে থাকলে তাদের মস্তিষ্ক ঘুনে পোকায় খাবে।

৭। কুসংস্কার আচ্ছন্ন
এধরনের লোকজন শিশুদের যুক্তিবাদী হতে বাধা দেয়। তারা মুক্ত চিন্তা করতে পারে না। শিশুমনে চিন্তা করার, যুক্তি খোঁজার উম্মেষ না ঘটলে তা বাকি জীবনে ঘটার সম্ভাবনা খুব কম। আপনি যদি চান, আপনার সন্তান কুসংস্কারমুক্ত হয়ে দুনিয়া আবিষ্কার করুক, তাহলে এদের কাছ থেকে তাদের দূরে রাখুন।

উপরে বর্নিত মানুষগুলো থেকে শিশুদের দূরে রাখা সবসময় সম্ভব না, কিন্তু যতদূর সম্ভব দূরে রাখুন। একমুহূর্ত দূরে রাখতে পারলেও অনেক লাভ। সে লাভের দাম কোহিনূর হীরার চাইতেও বেশি।

পাদটীকা: এ লিখাটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাপ্রসূত। আমি শিশুমনবিশেষজ্ঞ নই। তবে আমি শিশু-কিশোরদের বোঝার চেষ্টা করি, তাদের জন্য লেখালেখি করি।

বাদল সৈয়দ: কথাসাহিত্যিক ও সরকারি কর্মকর্তা