তদন্ত কমিটি কি আদৌ ডাকসু অনিয়মের রিপোর্ট প্রকাশ করবে?
ডাকসু নির্বাচনে এক প্রার্থী কর্তৃক ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক এক নেতাকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান। ডাকসু নির্বাচনে জালিয়াতি, অনিয়ম ও কারচুপির বিভিন্ন চিত্র মিডিয়াতে উঠে এসেছে। এই নির্বাচনে রাত ৩ টার পর ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে হলের ফলাফল সন্ধ্যার দিকে প্রকাশ করা হলো, আর কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশ করতে রাত ৩ টা পর্যন্ত লাগলো।
এই বিষয়টা নিয়ে সকলের মধ্যেই একটা সন্দেহ যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক ফলাফল প্রকাশ করেনি। তারা চাপের মধ্যে থেকে উপরওয়ালাদের মতামত নিয়ে উপরওয়ালাদের খুশি করে ফলাফল প্রকাশ করেছে।
এবিষয়ে আমি একমাত্র লিখিত অভিযোগকারী হিসেবে ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান, অধ্যাপক সাজেদা বানু, গণিত বিভাগ, ম্যামকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, ম্যাম রাত ৩ টার পর ফলাফল কেন প্রকাশ করলেন?
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, আমরা ওএমআর (OMR) মেশিনে ভোটের রেজাল্ট পাওয়ার পর, আবার স্যাম্পল (sample) হাতে গুণে দেখেছি যে, ওএমআর মেশিনে কোন ভুল হলো কি না? এজন্য একটু সময় লেখেছে।
উত্তরটা শুনে আমি বেশ হতবাক হয়েছিলাম যে, কি কৌশলী উত্তর না দেওয়া হলো! কিন্তু ম্যাম হয়তো ভূলে গিয়েছিলেন যে, তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, আমিও যে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এরপর আমি মুচকি হাসি দিয়ে ম্যামকে বলেছিলাম, ও আচ্ছা!!
তদন্ত কমিটি একমাত্র অভিযোগকারীর অভিযোগ নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিশ্লেষণ করছে। একজন অভিযোগকারীর অভিযোগ নিয়ে যদি এক মাসের বেশি সময় লাগে, তবে ১২ জন অভিযোগকারী হলে নিশ্চয় ১২মাস সময় লাগতো। আর এভাবে করতে করতে আবার পরবর্তী ডাকসু নির্বাচন চলে আসতো!
তদন্ত কমিটি আদৌও রিপোর্ট প্রকাশ করবে কি না এ বিষয়ে আমি সন্দিহান। আজ থেকে প্রায় ১০-১২ দিন আগে আমাকে বলা হয়েছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে, কিন্তু এক সপ্তাহ শেষ হলেও কোন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। কয়েকদিন আগে একজন সাংবাদিক কল করলে তদন্ত কমিটির একজন শিক্ষক বলেছিলেন, আগামী মঙ্গলবার বা বুধবার প্রকাশ করা হবে।কিন্তু, আজ কি বার?
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। একজন সাংবাদিক স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নাম ভাঙিয়ে এক দশক পূর্বের এক সাংবাদিক নেতা একজন প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছিলেন। সমিতির সাবেক কিছু ভাই এবং বর্তমান কমিটির হস্তক্ষেপে সেই নেতা গতকাল সকল অর্থ ফেরত দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার জন্য তিনি মুচলেকাও দিয়েছেন। সবাইকে এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হলো। ধন্যবাদ।’
কোন প্রার্থী এমন অবৈধ লেনদেন করেছে, কেন করেছে, তা অনেকেই ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছে। সাংবাদিক সমিতির এক দশক পূর্ব কে নেতা ছিলো, তাও কারও অজানা নয়। সাংবাদিক সমিতির নামে, এমন লেনদেন পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। আমার বিশ্লেষণে অনেক উত্তর এসেছে।
প্রথমত, পুরো সাংবাদিক সমিতিকে তার (প্রার্থীর) পক্ষে কাজে লাগানো। অথবা অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট নষ্ট করার ষড়যন্ত্র। আসল ঘটনা সাংবাদিক সমিতিই বলতে পারবে, যেহেতু তারা সকল তথ্য-প্রমাণ হাতে পেয়েছে।
সাংবাদিক সমিতির উপর সকলের বিশ্বাস ও আস্থা আছে। অন্তত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। কারণ বিভিন্ন সময়ে আমরা তাদের প্রতিবাদ করতে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম নিয়ে তারাই প্রথম কলম চালায়, সকল যৌক্তিক আন্দোলনেও তাদের অগ্রণী ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়েছে।
তাই সাংবাদিক সমিতির কাছে অনুরোধ থাকবে, বিষয়টি জাতির কাছে খোলাসা করার জন্য। আমরা এসব অসাধু লোকদের নাম আপনাদের মুখ থেকেই শুনতে চাই।